বার্তা প্রতিনিধি: রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গত বুধবার রাতে কলাবাগান থানার পুলিশ জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক (২৭) নামে এক নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করে।
খুনের এ ঘটনায় রেজাউল করিম রেজা নামের এক যুবককে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।
গলাকাটা ওই চিকিৎসকের শরীরে অসংখ্য কাটা দাগ পাওয়া গেছে। কাটা দাগগুলো ধারালো অস্ত্রের। এ ঘটনায় চিকিৎসকের বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে রেজাউল করিমকে এজাহারভুক্ত করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন।
হোটেল থেকে পুলিশ চিকিৎসকের লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে কলাবাগান থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, এই চিকিৎসককে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে। এ ঘটনায় এই চিকিৎসকের পূর্বপরিচিত রেজাউল করিম রেজা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছে পরিবার।
তবে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন রেজাউল করিম সিটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। তাঁকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি জানিয়ে ওসি বলেন, গত বুধবার সকালে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে এসে পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলটিতে ওঠেন জান্নাতুল। এরপর রাতে খবর পেয়ে হোটেলটির চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষের বিছানা থেকে জান্নাতুল নাঈমের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে।
জান্নাতুল নাঈম ছিদ্দীক নামে ঐ চিকিৎসক রাজধানীর মগবাজার কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্ত্রী ও গাইনি বিষয়ে একটি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁর বাসা রাজধানীর শাজাহানপুরে। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামে।
জান্নাতুল নাঈম ছিদ্দীকির বাবা মো. শফিকুল আলম একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। বর্তমানে রাজারবাগ ২ নম্বর মোমেনবাগ দোলনচাঁপা ভবনে বসবাস করেন।
হোটেলে হত্যার ঘটনার বিষয়ে শফিকুল আলমের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার সকাল ৮টার দিকে জান্নাতুল ক্লাসের কথা বলে বাসা থেকে বের হন। সকাল ১০টার দিকে তাঁর বাসায় ফেরার কথা ছিল। তিনি বাসায় না ফেরায় শফিকুল আলম সকাল ১১টার দিকে ফোন করেন। কয়েকবার কল করার পর ফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
রেজাউল করিমের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘মেয়ে জান্নাতুল একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তার (রেজা) সঙ্গে। বলেছিল তার বন্ধু। তার বাড়ি কক্সবাজার। গাজীপুর জয়দেবপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে (সিটি) কর্মরত। এর বেশি কিছু আর শুনিনি। ’
চিকিৎসকের লাশ গতকাল সকাল ১১টার দিকে জান্নাতুলের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মর্গে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ। সুরতহালে কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নার্গিস আক্তার উল্লেখ করেন, নিহতের থুতনি, ঠোঁট ও গলায় সাড়ে আট ইঞ্চি; বাঁ কাঁধে দেড় ইঞ্চি; দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি, বুকের মাঝখানে ও পেটে ছয়টি কাটা জখম রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পিঠে, বাঁ পায়ে হাঁটুর ওপরে ও নিচে কাটাছেঁড়ার চিহ্ন রয়েছে।
আবাসিক হোটেলে পরিদর্শন করে কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু জাফর বলেন, রেজাউল করিমের সঙ্গে ডা. জান্নাতুল হোটেলকক্ষে উঠেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার পর বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান ওই যুবক। হোটেলের চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষে বিছানায় পড়ে ছিল মরদেহটি। তাঁর শরীরে একাধিক জখমের দাগ ছিল। হোটেলটির সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এই চিকিৎসক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।
এদিকে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, জান্নাতুলের সঙ্গে রেজার প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন। বিষয়টি জানত জান্নাতুলের পরিবার। এর আগেও তাঁরা দুজন একাধিকবার দেখা করেছেন এবং বাইরে ঘুরতেও যান। একসময় মেয়ের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন রেজা। তবে তাঁর চরিত্রগত সমস্যার কারণে বিয়েতে রাজি ছিল না নারী চিকিৎসকের পরিবার। তবু তাঁরা দুজন মেলামেশা চালিয়ে যান।
হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, চিকিৎসককে হত্যার কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর মেয়ের পরিবার তাঁদের বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। এই নিয়ে ক্ষোভ থেকে এই চিকিৎসককে হত্যা করা হতে পারে।
এছাড়া গতকাল রাতে রেজাউলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, তাঁকে চিকিৎসক জান্নাতুলকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।