Thursday, May 2বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

বুয়েটি ছাত্র শিক্ষক এক সাথে অসম্প্রদায়িক চেতনা রুখতে শপথ

বার্তা প্রতিনিধি: সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রকৌশলী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দেওয়ার শপথ নিলেন শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে বুয়েট মিলনায়তনে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হলের প্রভোস্টরা শপথে অংশ নেন। বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সবাই শপথ নেন৷

প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে গণশপথ গ্রহণ করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে স্থান পরিবর্তন করে অনুষ্ঠান হয় বুয়েট অডিটোরিয়ামে। শপথ নেওয়ার জন্য বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়ামে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া ১টার দিকে শপথ অনুষ্ঠান হয়।

অডিটোরিয়ামে শপথ শুরুর আগে বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথ পড়ান বুয়েটের ১৭ তম ব্যাচের ছাত্রী রাফিয়া রিজওয়ানা।

তবে শপথে বলা হয়, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সব প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়,অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকবো৷ আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেবো। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সমূলে উৎপাটিত করবো৷ এই আঙ্গিনায় আর যেন কোনও নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে না যায়৷ আর কোনও নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন অত্যাচারের শিকার না হয়৷ তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করবো ৷’

প্রকৌশলী আবরার গত ৬ অক্টোবর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির বিষয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে বেদম পেটায়। এর ফলে তিনি মারা যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এবং নিরাপত্তার কথা বলে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবি জানায়।

অনেক আন্দোলনের পরে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। সেখানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করলেও ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নিয়ে দেখা দেয় দ্বিমত। বুয়েট প্রশাসন নির্ধারিত দিনেই পরীক্ষা নিতে চাইছিল। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা চাইছিল তারিখটি পেছানো হোক। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১১টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানায়। সেখানে তারা তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পাঁচ দাবি মেনে নিলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে একমত হবে বলে ঘোষণা দেয়।

ঘোষনার পরদিন তাদের পাঁচ দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নোটিশ দিলে দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা হতে না দেওয়ার দাবি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এর পর তারা গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর এই দু’দিন আন্দোলন শিথিল রেখে ভর্তি পরীক্ষা এবং অভিভাবকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। গত মঙ্গলবার ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় শিক্ষার্থীরা ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকদের গণস্বাক্ষরও নেয়। শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানার কথা মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চার্জশিটের ভিত্তিতে অপরাধীদের স্থায়ী বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণাও দেন তারা।

সূত্র: সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *