Saturday, May 4বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

৭৩০ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুুক্ত হলেও এখনো ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী বেতন পাননি

বার্তা প্রতিনিধি: অনেক আন্দোলন ও দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে সারাদেশের দুই হাজার ৭৩০ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুুক্ত ঘোষণা করা হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনও সরকারি বেতন-ভাতা পাননি। গত অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্তির গেজেট জারি করার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাইয়ের নামেই পেরিয়ে গেছে সাড়ে তিন মাস। আগামী সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এ যাচাই-বাছাই শেষ করবে। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল- এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের গত জুলাই (২০১৮) থেকেই এমপিওভুক্তির আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে আরও ৪-৫ মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে সংশ্নিষ্ট শিক্ষকরা মনে করছেন। তাদের আশঙ্কা, এতে এ অর্থবছর শেষ হয়ে যেতে পারে। তাতে এমপিওভুক্তির খাতে বরাদ্দ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত চলে যাবে। এতে বঞ্চিত হবেন সারাদেশের সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী।

সাড়ে ৯ বছর পর গত অক্টোবরে সরকার দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার টানা তিনটি সরকারের আমলে এটি দ্বিতীয়বারের মতো বড় আকারের এমপিওভুক্তি; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করার রেকর্ড। এর আগে ২০১০ সালে একসঙ্গে এক হাজার ৬২৬টি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিও দেওয়া হয়। তবে এমপিওভুক্ত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনও সরকারি বেতন হাতে পাননি।

জানা গেছে, মাউশি থেকে চূড়ান্ত যাচাই হয়ে আসা কাগজপত্র পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আগামী সপ্তাহে সংশোধিত গেজেট জারি করা হতে পারে। এরপর সেই গেজেট মাউশিতে ফের পাঠানো হবে। গেজেটে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে ‘কোড নম্বর’ দেবে মাউশি। প্রতি বেজোড় মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নতুন কোড দেওয়া হয়। এরপর এসব প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্নভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে। সে আবেদন নিষ্পত্তি হতে আরও সময় লাগবে।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মোমিনুর রশীদ আমিন বুধবার তার কার্যালয়ে সমকালকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তারা সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা কার্যকর করা হবে। তারা আশা করছেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

তবে তিনি এ কথা বললেও মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনলাইনে, নাকি ম্যানুয়ালি প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত করা হবে সেই সিদ্ধান্তই এখনও হয়নি। বর্তমান নিয়মে অনলাইনে আবেদন করা হলে, শিক্ষকদের গত জুলাই থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বর্তমান সফটওয়্যারে বকেয়া বেতন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশীদ আমিন বলেন, আমরা প্রয়োজনে সফটওয়্যারে পরিবর্তন আনব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব কোড যদি সৃষ্টি করা সম্ভব না হয়, তাহলে মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের অঙ্ক নির্ধারণ করা কঠিন হবে। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে এ খাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে আরও টার শতাধিক কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এই অর্থে আরও সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। তার জন্য নীতিমালা সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে এখন। তবে মূল কাজ গেজেট জারি এখনও শেষ না হওয়ায় সবকিছুতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল সমকালকে বলেন, ‘আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক তথ্য, পাসের হার, শিক্ষার্থী সংখ্যা- সবকিছু যাচাই করতে হয়েছে। এ কাজে সাড়ে তিন মাস খুব বেশি সময় নয়। বাছাই শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ বাছাইকালে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসত্য তথ্য সরবরাহের প্রমাণ মিলেছে বলেও মহাপরিচালক জানান। তবে এর সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
সূত্র: সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *