Saturday, May 18বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

এবার অনির্দিষ্টকালের বন্ধ হল জাবি শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ

বার্তা প্রতিনিধি: উপাচার্যপন্থী ও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের হামলাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীরা যখন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন তখন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা সেখানে যান। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি মিছিল সেখানে আসে। ওই মিছিলে দুই শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন। মিছিল থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়। মিছিলকারীরা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপর তারা ওই জায়গায় অবস্থান নেন।

দুপুর দেড়টার দিকে বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো হামলা হয়নি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলনকারীদের আমার বাসভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। তারা কয়েক দিন ধরে আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমি বের হতে পারিনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে তার বাসভবন অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের ঘিরে চার স্তরবিশিষ্ট বহর তৈরি করে মুখোমুখি অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ছাত্রলীগের হামলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এই হামলায় সাংবাদিক ও শিক্ষকসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের উপস্থিতিতেই গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে এই হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

হামলা চালাকালে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমকে নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, উভয়পক্ষে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা রয়েছে আমরা কাকে ফিরাব। তাদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি তাদের নিজেদের মধ্যেই সমাধান হোক।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো জুয়েল রানা বলেন, আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। শিবির কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

তবে আন্দোলনে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সমন্বায় অধ্যাপক রাইয়ান রাইন বলেন, ‘আন্দোলনে কোনো শিবির সংশ্লিষ্টতা নেই,আন্দোলন দমাতে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের একটি দল আন্দোলনরতদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এতে তারা ব্যর্থ হয়ে ছাত্রলীগ পাঠায়। ছাত্রলীগ এসে ন্যক্কারজনকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হামলা করে। এতে অনেকেই আহত হয়। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। বলপ্রয়োগ করে কোনও প্রশাসন টিকে থাকতে পারে না। হামলাবাজ উপাচার্যকে দ্রুত সরিয়ে নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের উষ্কানিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের এ হামলায় আহত হয়েছেন- আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক ড. মির্জা তাসনিমা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক আনোয়ারুলউল্লাহ ভূইয়া, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহামুদ ও বিবি হাফছা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীররনগরের সমন্বায়ক ও মুখপাত্র অধ্যাপক রাইয়ান রাইন।

দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আট জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এর আগে গত সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসভবনের সামনের ফটকে অবস্থান নেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার নিয়ে টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সূত্র: মানবকন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *