Sunday, May 19বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিনিধি: এবার সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট (এলডিডিপি) নামের ওই প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৪৩১ জন জনবল নিয়োগ দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু আউটসোর্সিংয়ের বিষয়ে সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে সেটিকে উপেক্ষা করে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তবে এ ছাড়াও এই প্রকল্পে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে লোক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নিয়মের বাইরে ৫ শতাংশের জায়গায় ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের গচ্চা যাবে অতিরিক্ত ২৩ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চার হাজার ২০০ কোটি টাকায় দুগ্ধখাতের উন্নয়নে দেশের ৪৬৫টি উপজেলায় সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিডিপি) গ্রহণ করে।

জানা যায় গত অর্থবছরে গ্রহণ করা এই প্রকল্পের জন্য ডিপিপি অনুযায়ী সরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (গ্রেড-২) একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রকল্প পরিচালক করার কথা বলা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে তাদের মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিনকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ করে। এরমধ্য দিয়ে প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক এই প্রকল্পের জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগের জন্য গত মে মাসে দরপত্রপত্র আহ্বান করেন। আহ্বানকৃত ওই দরপত্রে দেয়া নানা শর্তেও অসঙ্গতি ছিল। আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে তাতে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

তবে সেখানে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বেতনও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী যেসব ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করা যাবে তার মধ্যে রয়েছে সুপারভাইজার, গাড়ি চালক, কেয়ারটেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, লিফট মেকানিক, এসি মেকানিক, জেনারেটর মেকানিক, স্যানিটারি মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, পাম্প অপারেটর, সিকিউরিটি গার্ড, ক্লিনার। এর বাইরে অন্য কোনো পদে লোক নিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই।

আরেকটি সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক নিজেদের মতো একটি নীতিমালা তৈরি করে এলডিডিপির জন্য ফিল্ড অ্যাসিসটেন্ট নামে একটি পদে লোক নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করেন। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আউটসোসিংয়ে যেসব লোক নিয়োগ করা হবে তাদের সর্বোচ্চ বেতন হবে ক্যাটাগরি ভিত্তিক ১৯ হাজার ১১০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ১৩০ টাকা পর্যন্ত।

সবমিলে কিন্তু এই প্রকল্পে সরকারের নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ বেতন অর্থাৎ ৩৬ হাজার টাকার বেশি বেতনে সহকারী ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের পর জনবল সাপ্লাইকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে কৃষ্ণা সিকিউরিটিজ সার্ভিস লিমিটেড ও পাথমার্ক নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এই দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকল্পের দুটি লটে অংশ নেয়। শর্ত ছিল, যারা একটি লটে অংশ নেবে, তারা অন্য লটে অংশ নিতে পারবে না। তাছাড়া এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষ্ণা সিকিউরিটিজ সার্ভিস লিমেটেড দুটি লটে অংশ নিতে গিয়ে ভুয়া ব্যাংক সিকিউরিটিজ দেখিয়ে আবেদন করে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই অনিয়মের কারণেই ওই প্রতিষ্ঠানের দুটি দরপত্রই বাতিল হওয়ার কথা। সেটা না করে উল্টো তাদের কাজ পাইয়ে দেয়া হয়েছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ হিসেবে পাওয়ার কথা পাঁচ শতাংশ। সেখানে এলডিডিপির নীতিমালায় ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের সরকারের অতিরিক্ত খরচ প্রায় ২৩ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

তবে নিয়ম হলো, নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদানের পর ১৫ দিন সময় দিতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই সময়ের মধ্যে তারা সিকিউরিটি মানি জমাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেবে। কিন্তু সেটি না করে প্রকল্প পরিচালক তড়িঘড়ি করে ১৫ সেপ্টেম্বরেই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং কার্যাদেশ প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহিভূর্ত।

আর এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক কাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেন, আপনি অফিসে আসেন। কথা বলব। ডকুমেন্ট নিয়ে যান। যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো, দরপত্রে যেসব শর্ত দিয়েছেন সেগুলো কী ডকুমেন্ট নয়, তখন তিনি এর জবাব এড়িয়ে যান। সবশেষে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। তবে এসব নিয়ে সরকারের উচ্চ প্রর্যায়ে কোন তদন্ত হবে কিনা তা জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *