Monday, May 6বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

বাংলাদেশ খাগড়াছড়ীতে বা হিমছড়ীতে ঘুরতে যাবেন জেনে নিন

খাগড়াছড়ি,বান্দরবানকে অনেকেই তাই রূপের রাণী বলে থাকেন, নাফাখুম ,তিন্দু ,রেমাক্রী জলপ্রপাত, জাদিপাই ঝর্না, হোটেলের ভাড়া ও যোগাযোগের নম্বর

সাজেক ভ্যালী

অপার সৌন্দর্যের আঁধার আমাদের মাতৃভূমি রূপসী বাংলা । রূপের অপার সৌন্দর্য্যের সাঁজে সেঁজে আছে বাংলা মা। আমরা সৌন্দর্য্যের খোঁজে ছুটে বেড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । কিন্তু একবারও কিভেবে দেখেছি আমাদের দেশের সৌন্দর্য্য তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালী দেখতে যাই কিন্তু ঢাকা থেকে মাত্র ৭/৮ ঘণ্টা গাড়ি পথে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালী টা আমরা কজনই বা দেখেছি । হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য্য অবলোকন করার জন্য, যা আপনার সুন্দর একটি স্মৃতি হয়ে কল্পনায় গেঁথে থাকবে ।

সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । এটিকে রাঙ্গামাটির ছাঁদ বলা হয়। এখান থেকে পুরো রাঙ্গামাটি দৃষ্টিগোচর হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এটি। এখানকার বিজিবি’র ক্যাম্প ও এর আশেপাশের এলাকা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এখান থেকে ভারত দৃষ্টিগোচর হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৬০ কি.মি. দুরে এর অবস্থান। সড়কপথে বাঘাইছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে বিশাল সব পাহাড়ের উপর দিয়ে ছুটে চলা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম অপার সৌন্দর্য।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক আয়তনে বিশাল, বাংলাদেশের অনেক উপজেলার চেয়েও আয়তনে বড়। এটির অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলা থেকে উত্তর-পুর্ব দিকে। মুল সাজেক বলতে যে স্থানকে বুঝায় সেটি হলো ‘রুইলুই’ এবং ‘কংলাক’ নামের দুটি বসতি, স্থানীয় ভাষায় ’পাড়া’। যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু ,পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ।

রাঙামাটি থেকে নৌ পথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায় । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয় । পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতেহবে । তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে । পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যারউচ্চতা ১৮০০ ফুট ।

এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাসকরে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । রুইলুইপাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া ।এটি লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়াথেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প নাথাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না ।

ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা , দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ওদীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তারাতারি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেননা ।খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে ।

অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন । ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন ।

রুইলুই পাড়াঃ

এটি দীঘিনালা সাজেক রোডেই পরবে ।রাস্তার দুই পাশেই পাড়াটি বিস্তৃত । যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণজনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়াপ্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । একটু সময় নেমে পাড়াটি দেখে যেতেপারেন ।

কংলক পাড়াঃ
সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । সাজেকবিজিবি ক্যাম্প পার হয়ে কংলক পাড়ায় যেতে হয় । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া ।এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে মাঝেমাঝে কংলক পাড়ায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না।

কমলক ঝর্নাঃ

সাজেকে এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর এই ঝর্নাটি, বুনো রাস্তা আর ৮০-৮৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হবে অনেক খানি তারপর ঝিরিপথ পাবেন, ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে আবার উঠতে হবে কিছুটা, এইভাবে আরো কিছুক্ষন ট্রেক করার পর পৌছে যাবেন ঝর্নার কাছে। ঝিরিপথ টিও অসম্ভব সুন্দর, এডভেঞ্চারটি ভালো লাগবে আশা করি। রাস্তাটি বর্ষার সময় খুব পিচ্ছিল থাকে তাই খেয়াল রাখবেন চলার সময়। গাইড রুইলুই পাড়া থেকে ঠিক করে নিবেন, ঝর্নার কথা বললেই হবে, ৩০০-৩৫০ টাকা নিবে।

আমরা সাধারণত ২/৩ দিন সময় নিয়ে বের হই । তখন মূল স্থান গুলোই বেশী প্রাধান্য পায় । ঝর্ণার মূল সৌন্দর্য্য দেখতে হলে বর্ষা মৌসুমে যাওয়াই ভাল । এই এলাকা গুলো যেহেতু সংঘাত পূর্ণ তাই যাবার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে যাবেন । কোন সমস্যা হলে সাজেক যাবার অনুমতি দেয় না । এছাড়া শহর ও এর আশে পাশের সব জায়গায় যেতে পারবেন । কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেক।

সাজেক এমন একটি জায়গা যেখানে ভাগ্য ভাল হলে ২৪ ঘণ্টায় আপনি প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখতে পারবেন । কখনো খুবই গরম একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিকে ঢেকে যাবে কুয়াশার চাদরে । রাতে এই দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় যখন সোলারের কল্যাণে বাতি জ্বলে উঠে তখন সৃষ্টি হয় অসাধারণ এক পরিস্থিতি । অনেক বাচ্চারা রোড লাইটের নিচে বই নিয়ে বসে পড়ে অথবা ঐ টুকু আলোর ভিতরেই খেলায় মেতে উঠে । সাজেকে ৩টা হ্যালি প্যাড আছে ৩টার সৌন্দর্য তিন রকম । এছাড়া রুইলুই পারা হতে হেটে আপনি কমলং পারা পর্যন্ত যেতে পারেন এই পারাটিও অনেক সুন্দর এবং অনেক উচুতে অবস্থিত । কমলার সিজনে কমলা খেতে ভুলবেন না । সাজেকের কমলা বাংলাদেশের সেরা কমলা । বাংলাদেশ আর্মিদের দারা রুইলুই পারার অধিবাসীদের জন্য একটা ছোট তাত শিল্প গরে তোলা হয়েছে । সুন্দর সুন্দর গামছা ,লুঙ্গী পাওয়া এখানে ।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে এস.আলম,ইকোনো,শান্তি, সৌদিয়া, ঈগল আর শ্যামলীর নন এসি আর সেন্টমার্টিন এর এসি বাস খাগড়াছড়ি যায়। ছাড়ে গাবতলী থেকে রাত ৯ টা আর সায়েদাবাদ থেকে ১১টার দিকে। খাগড়াছড়ি পৌছায় ৭টা-৮টার দিকে। ভাড়া নন এসি৫২০ ও এসি ৭০০ টাকা।খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকার ফিরতি বাস ছাড়ে সকাল ১১টা, বিকাল ৩ টা ও রাত ৯ টায়। শান্তি খাগড়াছড়ি হয়ে দীঘিনালা পৌছায় সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে। শান্তির দিনে ও রাতে একাধিক বাস আছে।ভাড়া নন এসি৫৮০ ও এসি ৬৫০ টাকা।ফিরতি গাড়ী সন্ধ্যা ৭ টা ১০ এ। শ্যামলীর রংপুর থেকে, শান্তি নন এসি আর বিআরটিসি এসি চট্টগ্রাম থেকেও ছাড়ে।চট্টগ্রামের ফিরতি গাড়ী আছে সকাল পৌনে ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সাজেক রাঙ্গামাটিতে পরলেও খাগড়াছড়ি হয়ে যাতায়াত সুবিধা । শুধু সাজেকের জন্য (যারা আলুটিলা অথবা রিসাং যাবেন না) অবশ্য দীঘিনালা হয়ে যাতায়াত ভালো।

যারা খাগড়াছড়ি হয়ে আসবেনঃ
ঢাকা-টু খাগড়াছড়ি আসবার জন্য এস.আলম, সৌদিয়া, ঈগল, শান্তি আর শ্যামলীর নন এসি আর সেন্টমার্টিন, বিআরটিসি এর এসি পরিবহনের বাস রয়েছে ।আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হবে খোলা জীপে করে। যা চান্দের গাড়ি নামেই পরিচিত।খাগড়াছড়ি থেকে দিঘিনালা পর্যন্ত বাস/চান্দের গারি/ সিএনজি রয়েছে । সাজেক থেকে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে দীঘিনালায়। দীঘিনালা নেমে আধা ঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সাথে সেরে নিতে পারেন গোসলটাও। কারণ সাজেকে পানির বড্ড অভাব। তবে চিন্তার কিছু নেই গোসল ও অন্যান্য কাজের জন্য দরকারি পানি প্রতিদিন ট্রাকে করে পৌঁছে যায় সাজেকে।বাসে অ চান্দের গারিতে ভারা ৪৫/- জনপ্রতি । দিঘিনালা থেকে জন ভেদে চান্দের গাড়ি অথবা মটর বাইক নিতে পারেন । একদিনের জন্য চান্দের গাড়ি ভাড়া পরবে ৩০০০/- টাকা ২দিনের জন্য ৫০০০/- ( কথা বলে নিতে হবে ) ১২/১৩ জন যেতে পারবেন । এছারা মটর বাইক রয়েছে আপডাউন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

তবে পানি ব্যবহারে সাজেকে আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস রয়েছে। এরপর বাকি রাস্তাটুকু আপনাকে যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। নইলে একবার সকালের এসকোর্ট মিস করলে আবার এসকোর্টে পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল অবধি।

দীঘিনালা থেকে প্রথমে যেতে বাগাইহাট, তারপর মাচালং হাট হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে মোট সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টার মত। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাধরে চলা এই ছোট জার্নিটি সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ। চারদিকে শুধু পাহাড় আর হরিতের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।
সাজেকে থাকা খাওয়া

সাজকে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর একটার মত বেজে যায় তাই পৌঁছানোর সাথে সাথে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে রাতে থাকার কটেজ। বিভিন্ন দামের ও মানের কটেজের অভাব নেই সাজেকে। হানিমুনে গেলে যেমন আলিসান কটেজে থাকতে পারবেন আবার খরচ কমাতে চাইলে ভাল মানের সাশ্রয়ী কটেজেরও অভাব নেই। জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০০হাজার টাকা অবধি কটেজগুলোর এক রাতের খরচ।

সাদা মেঘের দেশ

যারা রাঙ্গামাটি হয়ে আসবেনঃ
রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথে লঞ্চযোগে অথবা সড়কপথে বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ থেকে ১০.৩০ ঘটিকার মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা। সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা। বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭.৩০ থেকে ৮.৩০ ঘটিকার মধ্যে বাস ছাড়ে, ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। ঢাকা থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। বাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালীতে পৌঁছানো যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৩০০/-টাকা।

কখন যাবেন:
কখন যাবেন: শুধুই ঘুরাঘুরির জন্য হলে শীতকাল যাওয়া সবচেয়ে ভালো। আর আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রিয় হন আর পাহাড়ের সত্যিকারের সৌন্দর্য দেখতে চান তবে বর্ষাকালে আসুন।

কোথায় থাকবেনঃ
রিসোর্ট রূনময়:
এটি রুইলুই পাড়ার শেষ প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ আর্মি পরিচালিত একটি রিসোর্ট। রুম আছে পাঁচটি।ভাড়া ৪৪৫০-৪৯৫০ টাকা।টেন্ট:রিসোর্ট রুনময়ের সামনেই আছে চারটি টেন্ট,প্রতিটিতে থাকা যায় চারজন করে।খাবার সরবরাহ করা রুনময় থেকে।ভাড়া প্রতি টেন্ট ২৮৫০ টাকা। (কিছুদিন আগে কালবৈশখীতে একদম ভেঙ্গেচুরে গিয়েছিল। ঝড়ের মৌসুমে না থাকাই ভালো)

সাজেক রিসোর্ট/বনলতা কটেজ :
রুইলুই পাড়ার একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত আর্মি পরিচালিত এই রিসোর্ট। রুম আছে চারটি।ভাড়া ১০০০০,১২০০০ এবং ১৫০০০হাজার টাকা।

সাজেক রিসোর্ট

রিসোর্ট রুনময়,সাজেক রিসোর্ট এবং টেন্ট বুকিং-এর সব তথ্য তাদের(rock-sajek) ওয়েবসাইটে পাবেন। আলো রিসোর্ট :এটি এনজিও সংস্থা আলো কতৃক পরিচালিত একটি রিসোর্ট।ছিমছাম এবং গোছানো একটি রিসোর্ট। অবস্থান রুইলুই পাড়ায় সাজেক রিসোর্টের সামনেই।ভাড়া ডাবল রুম ১০০০,সিঙ্গেল রুম ৭০০ টাকা।

বনলতা কটেজ, সাজেক ভেলী।যারা একটু নিরিবিলি ফ্যামিলি নিয়ে মানসম্মত ভাবে থাকতে চান চলে আসুন আমাদের কটেজে।
বুকিং জন্য যোগাযোগ করুন :
Saddam Hossain Lipu
assistant maneger (sales)
01962012348
01516145673

ক্লাব হাউজ:
সেমি পাকা ঘরটি মূলত ওখানকার মানুষদের জন্য ক্লাব হিসেবে করে দিয়েছিলো আর্মি,তবে পর্যটক বেশি হলে অথবা এমনিতেই কেউ থাকতে চাইলে এখানে থাকা যায়।বিছানাপত্র কেয়ারটেকারই দিবে,ভাড়া ১৫০-২০০টাকা।খাবারের ব্যাবস্থা বললে কেয়ারটেকার করে দিবে,খরচ হবে প্রতিবেলা ১৫০-২০০টাকা। স্টুডেন্ট/যাদের থাকবার জন্য মোটামুটি একটা ব্যাবস্থা হলেই হয় তারা রুইলুই-ক্লাব হাউজে থাকতে পারেন । এর সামনে ফাকা কিছু জায়গা আছে । রাতে বারবি কিউ/গানবাজনা অরথাত মজা করার জন্য উপযুক্ত । এছাড়া যদি নিজেরা ক্যাম্পিং করতে চান করতে পারবেন।ক্যাম্পিং করার জন্য রুইলুই পাড়ায় অনেক গুলো সুন্দর স্পট রয়েছে।তবে ক্যাম্পিং করার আগে নিরাপত্তা বাহিনীকে বলে নেবেন।

তাঁবু (Tent) :
ক্যাম্পিং করতে চাচ্ছেন কিন্তু ভালো মানের তাবু খুঁজছেন? নিয়ে নিন গ্যাজেট বাংলা ডট কম থেকে।একজন ব্যক্তির জন্য তাঁবুর দাম ২০০০ টাকা , দুই জন ব্যক্তির জন্য ২৫০০ টাকা, তিন জন ব্যক্তির জন্য ৩০০০ টাকা, পাঁচ জন ব্যক্তির জন্য ৪০০০ টাকা , দশ জন ব্যক্তির জন্য ৭০০০ টাকা। http://www.gadgetbangla.com/
তাঁবু (Tent)

কোথায় খাবেনঃ
সাজেক রিসোর্ট, রিসোর্ট রুনময়,টেন্ট এবং আলো রিসোর্টে থাকলে খাবারের ব্যাবস্থা রিসোর্ট থেকেই হবে।ক্লাব হাউজে থাকলে সেখানকার কেয়ারটেকার কে দিয়ে খাবারের ব্যাবস্থা করতে পারবেন।এছাড়া যারা ক্যাম্পিং করবেন বা বাহিরে থাকবেন তারা মারুতি হোটেলসহ আরো দুএকটা আদিবাসী পরিচালিত হোটেলে খেতে পারবেন,তবে দুই ঘন্টা আগেই খাবার অর্ডার করতে হবে।খরচ হবে প্রতিবেলা ১৫০-২০০টাকা।রিসোর্ট রুনময় এবং আর্মি পরিচালিত ক্যান্টিনে অর্ডার করলেও ওরা খাবার করে দেবে তবে এখানে দাম তুলনামূলক একটু বেশি হবে।

খাবার ব্যাবস্থার জন্য পূর্বেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন। মানুষ কম হলে ওইখানে গিয়েও করতে পারেন । ভাত + সবজি বললে রিসোর্টের তত্যাবধানে যিনি আছেন তিনি ব্যাবস্থা করতে পারেন মাছ/ মাংস পথে মাচালং বাজার থেকে নিয়ে গেলে ভাল হয়। সব চেয়ে ভাল হয় এক রাত সাজেক থাকলে ।

সাজেকে আদিবাসী ও বাঙ্গালি দুই রকমের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছা করলে আদিবাসী হোটেলগুলো থেকে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন । তবে যারা হালাল খাবার খুজছেন তাদের হয় খাগড়াছড়ি থেকে হালালভাবে জবাই করে মুরগি নিয়ে যেতে হবে না হয় নিজেদের জবাই করে দিতে হবে। তবে বাঙালি হোটেল খাওয়া দাওয়া করলে সে চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা। তবে মুরগি ছাড়া ডিম, ডাল, ভর্তা সহ অন্যান্য ননভেজ খাবারও পাওয়া যায় সাজেকে। তবে যেখানেই খান না কেন আপনাকে আগে থেকে অবশ্যই অর্ডার করে রাখতে হবে খাবারের কথা। বিশেষ করে সাজকে পৌঁছানোর দিন দুপুরের খাবারাটা খাগড়াছড়ি থেকেই অর্ডার করে গেলে সুবিধে হয়। আপনার জীপ চালকেরই মাধ্যমেই তার পরিচিত কোন দোকানে খাবারের অর্ডার করিয়ে নিতে পারেন। আরেকটি কথা সাজেকে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সবকিছু চলে সোলারে পাওয়ারে। তাই আগে থেকেই মোবাইল ফুলচার্জ দিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাল। সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে তো সোনায় সোহাগা। সাজেক রবি ও টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরর নেটওয়ার্ক নেই। তাই সাথে নিতে হবে এই দুই অপারেটরের যেকোন একটি সিম।

আশেপাশের দর্শনিয় স্থানঃ
সাজেক যাওয়ার পথে দিঘীনালা থেকে ৮কি.মি. দূরে দিঘীনালা-সাজেক রোডের পাশেই হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে নিতে পারেন,মূল সড়ক থেকে ১০-১৫ মিনিট হাটলেই দেখা পেয়ে যাবেন এই অপূর্ব ঝর্ণাটির।

তৈদুছড়া নামে আরো একটি অসাধারণ ঝর্না রয়েছে দিঘীনালায়,তবে এটি দেখতে হলে আপনাকে আলাদা করে একদিন সময় রাখতে হবে শুধু এই ঝর্ণাটির জন্য।দিঘীনালার জামতলি থেকে হেঁটে এই ঝর্ণায় জেতে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ঘন্টা।দিঘীনালা বাস স্টেশন থেকে ইজিবাইকে জামতলি যেতে পারবেন,ভাড়া প্রতিজন ১০টাকা।এই ঝর্ণায় যাওয়ার সময় অবশ্যই সাথে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার নিয়ে যাবেন সাথে,কারন জামতলির পরে আর কোন দোকান নেই।তৈদুছড়া ঝর্ণায় জেতে হলে স্থানীয় অথবা পথ চেনে এমন কাউকে সাথে নিতে হবে।দিঘীনালা-সাজেক রোডের নন্দরামে নেমে যেতে হবে সিজুক ১ এবং ২ ঝর্ণায়, পায়ে হেটে আসা যাওয়ায় সময় লাগবে ৬-৮ ঘন্টা,সাথে খাবার এবং গাইড নিয়ে যেতে হবে অবশ্যই। সাজেক নামে আলাদা করে কোন বাজার বা এমন কিছু নেই।রুইলুই পাড়াতেই সব রিসোর্ট এবং দোকান।এই পাড়াতেই রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড এবং আর্মির তৈরি পার্ক। সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়া থেকে।রুইলুই থেকে কংলাক পাড়ায় হেটে যাওয়া যায়,অথবা নিজেদের গাড়ি থাকলে গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়,দূরত্ব দুই কি.মি. প্রায়।পুরোটাই কাঁচা সড়ক।কংলাকে মূলত লুসাইদের বসবাস,ইদানিং কিছু ত্রিপুরা পরিবার সেখানে বসবাস করছে।চার বছর আগে কংলাকে যেয়ে অনেক পাংখোয়া আদিবাসীর দেখা পেয়েছিলাম,এখন তারা পাহাড়ের আরো গহীনে চলে গেছে।স্থানীয় লুসাইদের কাছে শুনলাম ওরা বেশি জনসমাগম পছন্দ করেনা।তাই এই দিকে বেশি পর্যটক আসাযাওয়া শুরু হওয়ার কারনে ওরা আরো গহীনে চলে যায়।সাজেকের সকালটা একরকম সুন্দর,বিকেলটা আবার অন্যরকম,রাতে চাঁদের আলোয় যদি সাজেকের সুনসান রাস্তায় হাঁটা না হয় তবে সাজেক ভ্রমনই বৃথা!সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অন্তত এক দুইদিন থাকতেই হবে।সাজেক যাওয়ার ভালো সময় বর্ষা এবং শীত।বর্ষার টুপটাপ বৃষ্টি, হাতের কাছে নেমে আসা মেঘ আর চারদিকের সবুজ মিলিয়ে সাজেক যেন পাহাড়ের রানী হয়ে উঠে।শীতের কুয়াশাঢাকা সাজেক আবার আলাদা রকম সুন্দর।

বিশেষ দ্রষ্টব্য :

কি কি নিতে হবে-
১) ব্যাগ ২) গামছা ৩) ছাতা ৪) Odomos cream ৫) টুথপেষ্ট+ সাবান+শ্যম্পু ৬) কেডস/ সেন্ডেল ৭) ক্যামেরা+ব্যাটারী+চার্জার ৮) পলিথিন ৯) সানক্যাপ ১০) সানগ্লাস ১১) সানব্লক ১২) টিস্যু ১৩) ব্যক্তিগত ঔষধ ১৪) লোশন ১৫) রবি সিম ১৬) শীতের কাপড়

সংগৃহীত: http://travelinginbangladeshi.blogspot.com/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *