Monday, April 29বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

সো বিপ্লবের গান গাই: এ্টি যেন হয় স্বাধীনতার অঙ্গিকার

বার্তা প্রতিনিধি: এসো বিপ্লবের গান গাই: এ্টি যেন হয় স্বাধীনতার অঙ্গিকার। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার ঘাঘোর ও মধুমতি বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ লুত্ফর রহমান গোপালগঞ্জ আদালতে সেরেস্তাদারের চাকরি করতেন। মাতার নাম সায়েরা খাতুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ইরাক থেকে আগত দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর। বঙ্গবন্ধুর দাদার নাম শেখ আবদুল হামিদ। তিনি ছিলেন শেখ জাকিরের সন্তান এবং দরবেশ শেখ আউয়ালের কয়েক জন্মের উত্তরাধিকারী।

প্রথাগত অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল চিরাচরিত স্বভাব। স্বাধীনতার দুর্মর আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর হূদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বাঙালি জাতিকে তিনিই মুক্তির স্বাদ আস্বাদনে উন্মুখ করে তুলেছেন। তার মতে, ‘সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।’ বিপ্লবকে তিনি বেছে নিয়েছেন সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। তবে তার বিপ্লব ছিল কল্যাণমুখী, সার্বজনীন। তাঁর বিপ্লব ছিল মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে। তাঁর বিপ্লব ছিল গণমানুষের শক্তি ও স্বপ্নকে আধার করে। আর তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলার নিজস্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে প্রাণ দিয়ে সুরক্ষা করার পক্ষে। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, ‘…মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুপ্ত শক্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।’

ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ছাড়া কোনো জাতির পক্ষেই উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কথা বলেছেন তখন গোটা বিশ্বের অন্য সব অঞ্চলের ভাষা ও সাহিত্যের সমান সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। কারণ তিনি মনে করতেন, আঞ্চলিক পরিবেশ ও জনগণের ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতেই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে পারে আর তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘ধর্মের নামে ভাড়াটিয়া সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া মানুষের আত্মার স্পন্দনকে পিষে মারারই শামিল।’

অবিভক্ত পাকিস্তানে ৪০ ব্যক্তি রবীন্দ্র সংগীতের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করেছিল। একটি বিশেষ মহল তথাকথিত ইসলামের নামে কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতার শব্দ বদলিয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলকে বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্বটা থাকে কোথায়?’ কী নির্জলা প্রশ্ন! আমার বাঙালি অস্তিত্বের শিকড়ে নাড়া দিয়ে যায়।

এই প্রশ্ন এখনো আমাদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। আমার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি স্বাধীন কিন্তু আমরা কি সত্যি বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি? বাঙালির বিয়ে-বাড়ি, জন্মদিন আর উত্সবগুলোতে কতখানি বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা আমরা দেখতে পাই? আমাদের মন-মানসিকতায় বিজাতীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বসত, বাঙালিয়ানা থেকে আমাদের ক্রমাগত দূরে সরিয়ে নিচ্ছে অথচ এই আশঙ্কার কথা ১৯৭১ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন-‘এখন যে কেউ স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে এবং নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা করতে পারেন। যদিও জনগণ প্রাথমিকভাবে বিজয়ী হয়েছে, তবুও বিপদের আশঙ্কা এখনো দূরীভূত হয়নি। পথ এখনো কণ্ঠকাকীর্ণ এবং অনিশ্চিত। সব বিপদ ও অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করার জন্য আমি কবি-সাহিত্যিকদের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সুরক্ষা করার দায়িত্ব শুধু কবি-সাহিত্যিকদের নয়। এই দায়িত্ব বাঙালি মাত্রই আমাদের সবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপ্লবের কথা বলে গেছেন। আজ খুব বেশি দরকার বাঙালি শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। আমরা পথ হারাতে চাই না। আমরা আমাদের বাঙালি শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যকে ধারণ, লালন-পালন করতে চাই। আবারো ভালোবাসতে চাই বাংলা শিল্পকে, বাংলা সাহিত্যকে আর বুকের ভেতর আঁকড়ে ধরতে চাই বাংলা সংস্কৃতিকে। হোক তবে আরেকটি বিপ্লব! জ্বলুক তবে কোটি মশাল! বিপ্লবের গানে মুখরিত হোক বাংলার আকাশ-বাতাস-মাটি! স্বাধীনতা দিবসে এটাই তবে হোক আমাদের আগামীর অঙ্গীকার!
– লেখক: আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক

সূত্র: মানবকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *