বার্তা প্রতিনিধি: বিগত ৬২ বছর ধরে প্রতারণা পৃথিবীর সবচেয়ে আপন, সুন্দর ও মুধময় সম্পর্কের একটি হলো দাম্পত্য জীবন। নানা ত্যাগ-তিতিক্ষা, ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দুটি মানুষ এক সঙ্গে পথ চলে। ভাগ করে নেয় সুখ-দুঃখ। কিন্তু সেখানে যদি থাকে প্রতারণা, তাহলে তো মনটাই মরে যায়। অর্থহীন হয়ে পড়ে জীবন। বিভীষিকায় ভরে ওঠে পৃথিবী। তখন বেঁচে থাকাই যেন অনর্থক হয়ে যায়। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের ওয়াটারবারি এলাকায়। সেখানকার ডরোথি নামের ৮০ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে কথা না বলে মূক-বধিরের অভিনয় করে আসছিলেন তার স্বামী ৮৪ বছর বয়সী ব্যারি ডাওসন। তিনি শুধু স্ত্রীর সঙ্গেই নয়, তার সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও একই কাজ করেছেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে এক দুইদিন নয়, টানা ৬২ বছর ধরে। অবশেষে ধরা পড়ে গেছে প্রতারণাটি। ইউটিউব চ্যানেলে যখন ডারথি দেখলেন তার স্বামী একটি চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের জন্য গান গাচ্ছিলেন, তখন নিজের চোখকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছিল কোথাও ভুল হচ্ছে। তাই বারবার ভিডিওটি দেখে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এ কি! তিনি যাকে ৬২ বছর ধরে মূক-বধির হিসেবে জানেন, তিনি একজন্য দিব্যি সুস্থ মানুষ! আর তখনই তার মনটা ভেঙে যায়। সিদ্ধান্ত নেন এই প্রতারকের সঙ্গে আর নয়। যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছেন ডরোথি।
সংবাদ মাধ্যমকে ডরোথি বলেন, স্বামীকে তিনি বোবা ও বধিরই ভাবতেন। তাই বলে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে তিনি ইশারার সাহায্যে কথা বলার ভাষা শিখেছিলেন। সেই ভাষা শিখতে তার দুই বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। যখন তিনি ইশারায় কথা বলার ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করে ফেলেছিলেন, তখনই তার স্বামী ইশারায় জবাব দেয়া বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ব্যারি এত বছর ধরে বাড়িতে বোবা হয়ে যাওয়ার প্রতারণা করেছেন। অথচ একটিবারের জন্য আমি সেটা বুঝতে পারিনি। সম্প্রতি ইউটিউবে তার একটা ভিডিও আমার চোখে পড়ে। যেখানে সে একটা বারে চ্যারিটির জন্য গান গাইছিল। ওটা দেখার পর আমার সব ভুল ভেঙে যায়। এই দম্পতির ৬টি সন্তান রয়েছে। শুধু স্ত্রীই নন, তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি সবাই এতদিন ব্যারিকে বোবাই মনে করত। স্বামীর এমন অমানবিক আচরণ কিছুতেই মানতে পারছেন না ডরোথি। বিবাহবিচ্ছেদের পাশাপাশি এ কারণে এতদিন ধরে এভাবে তার ওপর মানসিক অত্যাচার ও চাপ তৈরি করার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন তিনি। তবে তার এ দাবি মানতে নারাজ ব্যারি ডাওসনের আইনজীবী রবার্ট সানচেজ। তিনি দাবি করেন, স্ত্রীকে ঠকানোর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না তার মক্কেলের। তাহলে তাদের সংসার এত বছর টিকতে পারত না। ওই আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেল শান্ত প্রকৃতির। বেশি কথা বলতে পছন্দ করেন না। অন্যদিকে তার স্ত্রী তাকে খুবই বিরক্ত করতেন। এ কারণে বাধ্য হয়েই তিনি বোবা সেজে ছিলেন সংসার বাঁচানোর জন্য। আদালতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণের মামলাটি বিচারধীন আছে।
সূত্র : ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি