Saturday, May 18বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার যাতে প্রস্টেট ক্যান্সার না হয় ?

বার্তা প্রতিনিধি: মূলত মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়া পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার হয় এবং সাধারণত ৪৫ বছরের নিচে যাঁদের বয়স তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম। প্রস্টেট ক্যান্সার কেন হয় তা আজও স্পষ্ট করে জানা যায় নি। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগটিকে বংশগত বলে চিহ্নিত করা গেছে। দেখা গেছে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই রোগের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। যাঁরা খাদ্যে উচ্চমাত্রার ফ্যাট গ্রহণ করেন এবং যাঁরা কালো চামড়ার মানুষ তাঁদের প্রস্টেট ক্যান্সার বেশি হয়। শরীরের কিছু উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যের অভাবেও এই ক্যান্সার হয়। এই ধরনের অসাম্য ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ নামে পরিচিত। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি ও কোষ বিভাজন বা সেল ডিভিশনে এই ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রস্টেট সেল-এর ডি এন এ ক্ষতির কারণেও এদের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হতে পারে। এবারে ঝুঁকিগুলি নিয়ে একটু বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করছি।

বয়স
প্রস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে বয়সের একটি গূঢ় যোগাযোগ আছে। আমেরিকায় করা একটি স্টাডি থেকে জানা যাচ্ছে যে, ৪০ বছরের কমবয়সী পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দশহাজারে মাত্র একজন। ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কিন্তু এক ধাক্কায় অনেকখানি বেড়ে যায়। সেটা একহাজার তিনজনের মধ্যে একজন।

তবে সেটাও বোধহয় আমাদের অতটা আশঙ্কিত করে না, যতটা ৬০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে করে। এই সময় সংখ্যাটা প্রায় আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। দেখা গেছে, এই পর্যায়ের আট জন মানুষদের মধ্যে এক জন প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। বুঝতেই পারছেন সংখ্যাটা কতটা ভয়ের।

জাতিগত ভিত্তি

শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে প্রস্টেট ক্যান্সার নামের রোগটির সঙ্গে মানুষের জাতিগত একটা সম্পর্ক আছে। পৃথিবীতে বেশ কিছু প্রজাতির মানুষ আছেন যাঁদের এই রোগ বেশি হয়। যেমন, আফ্রিকান-আমেরিকান কালো মানুষ, সাদা চামড়ার মানুষদের তুলনায় ৫০% বেশি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরকম ঘটনা ঠিক কেন ঘটে বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত তার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পারেননি। তবে একটা ব্যাখ্যা অনুসারে কালো চামড়ার মানুষদের হর্মোন রিসেপটার অন্য প্রজাতির মানুষদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল। এটা যে সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য একটি ব্যাখ্যা এমন নয়। এই নিয়ে তর্কবিতর্ক চালু আছে। গবেষণাও চলছে। তাই শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। অন্য একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

দেখা গেছে, জাপানিদের সাধারণভাবে এই রোগ হয় না, কিন্তু যে-সব জাপানি নিজের দেশ থেকে মাইগ্রেট করে আমেরিকায় বসবাস করছেন, তাঁদের প্রস্টেট ক্যান্সার হয়। একই রকম ভাবে যে সব ভারতীয় আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, অন্যান্য ভারতীয়দের তুলনায় তাঁদের এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

পারিবারিক ইতিহাস

যাঁদের পরিবারে প্রস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস আছে তাঁদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষের একটি সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে দেখা গেছে এদের ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে। ৩-৪ শতাংশের ক্ষেত্রে তো সরাসরি বংশগত প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। ১ ডিগ্রি বংশগত প্রভাব রয়েছে এমন পুরুষের প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্বিগুণ। অন্য দিকে যাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব ২-৩ ডিগ্রি, তাঁদের ঝুঁকি বেড়ে হয়ে যায় ৫-১০ গুণ। একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে বলা যায়, যদি কারও বাবা ও সহোদরের প্রস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে সেই ব্যক্তির প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অন্য পুরুষের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। আর যদি কারও পরিবারের তিনজনের, অর্থাত বাবা ও দু’জন সহোদরের, অথবা তিন প্রজন্ম ধরে, অর্থাত ঠাকুর্দা-বাবা-ছেলের, অথবা রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়দের মধ্যে তিনজনের ৫৫ বছরের কম বয়সে প্রস্টেট ক্যান্সার হয়, তবে সেই ব্যক্তির প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।

হরমোনাল ফ্যাক্টর

প্রস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যে একটা হর্মোন নির্ভরতা থাকতে পারে তা নিয়ে কিছু বিজ্ঞানীদের মনে প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ ছিল। পরবর্তীকালে এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা গেছে যে প্রস্টেট ক্যান্সার ও তার অগ্রগতির সঙ্গে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হর্মোনের সরাসরি সম্পর্ক আছে।

এই তথ্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ ইউনাক(Eunach), অর্থাৎ জন্মগত ভাবে যাঁদের টেস্টিস (যা কিনা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উত্স) থাকে না তাঁদের কোনওদিনই প্রস্টেট ক্যান্সার হয় না।

রাসায়নিক বা কেমিক্যাল ফ্যাক্টর

এই রোগের সঙ্গে কিছু কিছু রাসায়নিকের যোগসূত্র আবিষ্কার করা গেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সব পুরুষ ফার্টিলাইজার বা টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করেন তাঁদের এই রোগ বেশি হয়। আবার সেই সব পুরুষ যাঁরা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ক্যাডমিয়াম ধাতু বা মেটাল-এর সংস্পর্শে আসেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এ-রোগের ঝুঁকি থাকে।

সুতরাং এক কথায় বলা যায় প্রস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে রাসায়নিকের সম্পর্ক আছে। এই সূত্রে বলা যায়, আমাদের দেশে যাঁরা কৃষিকাজ করে থাকেন চাষ আবাদের সূত্রে তাঁদের নানারকম রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে হয়। আর সেই কারণে তাঁদের মধ্যেও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ডায়েট ফ্যাক্টর

কিছু কিছু খাদ্য আছে যাদের সঙ্গে প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক অনেকটা সাপে-নেউলে। এই সব খাদ্য গ্রহণ করলে শুধু যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে তাই নয়, প্রস্টেট ক্যান্সারের অগ্রগতির ক্ষেত্রেও এরা উদ্দীপকের কাজ করে। যেমন, হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটি শরীরের অন্য অনেক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। সুতরাং ঘি ও তেলযুক্ত ডায়েটে অভ্যস্ত পুরুষরা সাবধান। এই ধরনের হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি বেশি খেয়ে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াবেন না।

কিছু খাবার আছে যাদের মধ্যে থাকা আংশিক হাইড্রোজেন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন হয়ে পড়ে। এই সব খাবারের সঙ্গেও বিজ্ঞানীরা প্রস্টেট ক্যান্সারের অবাঞ্ছিত সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। আরও আছে। কেক, কুকিস ও প্যাকেটজাত খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের তেল ফ্রি রেডিক্যাল বাড়িয়ে দিয়ে ডি এন এ-র ক্ষতি করে। ডি এন এ-র এই ক্ষতি কালক্রমে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

রোগ ধরা পড়ার সময়কাল

রোগ কবে ধরা পড়ল তার সঙ্গে প্রস্টেট ক্যান্সার ঝুঁকির একটা সম্পর্ক আছে। এমন একটা ধারণা আছে যে বয়স বাড়লে বোধহয় প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক উল্টো। দেখা গেছে, যদি কারও ৭০ বছর বয়সে রোগ ধরা পড়ে তবে প্রস্টেট ক্নান্সার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪ গুণ, ৬০ বছরে ধরা পড়লে এই ঝুঁকি ৫ গুণ এবং ৫০ বছর বয়সে ধরা পড়লে ঝুঁকির পরিমাণ ৭ গুণ। অর্থাৎ এটা পরিস্কার যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির পরিমান কমতে থাকে।

সূর্যালোক

কয়েকটি এমন তথ্য পাওয়া গেছে যা থেকে মনে হচ্ছে যে নির্দিষ্ট কয়েকটি ভৌগোলিক অঞ্চলে সূর্যালোকবাহিত আলট্রাভায়োলট রশ্মি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তদের মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়।

তবে এটা কতটা ঠিক এ নিয়ে নিশ্চিত করে কোনও মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নানা জায়গায়, বিশেষ করে আমেরিকায়, গবেষণা চলছে।

ধূমপান

প্রস্টেট ক্যান্সার ও ধূমপানের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়েও নির্দিষ্ট করে কোনও কিছু বলার মতো সময় এখনও আসেনি। এদের মধ্যে কোনও যোগসূত্র মিলেছে এমন বললেও সেটা মিথ্যা কথা বলা হবে।

তবে যে সকল ধূমপায়ীদের প্রস্টেট ক্যান্সার হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে রোগের বিস্তার ও আগ্রাসন ক্ষমতা যে অনেকটা বেশি তা প্রমাণিত হযেছে।

সেক্সুয়ালি ট্র্যান্সমিটেড ডিজিজ

এটা সহজেই স্বীকার করে নেওয়া যায় যে, আধুনিক জীবনের পাল্টে যাওয়া লাইফস্টাইল ভারতকে কার্ডিয়াক রোগের রাজধানী করে তুলেছে। প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে যতটুকু যা গবেষণা হয়েছে তাতে এটা খুব নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এই ক্যান্সারের সঙ্গেও এই ধরনের বেঁচে থাকার খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

সাম্প্রতিক কিছু কিছু গবেষণা জানাচ্ছে, সেক্সুয়ালি ট্র্যান্সমিটেড ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদেরও এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশ বেশি। সুতরাং, এখনই সতর্ক না হলে এই দেশ যে অচিরেই প্রস্টেট ক্যান্সারেরও রাজধানী হয়ে উঠবে না, তার গ্যারান্টি দেওয়া মুশকিল।
সূত্র: quora.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *