Friday, April 26বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষক ফোরকানের একের পর এক অপরাধ দুর্নিতি

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করতেন মোহাম্মদ ফোরকান। তাঁর মূল পদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর। কিন্তু ১০ বছর ধরে তিনি প্রেষণে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করছেন। প্রেষণে বাগিয়ে নেওয়া পদে বসে তিনি করে গেছেন একের পর এক অপকর্ম। তাঁর বিরুদ্ধে টেন্ডার সিন্ডিকেট, দুর্নীতিসহ ৩৭টি অভিযোগের দুটি তদন্ত কমিটির ১৫ দিনের তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। ফোরকানের হাত এতই লম্বা যে, তাঁকে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ হাসপাতালে বদলি করা হলেও ১৩ দিনের মাথায় সেই আদেশ স্থগিত করিয়ে ফেলেন। চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতার প্রশ্রয়ে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। সর্বশেষ ভুয়া স্মারক নম্বর বসিয়ে জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার একটি বিল ছাড়াতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন মোহাম্মদ ফোরকান।

এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ভুয়া স্মারক নম্বর দিয়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিল জালিয়াতির ঘটনায় হিসাবরক্ষক ফোরকানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটন হওয়া দরকার। দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। ফোরকান কীভাবে প্রেষণে রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার এখতিয়ারের বাইরে। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন।

পেষনে আসা মোহাম্মদ ফোরকানের মোবাইলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মোহাম্মদ ফোরকানের ইতিহোস থেকে যানা যায় তিনি যেভাবে ১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আছেন। চট্টগ্রাম বাঁশখালীর পশ্চিম পুইছড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ ফোরকানকে ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে শূন্য পদে নিয়োগ দেন। তিন বছর এ পদে চাকরি করার পর চট্টগ্রামের এক প্রভাবশালী বিএমএ নেতার আশীর্বাদে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিজ বেতনে প্রেষণে জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষক পদে পদায়ন হয়। তারপর তাঁকে তিন দফায় জেনারেল হাসপাতাল থেকে বদলি করা হলেও প্রতিবারই তিনি সেই বদলি বাতিল কিংবা স্থগিত করান। ওই চিকিৎসক নেতার আশীর্বাদ ও প্রশ্রয়ে ১০ বছর ধরে তিনি জেনারেল হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির চক্রের মূলহোতা হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে হাসপাতালের খন্দকার রাশেদুল আলমসহ নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, আমিরুন্নেছা বেগম নামে এক নারীকে অপহরণের অভিযোগও রয়েছে।

মোহাম্মদ ফোরকানের বিরুদ্ধে দুটি তদন্ত শেষ হয়নি ৩ বছরেও – চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রেষনে আসা হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফোরকানের বিরুদ্ধে হাসপাতালের ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত, টেন্ডারে ক্ষমতার অপব্যবহার, এমএসআর সামগ্রী, পথ্য, স্টেশনারি টেন্ডারে অনিয়ম ও দুর্নীতির ৩৭ অভিযোগ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা পড়ে। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল দুদক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে ফোরকানের বিরুদ্ধে ৩৭টি অভিযোগের খসড়া দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর পরপর দুটি তদন্ত কমিটি করেন। সেই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দিতে হলা হয়। কিন্তু প্রভাবশালী এক বিএমএ নেতা নেপথ্যে থেকে ফোরকানকে বাঁচাতে প্রভাব বিস্তার করায় ১৫ দিনের সেই তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। কমিটির সদস্য সচিব প্রণব কুমার হাওলাদার বলেন, আমি বদলি হওয়ার পর ফাইল চমেকের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। তাঁরা পরে কী করেছেন আমি বলতে পারব না।

ক্ষমতার জোরে মাত্র ১৩ দিনে স্থগিত হয়ে যায় চাঁদপুরে বদলির আদেশ-অভিযোগের পাহাড় জমায় ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ হাসপাতালে বদলি করা হয় ফোরকানকে। কিন্তু তিনি ফরিদগঞ্জে যাননি। প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতাকে দিয়ে তদবির করিয়ে তাঁর বদলির আদেশ মাত্র ১৩ দিনের মাথায় স্থগিত করেন। এর আগে ২০১৫ সালে তাঁকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে লোহাগাড়া উপজেলা হাসপাতালে বদলি করা হলেও সেখানেও যোগদান করেননি। সেই আদেশও বাতিল করিয়ে থেকে যান জেনারেল হাসপাতালে।

এদিকে মোহাম্মদ ফোরকানের বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত দুর্নিতি দমন কমিশনেও কোন মামলা হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা হবে বলে জানান শংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *