বার্তা প্রতিনিধি: স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডিলার হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছেন যেসব প্রতিষ্ঠান শুধু তারাই স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে স্বর্ণ আমদানি ও ব্যবসা খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে সরকার এ বিষয়ে আলাদা নীতিমালা করে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানির জন্য ডিলারের লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
বাংলাদেশের স্বর্ণ আমদানির ডিলার হওয়ার জন্য মানদণ্ডও ঠিক করে দেওয়া হয় নীতিমালায়। সে মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ১৯টি স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এ লাইসেন্স নিয়েছে। ফলে এখন থেকে অন্য কেউ নতুন ডিলারশিপ না নেওয়া পর্যন্ত এই ২০ প্রতিষ্ঠানই স্বর্ণ আমদানি করার সুযোগ পাবে।
এই নিতিমালার আগে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ ছিল। কিন্তু ওই গাইডলাইনে কে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে আর কে পারবে না, তা স্পষ্ট ছিল না। ফলে যে কেউ আমদানি করতে পারত বা আমদানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করতে পারত। এখন যাতে শুধু নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করল।
অনেকের আমদানি করা স্বর্ণ যাচাই করার পদ্ধতি না থাকায় ডিলার লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন পাচ্ছে না। অনেকে আমদানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন। তাদের আমদানির অনুমোদনের পরিবর্তে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আমদানি করা স্বর্ণ সরবরাহকারী প্রান্ত ও দেশে আসার পর মান যাচাইয়ের পদ্ধতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ১১ কেজি এবং অরোসা গোল্ড করপোরেশন ১৫ কেজি স্বর্ণ আমদানি করেছে গত জুন মাসে ডিলার হিসেবে । কিন্তু দুবাই থেকে আমদানি করা এ স্বর্ণ জাহাজীকরণের আগে ও বাংলাদেশে খালাসের পরের মান যাচাই সম্ভব হয়নি। এই মান যাচাইয়ের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মানে সামান্য হেরফের হলেই টাকার হিসাব অনেক পাল্টে যায়। যেমন ২৪, ২২ ও ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দামের অনেক ফারাক। হীরার বেলায় তা আরও বেশি। এ জন্য যে ধাতু আমদানি করা হচ্ছে, তার মান বিষয়ে রপ্তানিকারক দেশ থেকে একটা মান সনদ থাকা উচিত। পরে দেশে আসার পর যদি দেখা যায়, একই মানের ধাতু এসেছে তাহলে সমস্যা থাকবে না। এক ধরনের মানের ধাতুর জন্য এলসি খুলে অন্য ধরনের ধাতু এলে তাতে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এ জন্য মান যাচাই পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া জরুরি। এটা হওয়ার পরই স্বর্ণসহ অন্যান্য ধাতু আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।
এই নিতিমালার বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, এই সার্কুলার স্বর্ণ ব্যবসায় উপকার বা অপকার কোনোটাই করবে না। কারণ আগের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন আইনের আওতায় কোনো আমদানি হয়নি। এখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলাররা আমদানি করতে গিয়ে আমদানি করতে পারছেন না। এটাই মূল সমস্যা।
আগেই মান যাচাইয়ের মতামতে বলা হচ্ছে, আমদানি করা স্বর্ণের মান যাচাইয়ের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি। স্বর্ণের নামে কী আসছে সেটা যাচাই করতে হবে। ব্যবসায়ীরাও মনে করেন, যাচাই করা জরুরি। ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের মান যাচাইয়ের বিরুদ্ধে নন; তবে তা ব্যবসা আটকে রেখে করা ঠিক হবে না। তবে এই পর্যন্ত বিশ্ব করোনা পরিস্থিতে ও স্বর্ণের দাম বাড়ছেই।