Saturday, May 4বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

এবার ক্যাসিনো নয় চাঁদাবাজদের তালিকায় যুবলীগ নেতা লিটু

বার্তা প্রতিনিধি: এবার চাঁদাবাজদের তালিকায় উঠে এসেছে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি সাব্বির আলম লিটুরনাম। জানা যায় রাজধানীর ফার্মগেট ও কাওরানবাজারে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি সাব্বির আলম লিটুর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে চাঁদাচক্রের বলয়। খলারিত্ব, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপকর্মের নিয়ন্ত্রক এ চক্র। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন।

নতুন আইনে রোগীর কাছ থেকে ফি নিতে হবে রশিদের মাধ্যমে

লিটুর নেত্রিত্বে চলে ফুটপাত, লেগুনা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে তারা প্রতিদিন তুলছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ধরনের অপকর্ম চললেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে বলে ভুক্তভোগীরে অভিযোগ।

এদিকে যুবলীগ নেতা সাব্বির আলম লিটু ছিলেন পিচ্চি হান্নানের সহযোগী। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ফার্মগেট ফুলঝুরি রেস্তোরাঁয় চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে আনোয়ার পাশা লিটনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা লিটুকেও খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে মিরপুরের কাজীপাড়া কাজী কমিউনিটি সেন্টারে একটি বউভাত অনুষ্ঠানে লিটুকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তখন লিটু নিজেকে আড়াল করতে চিকিৎসার নামে বিদেশ চলে যান। ৩ বছর বিদেশে আত্মগোপনে থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে। ২০১২ সালে যুবলীগ উত্তরের সম্মেলনে লিটু সহ-সভাপতির পদ পেয়ে আবার সক্রিয় উঠে। দীর্ঘদিন ধরে তার নেতৃত্বে চলছে ফার্মগেট ও কাওরানবাজারে চাঁদাবাজি-ছিনতাইসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

সূত্র জানায়, লিটুর ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জয়নাল আবেীন জনা। এছাড়া চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে রয়েছেন ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার মোল্লা, হারুন, তাজুল ইসলাম, স্বপন, ইমরুল, আক্তার হুসেন ওরফে পাতা আক্তার, মজিবুর ওরফে পেটকা মজিবুর, খালেক, তাজুল ইসলাম সোহেল, মতিন মির্জা, ওসমান গণি শেখ, জসিম ওরফে জামাই জসিম, নূর আলম ওরফে ড্রাইভার নূর আলম, ইমন ওরফে ইয়াবা ইমন, মতিন পাটোয়ারি, শাকিল রান, নাজির আহমেদ, জীবন ওরফে ছিনতাইকারী জীবন, জসিম পাটোয়ারি ওরফে নাডা জসিম, বাবু ওরফে মুরগি বাবু, মতি মৃধা ওরফে ল্যাংড়া মতি।

সূত্রে আরো জানা গেছে, লিটুর চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে নিউমার্কেট-আজিমপুরগামী টেম্পো থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলেন রানা ও কাইয়ুম। তারা প্রতি টেম্পো থেকে ৪শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। ফার্মগেটের সেজান পয়েন্ট থেকে কুতুববাগ পর্যন্ত ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তুলেন আনোয়ার মোল্লা। আনন্দ সিনেমা হলে থেকে আরএস টাওয়ার পর্যন্ত ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলেন স্বপন ও তার এক বন্ধু। আরএস টাওয়ার থেকে পান্থপথ পর্যন্ত চাঁদা তোলার দায়িত্বে ইমরুল। এছাড়া জসিম পাটোয়ারী ওরফে কানা জসিম ওরফে নাডা জসিম ও বাবা সোহেলসহ তারে সহযোগীরা কাওরানবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন খানের কাছে মাসিক ৩০ হাজার টাকা এবং এককালীন ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মো. জসিম উদ্দিন খানকে তুলে নিয়ে তার দুই পা ভেঙ্গে ফেলে এবং প্রাণনাশের চেষ্টা করে। এছাড়া কাওরানবাজারের আলু মার্কেটের দোতলায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীরের কাছে মাসিক ২০ হাজার এবং এককালীন ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জাহাঙ্গীরকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে হাইওয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে।

একাধিক সূত্র জানায়, কাওরানবাজার (কিচেন মার্কেট, বাপেক্স, পরিবার পরিকল্পনা ভবন, কাব্যকস মার্কেট, পেট্টোবাংলা) এর সামনে পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে পিকআপ প্রতি এক হাজার টাকা করে ৩৫০টি পিকআপ থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে মাসুদ। চাঁদা না দিলে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় এবং পিকআপ ড্রাইভারদের এলোপাতাড়ি মারধর করে।

শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজ বাহিনীসোনারগাঁও সিগন্যালের টিআই এবং সার্জেন্টকে দিয়ে গাড়ির কাগজ নিয়ে ড্রাইভারদের অবৈধভাবে জরিমানা করা হয় বলে ভুক্তভোগী ড্রাইভার মো. রবিউল ও মো. রাসেল জানান। বাপেক্স ভবনের সরকারি মাইক্রোবাস থেকে প্রতি মাসে পার্কিংয়ের নামে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলে মতিন মৃধার সহযোগী এমদাদ ও জীবন। প্রগতি টাওয়ারের কার পার্কিং থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই টাকা মতিন মৃধার নির্দেশে কানা জসিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম খুলশী থানা এরিয়া থেকে প্রতারক চক্রের তিন সদস্য আটক


এদিকে পেট্রোবাংলা ভবন, বিটিএমসি ভবন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ভবন, বিআরডিবি ভবন, বাপেক্স ভবন, ঢাকা ওয়াসা ভবন, মৎস্য ভবন, জালালাবাদ ভবন, এইচআরসি ভবন থেকে ৬০টি স্টাফ বাস থেকে গাড়িপ্রতি দুইশ’ টাকা করে প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা করে মাসে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মতিন মৃধার নির্দেশে কানা জসিম, কিলার সোহেল, বাচ্চু বেপারি, আউয়াল, পাডা মামুন, নাজির, রহমান, মাল্টিপারপাস মামুন, ভুট্টো, সোলেমান মুন্সি, পিচ্চি কবির, পারভেজ, শাকিল, বাবু আদায় করে। প্রতিদিন সকালে মতিন মৃধার নির্দেশে কাওরানবাজারের ফুটপাতের বিভিন্ন কাঁচামাল আড়ৎ থেকে কানা জসিম, কিলার সোহেল, খোরশেদ, বাচ্চু বেপারি, আউয়াল, সোলেমান মুন্সি, নাজির, এমদাদ, লিটন, মাসুদ, মহসিন হোসেন ভুট্টো, রহমান এক লাখ টাকা করে মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। যমুনা ভবনের ক্ষিণ পাশ থেকে হাতিরঝিলের মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে প্রতিনি ১৫ হাজার টাকা করে মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। চাঁদা আদায় করে হায়দার, কিলার সোহেল, কানা জসিম ও নাজির। পেট্রোবাংলার সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে মো. লাদেন, ফয়সাল হাজী, ফজলুল ও সানাউল্লাহ’র নেতৃত্বে মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। কাওরানবাজারের চায়ের দোকান, ফল দোকান, গেঞ্জি দোকান, ডাব দোকান, সবজির দোকানসহ ফুটপাতের ভাসমান সকল দোকান থেকে মাসে ২৭ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মতিন মৃধা নিজেকে তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দাবি করে এলেও তিনি শ্রমিক লীগের কেউ নন। লিটুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে মতিন মৃধার নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন সন্ত্রাসী কাওরানবাজার থেকে কার পার্কিংয়ের নামে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে থাকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি সাব্বির আলম লিটু মুঠোফোনে মানবকণ্ঠকে জানান, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রশাসনিকভাবে খবর নিয়ে দেখেন বিষয়টা বানোয়াট।

বহুল আলোচিত ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে মারার অপরাধে ১৬ জনের ফাঁসি

জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। কারো অভিযোগ থাকলে পাঠিয়ে দেন। মামলা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: মানবকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *