Friday, March 29বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

ধর্মীয় অনুশাসনের পরিবর্তন আসছে সৌদী আরবের, থাকছেনা ছেলেমেয়েদের মেলামেশায় বাধা

বার্তা প্রতিনিধি: সম্প্রতি সৌদি আরবে অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নানা ধরণের পরিবর্তনে আসছে। কিন্তু রক্ষণশীলতার আগল ভেঙ্গে কতদূর যেতে পারবে সৌদি আরব?
সৌদি আরবে কি কি পরিবর্তন ঘটবে?

পরিবর্তন হবে, নিজের মতো করেই হবে এবং তাদের সময় অনুযায়ী হবে।

এর মানেটা পরিস্কার, পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লাগবে। হয়তো কোনদিনই আসবে না।
সৌদি আরবে তেল বিক্রি থেকে আসে সরকারের ৯০ শতাংশ আয়

কিন্তু আজকের সৌদি আরবে একটু ভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে। সৌদিরা এখন পরিবর্তনের কথা বলছে বছরের হিসেবে নয়, মাসে।
সফল এক সৌদি নারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে।

“আমি আমার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে এ বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। কিন্তু আমার পুরুষ সহকর্মীর ধারণা এটা আসলে ঘটবে এ বছরের শেষ ছয় মাসে।”

“কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে এটা আসলে ঘটবে সামনের বছর। আর হয়তো শুধু চল্লিশের বেশি বয়সী নারীদেরই গাড়ি চালানোার অনুমতি দেয়া হবে”, বললেন এই নারী ব্যবসায়ী।

রিয়াদের রাজকীয় পরিমন্ডলেও অবশ্য এখন এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। অনেকে বলাবলি করছে, তরুণীদেরও হয়তো গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হবে।

সৌদি আরবে রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ এতটাই কঠোর যে সেখান পরিবর্তনের গতি খুবই ধীর।

অনেকে সৌদি তরুণ-তরুণী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে

কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে তেলের দাম পড়ে গেছে, তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী এই দেশটির শাসকদের বাধ্য করছে পরিবর্তনের গতি বাড়াতে।

তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবের আয় কমে গেছে অর্ধেক। ফলে তাদের এখন অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।

সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল বিক্রি থেকে।

সৌদি সরকার ‘ভিশন ২০৩০’ নামে এক মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে গত বছর। এর পেছনে আছেন ৩১ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মোটা বেতনে গাদা গাদা বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে এই মহাপরিকল্পনা।

সৌদি যুবরাজ এবং তাঁকে ঘিরে থাকা লোকজন ভালো করেই জানেন যে একদিন তাদের তেলের কূপগুলো শুকিয়ে যাবে। আর হয়তো তারও অনেক আগে ইলেকট্রিক কারের ব্যাপক প্রচলন ঘটবে। ফলে তেলের চাহিদা কমবে।

“ভিশন ২০৩০ এবং এর লক্ষ্য অর্জন করা এজন্যেই এতটা গুরুত্বপূণ”, বলছিলেন সৌদি তেলমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ।

“এই মহাপরিকল্পনার কতটা আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ অর্জন করতে পারি, সেটা আমরা দেখতে চাই।”

অর্থনৈতিক চাপের মুখে সৌদি আরবে সরকারী কাজে মোটা অংকের বেতন এবং দরাজ হাতে দেয়া সুযোগ সুবিধা সংকুচিত করে আনা হচ্ছে। অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের গুরুত্ব বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে সেখান থেকেই বেশিরভাগ প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সেখানে কোন গতি দেখা যাচ্ছে না।

রেস্টুরেন্টে নারী-পুরুষের এক সঙ্গে বসার ওপর আছে অনেক বিধিনিষেধ

একজন সৌদি পরিসংখ্যানবিদ বললেন, তার সংশয় আছে ‘ভিশন ২০৩০’ আসলে কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে।

সৌদি আরবের ৩১ বছরের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমান বাদশাহ সালমানের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান বলে পরিচিত। যুবরাজ জানেন, পরিবর্তনের জন্য সময় ঘনিয়ে আসছে দ্রুত।

সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স তাঁর সমান বা তার চেয়ে কম। সরকারী বৃত্তির আওতায় হাজার হাজার সৌদি ছেলে-মেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এসেছে।

এরা এখন কাজ খুঁজছে। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের নিগড়ে বাঁধা স্বদেশে বিনোদনের জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ সেখানে সিনেমা পর্যন্ত নিষিদ্ধ।

কয়েকটি কঠিন নিয়মের কথা ধরা যাক।

সৌদি আরবে কোন খাবার দোকানে একজন পুরুষ কেবল তার আত্মীয় নারীর সঙ্গে এক টেবিলে বসতে পারবেন। কিন্তু এক বছর আগের সফরের তুলনায় এবার যেন কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলাম।

সৌদি আরবের রাস্তায় দেখা যেত যে কুখ্যাত ধর্মীয় পুলিশ, বা মুতাওয়া, যাদের কাজ ছিল পাপাচার বন্ধ করা আর পূণ্য ফেরি করে বেড়ানো, তাদের এবার চোখে পড়লো না।
নতুন বিনোদনের সুযোগ পেয়ে খুশি অনেক সৌদি নাগরিক

রিয়াদের ধনী লোকদের অনেকে বেশ উৎসাহের সঙ্গে জানাচ্ছিলেন সেখানে নতুন খোলা রেস্টুরেন্টগুলোর কথা, যেখানে নারী-পুরুষের একসাথে বসা নিয়ে আগের মতো কড়াকড়ি নেই। যেখানে উচ্চ শব্দে বাজানো হয় গান।

“আমাদের এখানে সিনেমা খোলা দরকার। আর দরকার মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া”, বলছিলেন ওয়ালিদ আল সায়েদান।

সৌদি সরকার এখন গঠন করেছে ‘জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি’ বলে একটি সংস্থা। এর কাজ যদিও সাংস্কৃতিক কাজ-কর্মের ওপর খবরদারি করা, কিছু কিছু বিনোদনের অনুমতি তারা দিচ্ছে।

এর প্রধান আহমেদ আল খতিব বললেন, “আমার কাজ মানুষকে খুশি করা।

আর্ট ফেস্টিভাল থেকে লাইট শো এমনকি মিউজিক কনসার্টেরও অনুমতি দিচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত এরকম ৮০টি ইভেন্ট তাদের ক্যালেন্ডারে রয়েছে।

জানুয়ারিতে এক মিউজিক কনসার্টে ভিড় করে শত শত মানুষ

আমরা উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল, সব ধরণের মানুষের জন্যই বিনোদনের সুযোগ করে দেব, বললেন তিনি।

কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়: সেই রাজনৈতিক সংস্কার, মানবাধিকার, কিংবা মহিলাদের স্বাধীনতা– সেসব নিয়ে কিন্তু একেবারেই কোন কথা শোনা যাচ্ছে না।

সৌদি আরবের মানুষ সবসময় সস্তায় পেট্রোল কিনেছে। কোনদিন ট্যাক্স দেয়নি। বিনামূলে পানি আর বিদ্যুৎ পেয়েছে।

মেয়েদের উৎসাহিত করা হচ্ছে সরকারের নতুন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে

কিন্তু সরকার এখন এসব ভর্তুকি তুলে নিচ্ছে। ট্যাক্স বসাচ্ছে।

এসবই সৌদি অর্থনীতি আর সমাজকে বদলে দেয়ার নানা চেষ্টা। কিন্তু যে গতিতে তারা আগাচ্ছে, কতদূর যেতে পারবে?

আমাদের অবস্থা আসলে চাকা লাগানো কচ্ছপের মতো”, বললেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হাসান ইয়াসিন। ” আমাদেরকে দ্রুত আগাতে হচ্ছে একই সঙ্গে স্থানীয় চাহিদা মেটানো এবং ২১ শতকের লক্ষ্য অর্জনের কথা মাথায় রেখে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *