Thursday, May 9বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

এবার উড়াল-পাতালের সমন্বয়ে হবে রেলপথ ২ ফেব্রুয়ারী উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

সবে মাত্র ব্যায় বহুল মেট্টোরেল উদ্ভোদনের পর আবারো রাজধানীতে মেট্রো রেল চলাচলে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের কাজ উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশের রাজধানীর কাঞ্চন সেতু থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৩১.২৪ কিলোমিটার এ পথটি মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নামে পরিচিত হবে। পথটির দুটি অংশ থাকবে। এর মধ্যে ১৯.৮৭ কিলোমিটার পথ যাবে মাটির নিচ দিয়ে। বাকি ১১.৩৭ কিলোমিটার উড়ালপথ হবে। মেট্রো রেলের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

তবে সূত্র বলছে, বেশ কিছুদিন ধরে এই রেলপথ নির্মাণে ডিএমটিসিএলের প্রস্তুতি চলছে। এত দিন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়ার অপেক্ষা করা হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়া গেছে। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে পূর্বাচলে অবস্থিত জনতা উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন মাঠে সুধী ও জনসমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সমাবেশ থেকে তিনি এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন।

মেট্টোরেল নির্মানকরী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে এমআরটি লাইন-১-এর ডিপো নির্মাণ করা হবে। পরে মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া পথের কাজ শুরু করা হবে। এই কাজ কিছুটা এগিয়ে গেলে উড়াল অংশের কাজও শুরু করা হবে। এক পর্যায়ে উড়াল ও মাটির নিচ দুই অংশের কাজ একসঙ্গে চলবে।

মেট্টোরেল নির্মান প্রকল্পের নথি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিকল্পনামতো ২০২৬ সালে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রতিদিন আট লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এতে অল্প সময়ে বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার কম হবে। ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে।

এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে সরকার।
এবার উড়াল-পাতালের সমন্বয়ে হবে রেলপথ

এমআরটি লাইন-১ পথটি বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুট নামে দুটি রুটে বিভক্ত। বিমানবন্দর রুট হবে পাতাল এবং পূর্বাচল রুট উড়াল। এতে মাটির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য হবে ১৯.৮৭ কিলোমিটার ও উড়াল পথের দৈর্ঘ্য হবে ১১.৩৭ কিলোমিটার। একটি রুট বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩-খিলক্ষেত-নদ্দা-নতুনবাজার-উত্তর বাড্ডা-বাড্ডা-আফতাবনগর-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে। এটিই মূলত পাতালপথের রুট। উড়ালপথের রুট নতুনবাজার থেকে শুরু হয়ে নদ্দা-জোয়ার সাহারা-বোয়ালিয়া- মস্তুল-শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম-পূর্বাচল সেন্টার-পূর্বাচল পূর্ব-পূর্বাচল টার্মিনাল হয়ে পিতলগঞ্জ ডিপোতে গিয়ে শেষ হবে।

কোথায় কোথায় থাকবে উড়াল সেতুর ২১ স্টেশন
এমআরটি লাইন-১-এর পুরো পথে থাকবে ২১টি স্টেশন। বিমানবন্দর রুটের স্টেশনগুলো থাকবে বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর এলাকায়। পূর্বাচল রুটের স্টেশনগুলো হবে নতুনবাজার, নদ্দা, জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব ও পূর্বাচল টার্মিনাল এলাকায়।

কোথায় কোথায় থাকবে উড়াল পাতাল ১২ স্টেশন
পাতালে থাকছে ১২টি স্টেশন ও উড়ালপথে থাকবে ৯টি স্টেশন। এর মধ্যে নতুনবাজার ও নদ্দা স্টেশন দুটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে পাতালে নির্মিত হবে।

বাংলাদেশে কেন এই পাতালপথ করতে
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যেসব এলাকায় ট্রাফিক ঘনত্ব বেশি, সেসব এলাকায় উড়াল মেট্রো রেল সড়কের মাঝ বরাবর নির্মাণের সময় জনদুর্ভোগ বেশি হয়। পূর্বাচল এখনো পরিপূর্ণ নগরে পরিণত হয়নি। তাই পূর্বাচল রুট উড়াল হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। আর বিমানবন্দর রুট পাতালপথে হবে।

নতুন ২৫ ট্রেনে বাড়ছে যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা
বর্তমানে চালু মেট্রো রেলের প্রতিটি ট্রেন সেটে লোকোমোটিভসহ (ইঞ্জিন) ছয়টি কোচ থাকে। তবে এমআরটি লাইন-১-এ প্রথমে আট কোচ বিশিষ্ট ২৫ সেট মেট্রো ট্রেন দিয়ে পরিচালনা শুরু করা হবে। তবে ভবিষ্যতে ৩৬ সেট মেট্রো ট্রেনে উন্নীত করার সুযোগ থাকবে। ট্রেনে কোচের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মাঝের ছয়টি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন ও ট্রেইলার (ইঞ্জিন) কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে।

মাত্র ৪০ মিনিটে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল
ডিএমটিসিএল ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে । প্রতিষ্ঠানটির এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে বিমানবন্দর থেকে ১২টি স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কমলাপুরে যাবে ট্রেন। নতুনবাজার থেকে ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে ট্রেন যাবে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত। আর কমলাপুর থেকে ১৬টি স্টেশনে থেমে পূর্বাচল টার্মিনাল যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট।

মূলত এই প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে প্রস্তুতিমূলক শুরু হয়। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের বিস্তারিত স্টাডি, জরিপ, প্রাথমিক নকশা, বিস্তারিত নকশা ও নির্মাণকাজের সব প্যাকেজের প্রাক-যোগ্যতার যাচাই করে দেখা হয়েছে।

‍দ্বিতীয় দপা মেট্টো রেলের কাজের জন্য ডিপো ও ডিপো অ্যাকসেস করিডর নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী মৌজার প্রায় ৯৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ মোট ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় দপা মেট্টোরেল নির্মাণকালে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ
এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকালে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (টিএমপি) প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পূর্বাচল রুট ৩০০ ফুট সড়কের মাঝ দিয়ে উড়ালপথ নির্মিত হবে। এ সড়কের দুই পাশেই সার্ভিস রোড রয়েছে। এমআরটি লাইন-৬-এর মতো সড়কের মাঝ বরাবর শক্ত বাধা দেয়াল দিয়ে অভ্যন্তরে নির্মাণকাজ করা হবে। এতে এ সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন সার্ভিস রোড দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *