অনলাইন বার্তা: তৃতীয় বিশ্বযুুদ্ধের আভাসে রাশিয়ান সেনাদের হামলার প্রথম দিনে ইউক্রেনে ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৩১৬ জন। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন। খবর আল-জাজিরার
আহত হয়েছে আরও ৩১৬ জন। মিত্রদের ব্যাপারে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশকে রক্ষার জন্য আমরা একা লড়াই করছি। আমাদের সঙ্গে মিলে কে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত? আমি কাউকে দেখি না।
হামলার প্রথম দিনে ইউক্রেনে কমপক্ষে ১২ জন রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। অভিযানের প্রথম দিনটি সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনের ভূ-উপরিভাগের ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবি করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যার মধ্যে ১১টি বিমানঘাঁটিও রয়েছে। চেরনোবিলে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ সেনারা।
এছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের পর বেলারুশ ও ক্রিমিয়া থেকে ইউক্রেনে প্রবেশ করেন রুশ সেনারা। দেশটির একাধিক শহরে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার দখলদার বাহিনী চেরনোবিল দখল করার চেষ্টা করছে। ১৮৮৬ সালের বেদনাদায়ক ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আমাদের সেনারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন।
অন্য দিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের প্রায় ১ লাখ মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। কয়েক মাসের উত্তেজনার পর বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনে অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। রাশিয়ার কাছাকাছি ন্যাটোর সম্প্রসারণের উদ্বেগ থেকেই এই হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনও বসে নেই তারা রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি বইছে। প্রথম দিনেই ইউক্রেনে রাশিয়া ১৬০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের এক কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন এমন দাবি করেছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র স্বল্প-পাল্লার। এছাড়া মাঝারি-পাল্লার ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছে রাশিয়া।
আলজাজিরার বরাত দিয়ে জানানো হয় রাশিয়া তিন দিক ঘিরে ইউক্রেনে সাঁড়াশি হামলা চালিয়েছে । বৃহস্পতিবার এ হামলায় রাশিয়ার ৫০, ইউক্রেনের ৪০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ।
হামলার এ ঘটনায় রাশিয়ার সঙ্গে কুটনৈতিক সর্ম্পক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনীয় নাগরিকদের অস্ত্র হাতে লড়াইয়ের ডাক দেন তিনি।
রাশিয়ার হামলায় সেইসঙ্গে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার আহ্বানও জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ড ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে রাশিয়ার দাবি, অস্ত্র ফেলে দল বেঁধে পালাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। অস্ত্র সমর্পণ করা সেনাদের ওপর আর কোনো হামলা হয়নি বলেও দাবি মস্কোর।
এদিকে ন্যাটো প্রধান রুশ আগ্রাসনের পরেও ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে না বলে জানিয়েছেন । তবে রাশিয়ার এ হামলাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের জন্য সবচেয়ে অন্ধকারময় সময় বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আভাসে ২০২২-এ এসে রাশিয়ার এমন অমানবাবিক কর্মকাণ্ডকে দু:খজনক বললেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তবে ইউক্রেনে রুশ হামলাকে আক্রমণ বলতে নারাজ চীন। বৃহস্পতিবার মস্কোর পদক্ষেপকে প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে বেইজিং।