Sunday, April 28বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

ভালবাসার রঙ্গে রাংঙিল বসন্তের রং

ঝরনা-বার্তা প্রতিনিধি: তুমি হে বসন্ত ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে।’ একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন, অন্যদিকে ভালোবাসার রং- এই দুই মিলে প্রকৃতির প্রতিটি পরতে পরতে আজ ছড়িয়ে পড়েছে এক মোহময় সুবাস, যার আবেশে প্রত্যেক মানুষের মনে বেজে উঠেছে ভালোবাসার বারতা।
এতদিন পহেলা ফাল্গুন মানে বসন্তবরণের প্রথম দিন উদযাপিত হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। হলুদ পোশাকে, গাঁদা ফুল দিয়ে বাঙালি বরণ করে নেয় বসন্তের প্রথম দিনটি। তবে পরদিনই রং বদলে যেত। কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারি থাকে ভালোবাসা দিবস। ভ্যালেন্টাইনস ডে। এ দিন শিশু থেকে যুবা- সবার হাতে হাতে লাল গোলাপ। পোশাকেও থাকে লাল-নীলের প্রাধান্য। প্রকৃতির কোলে নেমে আসে অনাবিল আনন্দ। তবে এবারই প্রথম বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। আজ তাই বসন্তের রং ভালোবাসার রঙে মিশে হবে একাকার। এ জন্যই প্রকৃতিও বুঝি বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার আবেগমাখা সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে।
ফাগুনের আগুন রাঙানো আজকের ভোরের আলোয় মিশে গেছে নিভৃত হৃদয়ের বার্তা। আজ আকাশে-বাতাসে ভাসছে অনাদিকালের সেই আকুল আকাঙ্ক্ষা- ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন/খুঁজি তারে আমি আপনায়/আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি/আমারি পিয়াসী বাসনায়।’ কবি নজরুলের এই আবেগমথিত অনুভূতি আজ কোটি কোটি মানুষের অনুভূতি। হৃদয়ের দশ দিগন্তে আজ আলোর নাচন। সেই আলোয় দুলে দুলে উঠছে আত্মার গহিনে লুকানো ভালোবাসার কথা। গোপন প্রিয়াকে আজ অকপটে বলা যায়- ‘ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসি।’
‘ভালোবাসা’- শব্দের গভীরতা আর ব্যাপকতা সীমাহীন। ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়/যুদ্ধ আসে, ভালোবেসে/মায়ের ছেলেরা চলে যায়’- কী প্রগাঢ় শক্তি আর বিষাদ এই ভালোবাসার! গ্রিক পুরাণের হেক্টর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মনুষ্যত্বের প্রতি ভালোবাসার কারণে দাঁড়িয়ে ছিলেন দানবের মুখোমুখি।
যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। অনাদিকাল থেকে হৃদয়ের প্রগাঢ় আকাঙ্ক্ষা আর মমতা দিয়ে পরস্পরকে কাছে টেনেছে তারা। আবেগমথিত কণ্ঠে একে অন্যকে বলেছে- ‘জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি/তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি/যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি/যতো জানি ততো জানি নে।’
রোমান বিশ্বাসমতে, আজ প্রেমের দেবতা কিউপিড ‘প্রেমবাণ’ বা শর বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অনুরাগতাড়িত প্রেমিক-হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। আজ হৃদয় গহিনে তারাপুঞ্জের মতো ফুটবে চণ্ডীদাসের অনাদিকালের সুর- ‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া…।’ গল্প, কবিতা, গান আর উপন্যাসে, আখ্যানে-উপাখ্যানে আর মানুষের মুখে মুখে যুগ-যুগান্তর ধরে ভালোবাসার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যা খুঁজে ফিরেছে মানুষ। কেননা, ভালোবাসাই ধ্রুব।
ভালোবাসা দিবস কবে থেকে, কীভাবে শুরু হয়েছে- ইতিহাসের পাতায় তা নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। এগুলোর মধ্যে বহুল প্রচলিত কাহিনি হচ্ছে- রোমান পাদ্রি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুদণ্ড দেন রোমের দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি কারাগারে বন্দি থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন চিকিৎসা করে জেলারের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এভাবে মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। মারা যাওয়ার আগে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান- ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। অনেকে মনে করেন, এই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
আরও একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুদ্ধের জন্য দক্ষ সৈনিক সংগ্রহের জন্য রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস যুবকদের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু তরুণ ভ্যালেন্টাইন নিয়ম ভঙ্গ করে প্রেম ও বিয়ে করেন। ফলে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।
এদিকে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে গিয়ে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীরা প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কার্ড, শোপিসসহ নানা উপহারসামগ্রী কিনছেন। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছে। এবার বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস এক দিনে হওয়ায় ডিজাইনার পোশাকের রঙেও বৈচিত্র্য এনেছেন। এ ছাড়া ব্যতিক্রমী এ দিনটি উদযাপনে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নাম করা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বিশেষ লাঞ্চ ও ক্যান্ডললাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে। টেলিভিশনে আজ প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। বিভিন্ন মোবাইলফোন কোম্পানির উদ্যোগে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ব্যস্ত রাজধানীর ফুল ব্যবসায়ীরা :প্রতিবছরের মতো এবারও পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের ফুল ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। উৎসবমুখর এ সময়ে বেড়ে যায় ফুল কেনাবেচা। তবে এবার দুই উৎসব এক দিনে হওয়ায়, ফুলবাণিজ্য কিছুটা কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর দুই উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুলবাণিজ্য হতো। কিন্তু এ বছর তা কমে সাড়ে তিন থেকে ৪ কোটিতে নেমে আসতে পারে।
জানা যায়, শাহবাগে ৫০টির মতো ফুলের দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই গাঁদা আর লাল গোলাপের সমারোহ। উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি গোলাপের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা রাখা হতে পারে। আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হবে ৩০ টাকায়। আগারগাঁওয়ের পাইকারি ফুলের বাজারের চিত্রও অভিন্ন বলে এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান।
সুত্র: সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *