Friday, May 17বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

চীনে নতুন ভাইরাসের আতংক মৃতের সংখ্যা ১৮

বার্তা প্রতিনিধি: এবার চীনে নতুন ভাইরাসের আতংক। প্রতিদিনই নতুন কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা গত এক সপ্তাহেই তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

চীনের মধ্যাঞ্চলের হুবেইপ্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন এক ভাইরাস দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উহান শহরে এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে উহান কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া গত দুদিনে ১৩৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন তারা। শুধু উহানেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে গেছে রাজধানী বেইজিংয়েও।

চীনা নববর্ষের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের ঘরে ফেরার যজ্ঞের মধ্যে বেইজিংয়ে দুজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

ভাইরাসটি নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ভাইরাসটি আরও প্রায় সাত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে, সপ্তাহের শুরুতে করোনা ভাইরাসে থাইল্যান্ডে দুজন আর জাপানে একজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়াও একজনের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

এমন খবরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার তৈরি করেছে। যে কারণে নতুন এই মরণঘাতী ভাইরাস নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

হু জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৪৯ জন এবং এদের মধ্যে ৯ জন মৃত্যুবরণ করেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৪৮৩ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হন তারা।

প্রসঙ্গত মাসখানেক আগে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এটিকে করোনা ভাইরাস বলে শনাক্ত করেছিলেন।

তারা জানান, ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মহামারী ঘটাতে পারে। তবে ভাইরাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার এ শহরে আগেই ৬২ জনের আক্রান্তের খবর দেয়া হয়েছিল।

সোমবার পর্যন্ত ১৩৬টি ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ১৭০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা এক হাজার ৭০০-র কাছাকাছি হবে। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর, হংকং, সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কে চীন থেকে আগত ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছিল। এবার বাংলাদেশেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও স্ক্রিনিং শুরু করার কথা জানানো হল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর বলছে, তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। কারণ চীন থেকে আসা সব বিমান এই বিমানবন্দর দিয়েই ওঠানামা করে। এছাড়া অন্যান্য বন্দরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।

সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভাইরাসটি ২০০২ সালের দিকে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসের (সার্স এক ধরনের করোনাভাইরাস) কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

সেবার ওই ভাইরাসে ৮০৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল। আর মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। চীনের কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে সেটি আসলে এক ধরনের করোনা ভাইরাস। অনেক ধরনের করোনা ভাইরাস রয়েছে। কিন্তু শুধু ছয় ধরনের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। নতুন ভাইরাসটি করোনা বলে প্রমাণিত হলে এটি হবে সপ্তম। ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য (জেনেটিক কোড) বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মানুষকে আক্রান্ত করা অন্য করোনা ভাইরাসের তুলনায় সার্সের সঙ্গে এটির বেশি মিল রয়েছে।

ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।

কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ডা. সেবরিনা ফ্লোরা বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারেভ তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি এবং ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।

সেবরিনা বলছিলেন ‘যখন শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হয় তখন হাঁচি, কাশি থেকে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে, এটি ভেবে নিয়েই আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ যদি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় তা হলে অতি দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।’
সূত্র: যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *