Friday, April 19বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এবং বৈশম্মে ছেড়ে গেছে দেশ, ওসমান গনী শাকিল

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা মো: ওসমান গনী বলেছেন দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এবং বৈশম্মে ছেড়ে গেছে দেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন মূচক পর্যালোচনায় বর্তমান অর্থনীতিতে ‘অশনিসংকেত’ দেখছে এই নেতা।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বলছেন, ‘গণস্বার্থ বিরোধী আওয়ামী সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি।

বাংলাদেশের জন্য এই মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দেশকে বিদেশি ‘ঋণনির্ভর করে ফেলা হয়েছে’ বলেও দাবি করেছে সাবেক এই ছাত্র নেতা।

গতকাল বুধবার বিকালে এক সভায় বাংলাদেশের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সাবেক ছাত্র নেতা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জিনিসপত্রের দাম। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো বেসামাল হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে।’

জনাব ওসমান গনী শাকিল আরো বলেন, ‘রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে দাবি করেন এই নেতা।

জনাব গনী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উল্লেখ করে অর্থনীতির বিশ্লেষক ওসমান গনী বলেন, ‘আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের; যা অশনিসংকেত।’

বাংলাদেশ সরকার ২৫.৪৫ বিলিয়ন সরকারি ঋণের তথ্য মোট সরকারি ঋণের হিসাব থেকে আড়াল করেছে বলে বৈঠকে দাবি করেন মো: ওসমান গনী শাকিল।

মি: শাকিল আরো বলেন, ‘সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমান দেশটির ঋণ ১৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্ত পাবলিক প্রতিষ্ঠান, সরকার কন্টিনজেন্ট দায়, বাজেটবহির্ভূত অন্যান্য অর্থায়ন, সরকারের অভ্যন্তরীণ পারস্পরিক ঋণ এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম গ্যারান্টি যুক্ত বেসরকারি ঋণ হিসাব করলে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৬ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন। এবং জিডিপি ঋণের হার ৪৪ দশমিক ১ ভাগ, যা সরকার বলে থাকে ৩৪ দশমিক ৭ ভাগ। বেসরকারি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ জানা গেলে সরকারি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’

মি: শাকিল আরো বলেন, বর্তমানে ১ লাখ কোটি ডলারের ওপর বৈদেশিক ঋণ রয়েছে বাংলাদেশের যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৪৯১০ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধের মাথাপিছু যে বোঝা, ২০২৫ সাল থেকে রূপপূর পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হলেই তা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। ২০ বছর ধরে এ প্রকল্পের জন্য প্রতিবছর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার।

দেশে ঘোষিত মূল্যস্ম্ফীতি অসঙ্গতিপূর্ণ দাবি করে ওসমান গনী শাকিল বলেন, ‘ডলারের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি গ্রামে বেশি। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। মূলত বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপদজনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে।’

তিনি বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা মেগা প্রকল্পকে জনগণের ঋণের বোঝা ভারী করার শ্বেতহস্তী প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য রুপপুর প্রকল্পটি কার স্বার্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে জনমনে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশকে সুদাসলে কত অর্থ পরিশোধ করতে হবে তা জনগণকে জানানো হোক।

মি: ওসমান গনী শাকিল আরো বলেন, ঢাকা-যশোর-পায়রা পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারি-কক্সবাজার, ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্প দুটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যত খুব লাভজনক নয় বলেও অভিমত এসেছে বিশ্লেষকদের মতে।

পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাটুয়ারি-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন প্রকল্প এবং ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর এই ৮টি সরকারের সম্ভাব্য প্রকল্পকে ‘গ্ল্যামারাস’ প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে সাবেক এই নেতা।

ওসমান গনী শাকিল বলেন, ‘স্যাটেলাইট-১ তৈরি ও উতক্ষেপনে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিলো। গত ৪ বছরেও কোনো অর্থ আয় করতে পারেনি। কেবলমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও গ্ল্যামারস উন্নয়নের ডামাডোল বাজাতেই এই ধরনের অপরিনামদর্শী প্রকল্প গ্রহন করে দেশকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট -১ থেকে অর্থ উপার্জনের প্রধানমন্ত্রী ও তার পুত্র তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার স্বপ্ন এখন দেশবাসীর জন্য এক আর্থিক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বর্তমান স্যাটেলাইটের যখন এই হতাশ চিত্র তখন আরেকটি স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণের পায়তারা চলছে।

তিনি আরো বলেন দেশে ‘বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য’ বিরাজ করছে, ‘দেশে অস্থিতিশীলতার জন্য জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী। দেশকে রক্ষার জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই মুহুর্তে সার্বজনীন ঐক্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *