গতকাল তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্থানীয় সময় ভোরে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৮। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ান্তেপে।
আরো পড়ুন: রেলের দুর্নিতি এখন চরমে অতিরিক্ত যাত্রীদের ভাড়া এখন গার্ড নামে দালালদের পকেটে ভাগ পান টিটিও
তুরস্ক ও সিরিয়া আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা চার হাজার তিনশ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গেছেন দুই হাজার ৯২১ জন। আর সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪৪ জনে। দেশ দুটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত দেশটিতে দুই হাজার ৯২১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। দেশটিতে অন্তত পাঁচ হাজার ৬০৬টি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৪৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশটিতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশীদের দুবাইয়ে অর্থ পাচার ও ৪৫৯ বিলাশ বহুল প্রপার্টির অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোটের
ভূমিকম্পে ভবন দুলে উঠতেই ঘুম ভেঙে যায় দক্ষিণ তুরস্কের আদানা শহরের বাসিন্দা নিলুফার আসলানের। একটি পাঁচতলা ভবনে থাকেন তিনি। ভূমিকম্পের মাত্রা বুঝে নিলুফার ধরেই নিয়েছিলেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউই আর বাঁচবে না। তাই প্রতিবেশী স্বজনদের ডেকে বলেন, ‘ভূমিকম্প হচ্ছে। চলো, আমরা অন্তত সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় মরি।’
ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ ছিল ঘুমন্ত। নিলুফার আসলান বলেন, ‘আমি জীবনে কখনো এমন কিছু দেখিনি। আমাদের ভবন প্রায় এক মিনিট পর্যন্ত দুলেছে।’
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন আহমদ আর নেই
ভূমিকম্প থামতেই নিলুফার ভবনটি থেকে দৌড়ে বের হন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে কিছুই নিতে পারিনি। বাইরে বেরোনোর পর দেখি ঘরে পরার স্যান্ডেল পরে আছি।’
বাইরে বের হয়ে নিলুফার দেখেন, আশপাশের চারটি ভবন ভেঙে পড়েছে।
ঘটনার সাক্ষী স্থানীয় লোকজন এভাবেই ভূমিকম্পের পর নিজেদের আতঙ্ক ও বিস্ময়ের কথা প্রকাশ করে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দা সামের বলেন, দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো নিচে পড়ে যায়। প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়।
তুরস্কের গাজিয়ান্তেপের বাসিন্দা এরদেম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘শিশুদের যেভাবে দোলনায় দোল দেওয়া হয় আমার তখন সে রকম অনুভূতি হচ্ছিল। আমার ৪০ বছর বয়সে এমন কিছু কখনো দেখিনি। সবাই হয় নিজেদের গাড়িতে বসে ছিল, না হয় উন্মুক্ত জায়গায় যেতে গাড়ি নিয়ে ছুটেছে। আমি মনে করি, এখন একজন মানুষও নিজের ঘরে নেই।’
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিককে পাজারসিকের বাসিন্দা নিহাত আলতুনদাগ বলেন, ‘আমার চারপাশেই ছিল ভেঙে পড়া ভবন। অনেক ভবনে আগুন লেগে গিয়েছিল। শুধু ভেঙে ভেঙে পড়ছে এমন ভবনও ছিল। আমি এখন যেখানে সেখান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই একটি ভবন ধসে পড়েছে। সবাই বাইরে রয়েছে, সবাই ভীত।’ সূত্র : বিবিসি
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বাড়ির ভেতর আটকে পড়েছিল শিশুটি। তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল সিরিয়ায়।
এদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে জাতীয় ও বিদেশি প্রতিনিধি অফিসে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
এক টুইট বার্তায় এরদোয়ান বলেছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি যে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়েছে, সে কারণে সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হলো। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ও আমাদের বিদেশি প্রতিনিধি অফিসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
কয়েক দশকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি। আহতদের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি তুরস্কের বাসিন্দা, আর প্রায় আড়াই হাজার রয়েছেন সিরিয়ার বাসিন্দা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
এর আগে এরদোয়ান আরেক টুইটে ভূমিকম্পের ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, আশা করছি দ্রুতসম্ভব আমরা কম ক্ষয়ক্ষতিসহ দুর্যোগটি একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য ইউনিট সতর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়াকে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।