Friday, May 17বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

কৃষি ও সেবা খাতে জিডিপি কমছেই

বার্তা প্রতিনিধি: বাজেটে জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) বৃহৎ তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি ও সেবা খাতের অবদান কমেছে। এ ছাড়া জিডিপিতে অবদানের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও কমেছে কৃষি খাতের। অন্যদিকে বেড়েই চলেছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ও অবদান। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিমূল্য ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। মূলত ব্যাপক শিল্পায়নের কারণেই জিডিপিতে শিল্পের অবদান বাড়ছে। ফলে কমে যাচ্ছে অন্য দুটি খাতের অবদান। এতে দেশের গোটা অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিই বদলে যাচ্ছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের জিডিপিতে অর্ধেক অবদান সেবা খাতের। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতের অবদান ছিল ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি নেমে আসে ৫২ দশমিক ১১ শতাংশে। আর চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এটি ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশ দেখিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। এ খাতের মধ্যে রয়েছে পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ, আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা, রিয়েল এস্টেট ও ভাড়া, লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা এবং কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য। জিডিপিতে এর অবদানও আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। চলতি অর্থবছরে এর অবদান ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এদিকে জিডিপিতে কৃষির অবদান ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছরেও কৃষির অবদান ১৮ শতাংশ থাকলেও চলতি অর্থবছরে নেমে এসেছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশে। গত অর্থবছরেও এটি ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ছিল। অবদানের পাশাপাশি উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

বৃহৎ অর্থে কৃষি খাতের মধ্যে রয়েছে কৃষি ও বনজ, মৎস্য সম্পদ এবং খনিজ ও খনন খাত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষি ও বনজ খাতের। জিডিপির ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত অর্থবছরে এটি ছিল ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে মৎস্য সম্পদের অবদান এক বছরে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিপরীতে শিল্প খাতের অবদান দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এ খাতের অবদান ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ছিল। বিগত ৩৩ বছরে এটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেখা যায় এই অবদান ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থবছরেও এটি ছিল ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের অবদান ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছরে এটি ছিল ১৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিডিপিতে অবদানের পাশাপাশি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে প্রতিবছর। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের কিছু বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে যদি এই অবস্থার সৃষ্টি হয় তবে তা ইতিবাচক। শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি ভালো। কিন্তু কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া আশঙ্কাজনক। এটি কমতে দেয়া যাবে না। দেশের খাদ্য যদি দেশেই উৎপাদন হয় তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। এটা শিল্পায়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থেই কৃষকদের পাশে থাকতে হবে। এবার ধানের দাম পাননি কৃষকরা। এখন যদি তাদের পাশে আমরা না দাঁড়াতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সূত্র: মানবকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *