ট্রেনের যাত্রাকালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসে যাত্রীবাহী পদ্মা এক্সপ্রেস। ট্রেনটি বিমানবন্দরে আসার পরে আসনসংখ্যার চেয়ে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী বেশি ওঠে। কিছুদূর আসার পর টিটি সন্তোষ কুমার টিকিট চেক করেন যাত্রীদের। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা দেড় শতাধিক যাত্রী নিজেকে গার্ড, ক্লিনার, অ্যাটেনডেন্ট, পুলিশ বা ট্রেনচালকের লোক বলে পরিচয় দেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে আর ভাড়া আদায় করতে পারেননি টিটি সন্তোষ কুমার।
টিটি সন্তোষ কুমার চলে যাওয়ার পর টিকিটহীন এই যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে টিকিটের টাকা তুলতে থাকেন কয়েকজন রেলকর্মী। তাঁদের মধ্যে দুজন হচ্ছেন গার্ড মনির রাজ ও অ্যাটেনডেন্ট তরিকুল ইসলাম। কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই তাঁরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তোলেন।
প্রতিদিন ঢাকার কমলাপুর ষ্টেশন থেকে বিমানবন্দর যাওয়া যাত্রীরা অভিযোগ করেন এভাবে ঢাকা থেকে চলাচলকারী সব ট্রেনেই প্রতিদিন টাকা তুলে নিজেদের পকেটে রাখেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাতের ট্রেনে এই হার বেশি। প্রতি ট্রেনেই আসনসংখ্যার চেয়ে অন্তত ২০০-৩০০ যাত্রী যাতায়াত করেন এই রুটে। কিন্তু কাগজে-কলমে দেখানো হয় খুবই কম। এমনকি কখনো কখনো আসন ফাঁকাও দেখানো হয়।
সাধারণ যাত্রীদের আরো অভিযোগ, রাতে অতিরিক্ত যেসব যাত্রী ওঠানো হয়, তাঁদের মধ্যে থাকেন ছিনতাই বা চোরচক্রের সদস্যরাও। এসব সদস্যের কাজই হলো যাত্রীদের ব্যাগ, মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে ট্রেনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে মারধর বা লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় যাত্রীদের।
অতিরিক্ত যাত্রী উঠার কারনে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে পর পর তিনটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ট্রেনের এক যাত্রীর একটি ব্লেজার, আরেক যাত্রীর ৩০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইলসহ একটি ভ্যানিটি ব্যাগ এবং আরেক যাত্রীর একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এর মধ্যে ট্রেনের ‘ঘ’ বগিতেই ঘটে দুটি ঘটনা। এসবের প্রতিবাদ জানানোর কারণে শিমুল ইসলাম নামের এক যাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ওই ট্রেনের দায়িত্বরত গার্ড মনির রাজ ও কয়েকজন ক্লিনার। রাজশাহী স্টেশনে নামিয়ে কিল-ঘুষি মেরে তাঁর নাক ফাটিয়ে দেন গার্ড মনির রাজ।
এদিকে গার্ড মনির রাজ জরিমানা বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘যাত্রীরা ভুল বুঝে একজন ক্লিনারকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। পরে ওই ক্লিনাররা এক যাত্রীকে পিটিয়েছেন। তবে ছবিতে দেখা যায়, গার্ড মনির নিজেই যাত্রী শিমুলকে পেটাচ্ছেন।
এদিকে রেলওয়ে জিআরপি থানার এসআই সাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘মারধরের ঘটনার পরে একজন যাত্রী অভিযোগ করে গেছেন। এ ঘটনায় ওই ট্রেনের ক্লিনার লাল মিয়াও একটি অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“এছাড়া ঢাকা চট্টগ্রাম রুটেও এমন দুর্ণিতির অভিযোগ পাওয়া গেছে”।
সূত্র : কালের কন্ঠ