Saturday, May 18বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন দুর্ণিতির শীর্ষে কর্মকর্তারা হচ্ছেন কোটি টাকার মালিক

বার্তা প্রতিনিধি: এক প্রতিবেদনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলছে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। দায়িত্ব পেয়েই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে অনেকে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে নগর ভবনসহ পুরো পাঁচ অঞ্চলের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আর এর মাধ্যমে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দায়িত্ব পালনে আইন বহিভর্‚ত পদায়নের মাধ্যমে করছে কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ। শীর্ষকর্তা-ব্যক্তিদের পছন্দের কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতে ডিএসসিসিতে হরহামেশা এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। লুটপাটের অভিযোগে কারো বিরুদ্ধে আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) হয়েছে মামলা। এতে সংস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্গানোগ্রামে পদ না থাকলেও অদৃশ্য কারণে ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগে ভুতুড়ে পদে একের পর এক দেয়া হচ্ছে নিয়োগ। যা সিটি কর্পোরেশন বিধিমালার লঙ্ঘন। আর এসবই ঘটছে ডিএসসিসিতে বিদ্যমান কথিত একটি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায়। আর এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে খোদ সংস্থারই রাজস্ব বিভাগের উর্ধŸতন এক কর্মকর্তা এবং শীর্ষ অপর এক কর্তা-ব্যক্তি জড়িত বলে জানা গেছে। তুঘলকি এসব কাণ্ডে ডিএসসিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ। কিন্তু বরখাস্তের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

হাবিবুল ইসলাম সুমন। সহকারী প্রটোকল অফিসার। তবে ডিএসসিসিতে তিনি একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত। কারণ তিনি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অতি ঘনিষ্টদের একজন। আবার নিজ বাসাও একই এলাকায়। যদিও তিনি যে পদে কর্মরত আছেন সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে আদৌ সে পদটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার শেখ কুদ্দুস আহমদ। ১৯৯০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। মূলত তিনি নগর পরিকল্পনা ও ডিজাইন বিভাগের কর্মকর্তা কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মেয়রের একান্ত সচিব-২ এই পদে কর্মরত আছেন। মেয়রের একান্ত সচিব-২ এই পদটিও কর্পোরেশন অর্গানোগ্রামে নেই। একই পন্থায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা পদটিও সিটি কর্পোরেশন অর্গানোগ্রামে না থাকলেও খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামকে দেয়া হয়েছে নিয়োগ।

এভাবেই পদ না থাকলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) একের পর এক বেআইনিভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না পদ অনুযায়ী নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ডও। সংস্থার তহবিল থেকে বেতন দেয়া হলেও এদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের চাকরি বিধি প্রযোজ্য হবে না মর্মে করা হচ্ছে অফিস আদেশ জারি। এভাবেই ডিএসসিসিতে তুঘলকি কাণ্ডে চলছে ভৌতিক নিয়োগ। আর এসব যাদের দেখার কথা, খোদ সেসব রক্ষকই যেন ভক্ষকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণত অর্গানোগ্রামে সহকারী প্রটোকল অফিসার পদের জন্য তফসিল অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে অথবা জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

অথচ চাকরির আবেদন অনুযায়ী হাবিবুল ইসলাম সুমনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। যদিও তিনি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সার্ভিস ফাইলে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতারই সনদপত্র জমা দেননি। সূত্রমতে হাবিবুল ইসলাম সুমন এতটাই ভাগ্যবান তিনি ইং ২৪/০৫/২০১৫ তারিখ চাকরির আবেদন করলে ২৫/০৫/২০১৫ তারিখ তার চাকরি হয়েছে মর্মে অফিস আদেশ জারি হয়। যার স্মারক নং-৪৬.২০৭.০০০.০৩.০১.৬৪৭.১৯৯১/৩৭৫, তাং-২৫/০৫/২০১৫ইং। আবার অফিস আদেশের দিনই তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এভাবে আবেদনের পর দিনই চাকরি পাওয়া ও যোগদানের বিষয়টি বিরল বটে।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কোষাগার থেকে হাবিবুল ইসলাম সুমনের সম্মানী প্রদান করা হলেও তার চাকরির অফিস আদেশের শর্তাবলির ‘খ’ দফায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের চাকরি বিধিমালা তার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তাকে কর্তৃপক্ষের সরাসরি তত্ত¡াবধায়নে কর্মরত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে বলা হয়েছে। ডিএসসিসির সহকারী প্রটোকল অফিসার হাবিবুল ইসলাম সুমন এ ব্যাপারে বলেন, আমার নিয়োগ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বোর্ডে আলোচনার মাধ্যমেই দিয়েছেন। অর্গানোগ্রামে পদ আছে কি নাই তিনিই ভালো বলতে পারবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয় এক প্রশ্নে প্রথমে উত্তেজিত হয়ে পরক্ষণেই তিনি বলেন, আপনি ডিএসসিসিতে আসেন আপনার সাথে এ বিষয়ে মুখোমুখি কথা বলি। এ বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিষয়টি জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাবিবুল ইসলাম সুমন সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত স্থায়ী চাকরিজীবী নন। মেয়র মহোদয়ের অভিপ্রায়ে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমার বলা সমীচীন হবে না, বিষয়টি নিয়ে মেয়র ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহম্মদ বলেন, অর্গানোগ্রামে না থাকা পদে নিয়োগ দেয়া অনিয়ম। প্রয়োজন হলে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আলী ইমাম মজুমদার বলেন, পদ সৃষ্টি না করে সিটি কর্পোরেশন সংস্থাটির কর্মী নিয়োগ দিতে পারে না। যদি তারা নিয়োগ দিয়ে থাকে তবে তা কোনোভাবেই বিধিসম্মত হয়নি বলে আমি মনে করি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেতন বা সম্মানী দেবে সিটি কর্পোরেশন এবং চাকরিও সেখানে কিন্তু তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থাটির চাকরি বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না এমন আদেশ আত্মঘাতী। অর্গানোগ্রামে পদ না থাকলেও চাকরি পাওয়া ডিএসসিসির অপর ভাগ্যবান হচ্ছেন সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। চলতি বছরের ১ জুন থেকে তাকে এ পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এর আগে তিনি চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হিসেবে ডিএসসিসিতে কর্মরত ছিলেন।

নিয়োগ সম্পূর্ণ বৈধ এমনটা দাবি করে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমার নিয়োগে কোনো ভেজাল নাই। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের পর এ নিয়োগ হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের চলতি অর্গানোগ্রামে তার এ পদটির উল্লেখ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয় আমাদের সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। নিয়োগের ব্যাপারে ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, যেহেতু এর মধ্যে আইনগত বিষয় রয়েছে তাই এ ব্যাপারে আমি ভালোভাবে না জেনে বলা ঠিক হবে না। তাছাড়া গণমাধ্যমের সাথে মেয়র মহোদয় সরাসরি কথা বলেন, তাই এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বলাই ভালো। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান এ ব্যাপারে বলেন, আগে কখনোই এভাবে পদ নেই সেই পদে চাকরি হচ্ছে এমনটা শুনিনিও তবে এখন তা দেখতে হচ্ছে। শুধু সিটি কর্পোরেশনে নয় অনেক প্রতিষ্ঠানেই এ রকম নজির রয়েছে। আবার এদের পদোন্নতি হচ্ছে। যা পুরোটাই দুঃখজনক বলা ছাড়া কিছুই করার নেই।
সূত্র: মানবকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *