Friday, April 26বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

শেষ ১৫ দিনে করোনায় মৃত্যু ১ লাখেরও বেশী মানুষ সবছেয়ে বেশী যুক্তরাষ্টে

বার্তা প্রতিনিধি: চীনের ওবেই প্রদেশ থেকে চড়ানো বৈশ্বিক মরনঘাতী করোনায় এক লাখ মানুষ মারা যেতে সময় লেগেছিল ৯০ দিন। তারপরেই নিমেষে লম্বা হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। গত ১৫ দিনে বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন আরও এক লাখ মানুষ। সব মিলে করোনা কেড়ে নিয়েছে দুই লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ।

করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর পর ৫০ হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৮২ দিন। গত ১১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা দেয় চীন। ২ এপ্রিল ৫০ হাজার ছাড়ায় করোনায় মৃত্যু। ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ১৯ মার্চ প্রথম দিনে এক হাজার ছাড়ায় মৃত্যু। ওই দিন মারা যায় ১ হাজার ৭৯ জন। অথচ এপ্রিল মাসে গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৬ হাজারের বেশি মানুষ।
ইউরোপের দেশ ইতালি এবং স্পেনে মৃত্যুর মিছিল কিছুটা কমলেও সারাবিশ্বে সেই মিছিল থেমে নেই।
চীনের উহানে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এরপর গত চার মাসে করোনা ছড়িয়েছে পৃথিবীর ২১০টি দেশ এবং অঞ্চলে।

করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ইউরোপ ও আমেরিকার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আছে আক্রান্তের ৩২ শতাংশ মানুষ। মৃত্যুর দিকে থেকেও প্রথমে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ৭টি ইউরোপের। আর বাকি দুটি দেশ এশিয়ার।

করোনাভাইরাস বিশেষ করে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মৃত্যুর হার তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় শেষ দুই সপ্তাহেই মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ মানুষ। আর হিসাবটা আরেকটা বাড়ালে, শেষ তিন সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে দেড় লাখ মানুষের। অর্থ্যাৎ প্রতি সপ্তাহেই এখন কম করে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অন্তত গত তিন সপ্তাহে এই ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ লাখ ২১ হাজার ২০১ জনে দাঁড়িয়েছে। ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস রোববার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২ লাখ ৩ হাজার ২৮৯ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারে এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৩ জন। এদের মধ্যে ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৮০ জনের জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৭ হাজার ৮৬৩ জনের অবস্থা গুরুতর।

ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে গত একদিনে আরো দুই হাজার ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ২৬৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ জন।

মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরে অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫১ জন।

ইতালির পরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৯০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য ২য় অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। এখানে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

মৃত্যুর তালিকার চার নম্বরে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৮৮ জন।

ফ্রান্সের পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৩১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭৭ জন।

এদিকে জার্মানিতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫১৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৭ জনের।

ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে। সেখানে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৮২৭ জন এবং মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩২ জন।

এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। এখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৩২৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ জনের।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ জনের শরীরে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪০ জন এবং সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১১২ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ হাজার ৭৪৬ জন।

ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেলেও বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওইদিন তিন জন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই সমান্তরাল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে হুট করেই বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা।

তবে ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য মার্চেই ব্যবস্থা নেয় সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। পঞ্চম দফায় বাড়িয়ে সেই ছুটি করা হয়েছে আগামী ৫ মে পর্যন্ত।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পদক্ষেপ অনেকটা এ রকমই। তবে এর মাঝেও কিছু কিছু দেশ তাদের দেয়া লকডাউন কিছুটা শিথিল করছে। স্পেন, জার্মানি ও ভারত সেই পথে হেঁটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিও তেমনটাই ভাবছে।
সূত্র: সময়নিউজটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *