Sunday, May 19বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

বিদেশে অর্থ পাচারের মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিক গ্রেপতার

বার্তা প্রতিনিধি: বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে সরকারী নজরদারীতে বিদেশে ৯১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বহুল আলোচিত ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিক এমএ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের অর্থপাচারের ঘটনা তদন্তে গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে ডাকা হয় তাকে।

সে অনুযায়ী সংস্থাটির সদর দপ্তরে হাজির হন এমএ কাদের। এর পরই জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। পরে সন্ধ্যায় এমএ কাদেরসহ ১৭ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক ৩টি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

মামলার এজাহারে, ক্রিসেন্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নামে ৯১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এমএ কাদের ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান। মামলায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আব্দুল আজিজ সম্পর্কে এমএ কাদেরের ভাই। তিনি রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান। আব্দুল আজিজসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।

এদিকে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চকবাজার মডেল থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা এবং এমএ কাদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল বিকালে এনবিআরে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি জানান, ক্রিসেন্ট লেদার ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। এ ঘটনায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের চার পরিচালকসহ ১৩ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় পৃথক ৩টি মামলা হয়েছে।

ক্রিসেন্ট গ্রুপের চার পরিচালক হলেন, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান মিরা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি। এ ছাড়া মামলার আসামি জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা হলেন, সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মনিরুজ্জামান, মো. সাইদুজ্জাহান, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, মগরেব আলী, খায়রুল আমিন, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) আতাউর রহমান সরকার, ডিজিএম মো. ইকবাল, একেএম আসাদুজ্জামান, কাজী রইসউদ্দিন আহমেদ, জিএম রেজাউল করিম, ডিএমডি ফখরুল আলম এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমান ডিএমডি জাকির হোসেন (তৎকালীন জনতা ব্যাংকের জিএম)।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় রপ্তানি বিল ক্রয় করে। কিন্তু চার মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসিত হয়নি এরূপ বিলের সংখ্যা ২১৫টি; এবং টাকার পরিমাণ ৪২৮.৫৩ কোটি। অন্যদিকে পরবর্তী সাত মাসে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৫টি বিলের মধ্যে মাত্র ৩টি বিলের বিপরীতে ৫.৯৭ কোটি টাকা প্রত্যাবাসিত হয়েছে। ফলে ২১২টি বিলের বিপরীতে ৪২২.৪৬ কোটি টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। এনবিআরের তদন্তে উঠে এসেছে, কোম্পানি এবং ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৪২২.৪৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

এ ছাড়া রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডও জনতা ব্য্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ২৪০টি রপ্তানি বিলের বিপরীতে ৪৮১.২৬ কোটি টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। এনবিআরের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, একই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এফটিডির (এক্সপোর্ট) তৎকালীন ডিজিএম এবং জিএম এবং বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা-দক্ষিণের তৎকালীন জিএম এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মালিকেরা পারস্পরিক যোগসাজশে ৪৮১.২৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়া ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড একই ব্যাংকের একই শাখার মাধ্যমে ১৫.৮৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ১০-১২টি কোম্পানির অর্থপাচারের তথ্য এনবিআরের কাছে আছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বিদেশি কয়েকটি ফার্মের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মাদক কারবারে জড়িত ব্যক্তিদেরও সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে।বাহিনী। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *