Thursday, May 9বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্টের কৌশল

দীর্ঘ শাসন ব্যবস্থা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ আরো বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোও আমলে নিয়ে কৌশল প্রণয়ন করেছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তর (ইউএসএআইডি)।
এছাড়া গত বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশবিষয়ক সমন্বিত কৌশলপত্রে বাংলাদেশে তাদের লক্ষ্য ও ঝুঁকিগুলো উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে দেশটি।

আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্টের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিক ব্যক্তিদের জন্য হুমকি হতে পারে তবুও স্বাগত জানালো সরকার

তবে এ অবস্থায় গত ২০ মে ইউএসএআইডি বাংলাদেশে সে দেশের উন্নয়ন সহযোগিতা কৌশলপত্র সংশোধন করেছে। ২০২০ সালে করা কৌশলপত্রের মেয়াদ ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এবার সংশোধনের সময় এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত বছর এপ্রিলে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কৌশলপত্রে যে বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সেগুলো হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার জোরদার করা, শ্রমমান, ব্যবসা পরিবেশ, জলবায়ু ও মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উন্নতি করা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ও বিশ্বে নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা এবং তৃতীয় দেশে স্থানান্তর।
আগের কৌশলপত্রে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি বাংলাদেশ আরো অঙ্গীকারবদ্ধ হবে। অসাম্য মোকাবেলায় অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশীদার হবে। এবারের সংশোধিত কৌশলপত্রে দেশটির লক্ষ্য পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
সংশোধিত কৌশলপত্রে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বাংলাদেশ হবে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদার।
আরো পড়ুন:গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীর নির্যাতনে স্ত্রীর মৃত্যু হত্যা মামলায় কারাগারে

যুক্তরাষ্ট্রের চোখে তিন কারণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ
সংশোধিত কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার তিনটি কারণ আছে। প্রথমটি হলো ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সম্পর্ক আছে।
তৃতীয়ত, কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে বাংলাদেশ।
সরকার নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
যুক্তরাষ্ট্রের সংশোধিত কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর একটি দলের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সরকার গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখার কথা বললেও ১৪ বছরে ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থা’য় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। বিরোধী দল, এনজিও, গণমাধ্যমের সুযোগ কমেছে। শাসন কাঠামো দুর্বল হয়েছে, দুর্নীতি বেড়েছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের ফলে নাগরিক সমাজ সংগঠন (সিএসও) ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে।
গত এক দশকে শ্রম অধিকার ও সংগঠন করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যে অগ্রগতি হয়েছিল নাগরিক সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় এর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
গুরুত্ব পেয়েছে আগামী নির্বাচন
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বৃহত্তর পরিসরে গণতন্ত্র নাকি একনায়কতন্ত্রের দিকে যাবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, সহনশীলতা ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালানো অপরিহার্য হবে। আগামী নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে সংস্কার চায় যুক্তরাষ্ট্র।

আরো পড়ুন: অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এবং বৈশম্মে ছেড়ে গেছে দেশ, ওসমান গনী শাকিল

কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মৌলিক নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকারে বিধি-নিষেধসহ মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে পুনর্জীবিত করতে তারা নাগরিক সমাজ, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠী, নারী, শ্রমিক ও তৃণমূলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কর্মীদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখবে।
কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ২০২১ সালে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের মূল উপাদান।
কৌশলপত্রে বলা হয়, সহনশীল মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান ও শাসনব্যবস্থার প্রতি নাগরিকদের আস্থা থাকলে নির্বাচনকালীন ও পরবর্তী সময়েও রাজনৈতিক অবিশ্বাস কমতে পারে এবং সার্বিকভাবে দেশ স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় সমমনা বিদেশি মিশনগুলোকে নিয়ে কাজ করবে বলে কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই কৌশলপত্রে বাংলাদেশে ‘লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুইর, ইন্টারসেক্সসহ অন্যদের (এলজিবিটিআই প্লাস)’ বিষয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি
কৌশলপত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে বলা হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী আচরণ বৃদ্ধির কারণে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হওয়া অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়তে পারে। এতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে সক্ষমতায় এর প্রভাব পড়বে।
আর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে এ দেশে মার্কিন প্রভাব কমবে। এটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিতেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হতে পারে।
কৌশলপত্রে এও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় পালাবদল হলে এ কর্মসূচির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার দুর্বল হতে পারে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দাতাদের অর্থায়ন কমবে। সে সময় বাংলাদেশে ইউএসএআইডির আরো সমন্বিত ও কৌশলগত প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে।
শ্রমমান
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কিছু প্রতিযোগীর প্রশ্নবিদ্ধ ও অস্বচ্ছ ব্যাবসায়িক চর্চাসহ বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও মার্কিন কম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাইরে বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ বাজার ও বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে দেখছে।
এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে তার নিজস্ব জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রূপরেখায় নির্দেশিত শ্রম সংস্কার, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও শ্রম অধিকার অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে বলে কৌশলপত্রে বলা হয়।
ইন্দো-প্যাসিফিকে ভূমিকা
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, তদন্তভিত্তিক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসবিষয়ক মামলার বিচারে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সীমান্ত ও জলসীমার নিরাপত্তা, সহিংস উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সদস্য সংগ্রহ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলে কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়।
রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা সংকট যাতে বাংলাদেশ বা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে না পারে তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে কৌশলপত্রে। মিয়ানমারে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
দৃষ্টিতে চীন
ইউএসএআইডির সংশোধিত কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর চীনের প্রভাব কমাতে
ইউএসএআইডি ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে চায়। চীন এখন বাংলাদেশে বড় ব্যাবসায়িক অংশীদার এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উৎস। চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগ চুক্তিগুলোর বিষয়ে কৌশলপত্রে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *