Friday, April 26বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

নারী উদ্দেক্তারাদের ব্যাংক লোন দিতে ইবিএল

বার্তা প্রতিনিধি:বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তারা বিশ্বের মধ্যে তাদের মান এবং স্থান উভয় পরিচিতি অর্জন করতে আজ সক্ষম। ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাই নারীদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে। এই বিষয়ে একজন ব্যাংকার হিসেবে আপনাদের জন্য কিছু লিখবার চেষ্টা করবো এবং চেষ্টা করবো যেন এটা পড়ার পর আপনারা কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনাদের সংকোচবোধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

প্রথমে দেখা যাক কেন নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংকের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্রঃ

১) নারী উদ্যোক্তারা সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি আমরা বিগত ১০ বছরে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলি তবে আমরা গর্বিত হবো যে, কিভাবে নারী উদ্যোক্তারা প্রতি বছর ব্যাবসায় এগিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিদিন নিত্য নতুন পণ্য উৎপাদন করছে, দেশে ও বিদেশে নিজেদের পণ্য বাজারজাত করছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহের জন্য আগ্রহী হচ্ছে এবং শুধু তাই নয়, তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করারও ইচ্ছা পোষণ করছে। এপর্যায়ে ব্যাংকগুলোও খুঁজে পাচ্ছে তাদের বিনিয়োগের পথ। নারী উদ্যোক্তারা সংখ্যায় বাড়ছে, তাদের আর্থিক চাহিদাও বাড়ছে। ব্যাংকের নতুন গ্রাহক বাড়ছে, বাড়ছে ব্যাংকের আয়ের উৎস। তাই ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের লাভের জন্যই ঋণ দেয়ার আগ্রহ নিয়ে উদোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে।

২) নারী গ্রাহকদের সংখ্যাও বাড়ছে। যেভাবে গত ১০ বছরে দেশের উন্নতি হয়েছে, সেভাবে চাহিদাও বেড়েছে। তাই দেশীয় বাজারে দেশীয় পণ্যগুলো স্থান করে নিচ্ছে। ব্যাংক মনে করে দেশীয় নারী উদ্যোক্তাদের এখন খুব ভালো একটা সুযোগ রয়েছে। তাই উদ্যোক্তাদের যদি সহযোগিতা দেয়া যায় তাহলে তাদের উদ্যোগকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব এবং ব্যাংকের জন্যও সেটা লাভজনক।

৩) শুধু চাহিদা আর উৎপাদনকারী থাকলেই হবে না, বাজারে পণ্য তখনই লাভজনক হবে যখন পণ্য হবে গুণগত মানসম্পন্ন। আর এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের। যার পণ্য যত মানসম্পন্ন তার পণ্যই বাজারে টিকবে এবং ব্যাংক এই দিকটা খুব গুরুত্বের সাথেই লক্ষ্য করে। এজন্যই ব্যাংকগুলো যখন ডকুমেন্টস চায়, তখন তারা এসব দিক যাচাই বাছাই করার জন্য প্রয়োজনীয় দলিল চায়। ব্যাংক আপনার ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স চাইবে, অনাবাসিক এলাকায় অফিস বা দোকানের অবস্থান দেখতে চাইবে, মালামালের স্টক দেখতে চাইবে, বেচাকেনা এবং খরচের হিসেব দেখতে চাইবে। তাই সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।

ব্যাংক ডকুমেন্ট দেখার আগে আপনি দেখে নিবেন যে পরিমাণ টাকা আপনি ঋণ হিসেবে চাচ্ছেন, তা আপনি ব্যবসার আয় দিয়ে পরিষদ করার সক্ষমতা রাখেন কিনা। নারী উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে আমরা এই বিষয়গুলোকেই তুলে ধরি নারীদের সামনে।

৪) বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরো সচেষ্ট হওয়ার জন্যে বলেছে। তাই ব্যাংকগুলো এখন প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তার খোঁজ করছে। উদ্যোক্তার উদ্যোগের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকগুলো একাধিকবারও ঋণ দিয়ে থাকে, এতে উদ্যোক্তার পাশাপাশি ব্যাংকও লাভবান হয়ে থাকে।

৫) নারী উদ্যোক্তারা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করে থাকেন বিধায় ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে আগ্রহবোধ করে।

ব্যাংক লোন দিতে চায়, উদ্যোক্তাগণ লোন পেতে চায়। এক্ষেত্রে জটিলতা কোথায়?

সমস্যা সমূহ-

১) ট্রেড লাইসেন্সের ঠিকানা আর ব্যবসার ঠিকানার অমিল- আবেদনকারী উদ্যোক্তার ব্যবসার ঠিকানা নিজে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকি, যদি সেখানে অমিল হয় তবে তা বিবেচনা করা হয় না।

২) TIN / ভ্যাট লাইসেন্স না থাকা।

৩) সেলস লেজার, খরচ খাতা, বাকির হিসেব- যেমন : বেতন রশিদ বা সাপোর্টিং কাগজপত্র সংরক্ষণে না রাখা, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না করা, এই বিষয়গুলো ব্যাংক দেখতে চায় এবং এগুলো ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪) সাইন বোর্ড, সীল, বিজনেস কার্ড ব্যবহার না করা।

৫) প্রতি মাসে বিক্রির ৪০% কম ব্যাংকে জমা করা।

৬) অপর্যাপ্ত বেচাকেনা যা সর্বনিম্ন ঋণের ভার বহন করতে পারবে না।

৭) অন্য ব্যাংকে ঋণ খেলাপি।

৮) ব্যবসার মালামালের পরিমান অপর্যাপ্ত থাকা যা দ্বারা ঋণ পরিশোধ করা যাবে না।

৯) জামিনদারের ব্যবসার মন্দা অবস্থা।

১০) পণ্য অবৈধ হয়ে থাকা।

ব্যাংক যেভাবে সাহায্য করছে উদ্যোক্তাদের আরো উপযুক্ত হবার জন্য-

১) ট্রেনিং- EBL Women Banking নিয়মিত উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর ট্রেনিং এর আয়োজন করে থাকে যা দ্বারা উদ্যোক্তারা শিখতে পারবে এবং ব্যাংক ঋণের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারবে।

২) ফ্যাসিলিটেটিং সার্ভিসেস- EBL Women Banking ব্যবসায়িক কাগজপত্র (ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স, ভ্যাট ইত্যাদি) প্রস্তুতির জন্য সহযোগিতা করে থাকে।

৩) নারী উদ্যোক্তাদের চাহিদা জানার জন্য এবং তাদেরকে EBL Women Banking সম্পর্কে অবগত করার জন্য বিভিন্ন উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর ফোরাম এন্ড এসোসিয়েশনের মাধমে ট্রেনিং করিয়ে, সেমিনার করে, মেলায় অংশগ্রহণ করে তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করে।

৪) EBL Women Banking হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা আছে আমাদের প্রতিটি ব্রাঞ্চে- সেখানে রয়েছে EBL Women Banking কন্ট্রাক্ট পয়েন্ট, যিনি আপনাদের ব্যবসায়ীক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৫) নারী উদ্যোক্তা ঋণ- EBL মুক্তি: সব শেষে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য যেই ঋণের ব্যবস্থা সেটা নিয়ে কথা বলি-

EBL মুক্তি হচ্ছে আমাদের নারীদের জন্য ব্যবসার ঋণ। এই ঋণ যেকোনো সাধারণ ঋণের চাইতে অনেক সহজ এবং শুধুমাত্র নারীদের জন্য।

আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলো:

কোন নিরাপত্তা ছাড়াই ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ।
একক অঙ্কের সুদের হার (৯%)।
মেয়াদ ৫ বছর।
মেয়াদভিত্তিক ঋণ এবং সম্পূর্ণ ঋণ একই সময়ে বিতরণ করা হয়।

নাফিসা আরা
সিনিয়র ম্যানেজার, উইমেন ব্যাংকিং, ইবিএল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *