Sunday, May 19বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

আকস্মিক রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন গনশিক্ষা প্রতিমন্ত্রির

বার্তা প্রতিনিধি: জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখতে যান।

তিনি কাউকে আগেভাগে না জানিয়ে তার যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সরকার নির্ধারিত সময়সীমা অনূযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে কি না, নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম, শিক্ষকদের উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান, স্কুলের পরিবেশসহ সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না তা জানা।

অফিসিয়াল নিয়ম-কানুনের তেমন একটা ব্যত্যয় না পেলেও বিদ্যালয়গুলোর অতি জরাজীর্ণ ভবন দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন। খোদ রাজধানীতে এমন জরাজীর্ণ ভবন আশা করেননি তিনি।

তবে এদিন দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী দেখতে পান, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য ভাঙাচোরা বেঞ্চ, আধাপাকা স্কুলের টিনের চালে অসংখ্য ফুটো।আসবাবপত্র হেলে রয়েছে এদিক থেকে সেদিক। বিদ্যালয়ের মাঠে নোংরা পানি জমে থাকে দীর্ঘসময় ধরে।

এমন দুরাবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত হন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন, দ্রুত এসব স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মঙ্গলবার বেলা ১২টায় গিয়ে ঢোকেন ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া মিরপুর-১১ নম্বর এর ‘বাউনিয়াবাঁধ এ ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’।এরপর মিরপুর-১২ নম্বর এর ‘বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ও যান তিনি।

বাউনিয়াবাঁধ এ ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে মন্ত্রী দেখেন, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে পড়াচ্ছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তিনি তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে জাতির পিতা, দেশের প্রধানমন্ত্রী, নিজ বাবা-মা এবং নিজ জেলার নাম জিজ্ঞাসা করেন। কেউ কেউ এসব প্রশ্নের উত্তর ঠিকমত দিতে পারলেও অনেকেই পারেনি। এসময় প্রতিমন্ত্রী শিক্ষার্থীদেরকে ভালোভাবে পড়ানোর নির্দেশ দেন শিক্ষকদের। এছাড়া স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাসও দেন।

এরপর ‘বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ প্রবেশ করে একই অবস্থা দেখেন তিনি। গোটা স্কুলের প্রতিটি ক্লাস রুম নোংরা, অফিস রুমে রাখা আলমারীগুলোর নিচে ইট দিয়ে তা উচু স্থানে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির সময় স্কুলের আঙিনায় পানি জমার পর সেই পানি প্রতিটি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে-এর চিহ্নও দেখেন মন্ত্রী।

এ সময় স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিবা সুলতানা প্রতিমন্ত্রীর কাছে দ্রুত ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘স্কুলটি জাতীয়করণ হয়েছে বেশ কয়েকবছর। কিন্তু এখনও স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট করে। স্কুলের আঙিনায় হাঁটু পানি জমে। বাচ্চারা স্কুলে আসতে পারে না। ক্লাসরুমে পানি ঢুকে পড়ে। খুব কষ্ট হয় সবার। মাথার ওপরে টিনেও ভাঙাচোরা। এ অবস্থায় গুণগত শিক্ষা দেওয়া অনেক কঠিন।’

এ সময় প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তাকে দ্রুত ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেন।

এরপর দুপুর দেড়টায় তিনি নিয়ে একই এলাকার ‘শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ যান। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বিষয়ে খবর নেন তিনি। শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি থাকলেও এ বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত দেখতে পান তিনি। এছাড়াও একজন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় তার বদলে বহিরাগত শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোর প্রমাণ পান তিনি।

এ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির একটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেঞ্চে বসে শিক্ষকের পড়ানোর স্টাইল দেখে বিরক্ত হন প্রতিমন্ত্রী।

স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকার কারণ জানতে চাইলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীকে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, মাঝেমাঝে শিক্ষকরা অনেকের বাড়ি গিয়ে ডেকে ক্লাসে আনার চেষ্টা করেন।’

বহিরাগত শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোর বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন,’একজন সহকারী শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় তার ক্লাসগুলো বহিরাগত শিক্ষক দিয়ে করানো হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো ঠিক না। আপনারা সবাই মিলে তার ক্লাসগুলো নেবার কথা।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’স্কুলের শিক্ষকদের তেমন কোনো অনিয়ম পাইনি। আগের চেয়ে শিক্ষার মান অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে আরও বাড়াতে হবে। সরকার সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে তিনটি স্কুলের মধ্যে দুটি স্কুলের ভবন খুবই জরাজীর্ণ। দ্রুত এই স্কুল দুটির ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ৩০ জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্লাস কার্যক্রমের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নির্দেশনা অনূযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা ও মফস্বলে ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গ্রীষ্ফ্মকালীন সময়ে সারাদেশে সকাল ৭টা থেকে বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত ক্লাস করানো নির্দেশনা দেয়া হয়।

এই নিয়ম চালু করার পর গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন। তিনি ১৫টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে ৭ জন প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন সহকারী শিক্ষককে অনুপস্থিত পান। এই অভিযোগে সেসব বিদ্যালয়ের ৭ প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি সংশ্নিষ্ট সহকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
সূত্র: মানবকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *