Tuesday, May 7বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

ডিসি সম্মেলন শুরু মঙ্গলবার ২০২৩ প্রধান্য পাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ৬৪ জেলা প্রশাসককে নিয়ে ডিসি সম্মেলন কাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। এতে নির্বাচন-সংশ্নিষ্ট লিখিত কোনো এজেন্ডা না থাকলেও ঘুরেফিরে আসছে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন ডিসিরা। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী থাকে তাই নিয়ে চিন্তায় আছেন ডিসিরা। সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

ডিসিদের এই সম্মেলন ব্যতিক্রম না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন। বর্তমানে মাঠে প্রশাসনের ২২ ব্যাচের ডিসি আছেন ২৬ জন, ২৪ ব্যাচের ডিসি ২৮ এবং ২৫ ব্যাচের আছেন ১০ জন। এর মধ্যে ২২ ব্যাচের ডিসিদের বেশিরভাগের দায়িত্ব পালনের সময়পূর্তিতে আগামী নির্বাচনের আগেই তুলে নেওয়ার সময় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সময়ে মাঠে থাকবেন ২৪ ও ২৫ ব্যাচের ডিসিরা। এর সঙ্গে উপসচিব হিসেবে থাকা ২৭ ব্যাচের একটি অংশও ডিসি হিসেবে পদায়ন হবে। প্রশাসন-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর ডিসি হিসেবে একটি করে ব্যাচের কর্মকর্তাদের ফিটলিস্ট তৈরি হয়। সে হিসেবে ২৫ ব্যাচের ডিসি নিয়োগ মাত্র শুরু হয়েছে। এ ব্যাচ থেকে অন্তত ৩০-৩৫ জন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। সূত্র জানায়, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এটাই হওয়ার কথা। এর বাইরে নির্বাচনের আগে যদি বিশেষ কারণে বেশি রদবদল হয় তাহলে অন্য কথা।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বশেষ ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে নির্বাচনকালীন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দেশের সব নির্বাচনেই প্রশাসনের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। আগামী নির্বাচনের বিষয়েও তাই হবে। নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা আছে। তা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে সহযোগিতা করবে প্রশাসন।

এদিকে ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন জেলার ডিসিরা গতকাল রোববার থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত আটটি জেলার ডিসির সঙ্গে কথা হয়েছে সমকালের। তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়া হলে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক দুশ্চিন্তার প্রসঙ্গ টেনেছেন একাধিক ডিসি। তবে তাঁদের কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ডিসি হওয়ার জন্য প্রার্থীদের মধ্যে যে ধরনের তদবির ছিল এখন সেটা অনেকটাই ভাটা পড়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে কিনা, সেই চিন্তা থেকেই এমন হচ্ছে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের একটি জেলার ডিসি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমাদের পদটি (ডিসি) অনেকটা রাজনৈতিক রং পেয়ে যাচ্ছে। কে কোন সরকারের আমলে ডিসি ছিলেন সেটা এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিশেষ করে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এসব দেখা হয়। তাই ডিসি হওয়ার অর্জনে যে আনন্দ তার বিপরীতে দুশ্চিন্তাও আছে। অপর এক ডিসি বলেন, সাধারণ সময়ে ডিসির দায়িত্ব পালন আর নির্বাচনের সময়ে দায়িত্ব পালন এক বিষয় নয়। নির্বাচনের সময় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এই সময়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে সরকার ভাবে বিপক্ষের শক্তি, আর সরকার দলের পক্ষে অবস্থান নিলেও বিবেকের কাছে দায়ী থাকতে হয়। এটা উভয় সংকট অবস্থা। তবে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন ২২ ব্যাচের ডিসিরা। কারণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই তাঁদের মাঠের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।

ডিসিদের এমন দুশ্চিন্তার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনসহ সব জায়গায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেন। তাই বিশেষ কোনো সময়ের জন্য তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তিনি বলেন, যখন যে দল সরকার গঠন করে তখন সেই দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তাঁরা কাজ করেন। এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো দলের হয়ে যান না।

ডিসি সম্মেলন সাধারণত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হতো। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সম্মেলন হয়নি। গত বছরের সম্মেলন হয়েছে জানুয়ারি মাসে। এবারও বছরের শুরুতে ডিসি সম্মেলন হচ্ছে। এখন থেকে শীতকালেই সম্মেলন অনুষ্ঠানের রীতি প্রচলন থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-সংশ্নিষ্টরা।

এদিকে ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। গতবার করোনার কারণে ভার্চুয়ালি সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন সরকারপ্রধান। সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কার্য অধিবেশনে অংশ নেবে। এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব (২৩টি) থাকছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

সূত্র-সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *