চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম শওকত আলী বাৎসরিক আয় প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তিনি ২০১৮সালে প্রায় ২১ লক্ষ টাকা ভ্যাট প্রদান করেছেন। একজন প্রাইভেট কোম্পানীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার এত বিশাল টাকার উৎস কোথায়। যিনি মাত্র ৩০ হাজার বেতনে দায়িত্ব পেলেও এখন তার মাসিক আয় প্রায় ৩৯ লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার টাকা। এত বিশাল অর্থ তিনি কোম্পানী থেকে বেতন পান নাকি তিনি দুর্ণিতি করে এসব টাকা কোম্পানী থেকে হাতিয়ে নেন। তিনি পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউছুফ আলীর ভাই। ২০০৯ সালে তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নিতির অভিযোগ উঠে। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধান কার্যলয় ও বিভিন্ন জেলার কার্যালয় গুলোতে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের চাটাই শুরু করেন। এর মধ্যে অন্যান্য জেলার কিছু কর্মকর্তা ছাড়া প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সবখাতে তার মনমত তথা তার এলাকার শরিয়তপুরের লোক বসান। তাছাড়া বিভিন্ন জেলার সার্ভিস সেলের কর্মকর্তার সংখ্যা কমিয়ে এক তৃতীয়াংশে নিয়ে আসা হয়েছে। কোন কোন সার্ভিস সেলে নাম মাত্র অন্যান্য জেলার কর্মকর্তা রাখলেও বিগত ৫ বছরে তাদের কারো বেতন বাড়েনী। চট্টগ্রাম বগুড়া বরিশাল সিলেট সহ দেশের বিভাগীয় কার্যালয়ে নাম মাত্র কর্তকর্তা আছেন। ২০১০ সালে যেখানে বিভাগীয় কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০ জন সেখানে এখন প্রায় ৭২ জনে নিয়ে আসা হয়েছে। অনুসন্ধানী সূত্রে জানা গেছে সার্ভিস সেলের কর্মকর্তাদের বেতন ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। অনেক কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় পদোন্নতি ও বেতন ভাতা বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও ৫ বছর ধরে কারো বেতন বাড়েনী।ডিজিটাল বাংলাদেশে সব অফিসগুলো আইটি নির্ভর হলেও পপুলারের সব বিভাগীয় কার্যালয় এখনো আদী যোগে আছে। প্রধান কার্যালয় ছাড়া বাংলাদেশের কোন বিভাগীয় কার্যালয় হতে কোন প্রকার গ্রাহক সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। যার কারনে বিভাগীয় সব সার্ভিস সেল থেকে গ্রাহকের টাকা মেরে দেয়ার সুযোগ রয়েছে অনেক বেশী। জানা গেছে পরিমান মত মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সব টাকা গ্রাহক ঠিকমত পায়নি। যারা পেয়েছেন তাদের কারো ৬মাস কারো বা ১বছর পর্যন্ত সময় লাগছে। আর অনেক সময়ের পর যারাই মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবী পেয়েছেন সকলের থেকে কোম্পানী ৬ হাজার বা ১২ হাজার বা তারও বেশী টাকা কেটে রেখে দিয়েছেন। যেসমস্থ গ্রাহক টাকা দিতে চায়নি তাদেরকে নির্বাহী রশিদ নাদেখিয়েই তাদের একাউন্ট পেয়ী চেক দেয় কোম্পানী থেকে। অশিক্ষিত ও স্বল্পউন্নত যে সব গ্রাহক ছিলেন তারা কিছু নাবলে টাকাটা নিয়ে নিতেন। এসমস্থ জোর করার কারনে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানীর মোট ব্যবসা ভাল হলেও ২০১৮ সালে সে ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। বিভাগীয় অফিস গুলো ঘুরে দেখা গেছে যেসব অফিস সব সময় কর্মীদের আনাগোনায় মূখর ছিল সেখানে দু-একজন ছাড়া সব টেবিল পাকা। ঠিক এই সমস্থ অবস্থার জন্য কোম্পানীর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করলেন নাম না বলা অনেক কর্মকর্তারা। তারা বলেন প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সব কর্মকর্তাদের বেতন ঠিক মত বাড়লেও ব্যবসা হয়না এমন অভিযোগ দিয়ে বিভাগীয় কয়েক জনের বেতন বাড়ায়না বলে অনেক কর্মকর্তা চাকুরী ছেড়ে ছলে গেছেন। আরো জানা যায় যেখানে একটা সার্ভিস সেলে ১০ জন কর্মকর্তা নিয়মিত কাজ করতেন সেখানে এখন মাত্র ২ জন্য কর্মকর্তাই কাজ করেন। অর্থাৎ পপুলার লাইফের ব্যবসা এখন ১০ গুন থেকে ২ গুনে নেমে এসেছে। এতদিন গ্রাহকদের মেয়াদ উত্তীর্ণ থেকে টাকা কেটে রাখায় ও বোনাস বীমার গ্রাহকরা যে বোনাস পেতেন সেগুলো এফডিআর করার কারনে এত ব্যবসা হয়েছে বলে দাবী অনেকের। যে নিয়মটি বাংলাদেশের কোন বীমা খাতে নাই। আরো অনুসন্ধানী করে দেখা গেছে কিস্তি মেয়াদী বীমার বোনাসের টাকা না দেয়ায় হাজার হাজার গ্রাহক তাদের বীমা বন্ধ করে দেন। ভুক্তভোগী অনেক গ্রাহককে গালাগালী করে অফিস থেকে বের হতে দেখা গেছে।জানা গেছে বীমা নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ঘোষনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকর্তাদের তিন স্তর করলেও পপুলার লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউএম এর জন্য ৩০ হাজার টাকা ও বিএম এর জন্য ১ লক্ষ টাকা ধার্য্য করে দেন, যার কারনে অনেক কর্মকর্তারা সে অনুযায়ী লক্ষ অর্জনে ব্যার্থ হলে তারা জমা টাকার উপর কোন বেতন পাননা। এমনি ভাবে প্রতি মাসে প্রায় ব্যবসার তিন ভাগের দুইভাগ কর্মকর্তারা তাদের ইউএম ও বিএম বেতন পাননা। কিন্তু কোম্পানী থেকে সকল ইউএম ও বিএমদের বেতন কোম্পানীকে পরিশোধ দেখানো হয়। যার কারনে বিশাল একটি অর্থের অংশ বিভাগীয় পর্যায়ে সাধারন উন্নয়ন কর্মকর্তাদের নাদিয়ে ব্যবস্থাপকরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন যা সম্ভদ্ধে কোম্পানীর চেয়ারম্যান বা পরিচালকরা কিছুই জানেননা। অনুসন্ধানী আরো সূত্রে জানা গেছে তারা মোট ৪ ভাই রয়েছেন এই কোম্পানীতে। তাদের কারোরই তেমন লেখাপড়ার যোগ্যতা না থাকলেও তারা সবাই উর্দ্ধতন কর্মকর্তার আসনে বসে আছেন আর কোম্পানীর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিএম শওকত আলীর মীরপুরে রয়েছে একটি আলীশান বাড়ী ও তার ব্যবহৃত গাড়ীটির মূল্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, কোম্পানীর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে তিনি এই বাড়ী বানিয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া তার পরিবারের সবার জন্য একটি করে গাড়ীও আছে বলে জানা গেছে। বিভাগীয় সকল অফিস ঘুরে দেখা গেছে কোন কোন অফিসে কর্মকর্তাই নাই। মূল কারন হিসেবে জানা গেছে অল্প বেতনে কাজ করে দীর্ঘদিন বেতন না বাড়ানোর কারনে অফিসগুলোর এই অবস্থা। জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারী কর্মকর্তাদের গ্রেড এ বেতন বাড়ীয়ে দিয়েছেন এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের অপারেটরদের বেতন নির্ধারন করে দিয়েছেন যার সুখ্যাতি সুদর প্রসারী। ব্যাংকের পরে বীমা কোম্পানী। বাংলাদেশে অর্থ যোগানে দুটুই সমান অধিকারী। কিন্তু বীমার কর্মীদের অবস্থা এতই করুন যে, ৭/৮ বছর চাকুরী করার পরও তাদের বেতন মাত্র ৭/৮ হাজার টাকা। তাই বীমা ক্ষেত্রেও একটি নিয়ম করার জন্য প্রদান মন্তুী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি বিভাগীয় কর্মকর্তারা অনুরোধ জানান এবং না বলা অনেক বিভাগীয় কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগগুলো সরকার ও বীমা নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এবং কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। চলবে