Thursday, September 19বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

গুপ্ত হত্যায় মারা গেলেন ফিলিস্তিনির রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া

সংগ্রামী নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর ‍যিনি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাল ধরে ছিলেন এবং এত হত্যার মধ্যেও তিনি ফিলিস্থিনিদেরকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অবশেষে তার ইতি টানলো ইসরাইলি বাহিনী। গত সোমবার ফিলিস্থিনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে মারা যান এই বর্ষিয়ান নেতা। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর হত্যার শিকার হওয়া হামাসের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তিনি।

ইসমাইল হানিয়া কাতারের নতুন প্রেসিডেন্টর এর সফথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কাতারে অবস্থান করেছিলেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগেই ইসরাইলি বাহিনি তাকে মিসাইল মেরে গুপ্ত হত্যা করে।

ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধের পর তার আগে ইসরায়েলের হামলায় হামাসের আরেক রাজনৈতিক নেতা সালেহ আল-আরুরি লেবাননে নিহত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল গাজা যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধানকে আরও ঝুঁকিতে ফেলেছে। এ হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়ংকর উস্কানি’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

৩১শে জুলাইয়ের আলজাজিরা ও পার্স টুডের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ইসমাইল হানিয়ার জীবনও ছিল লড়াকু। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা হয়েছেন। ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্ম তাঁর। গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে ১৯৮৭ সালে স্লাতক পাস করেন। ইসরায়েল অধিকৃত আশকেলন শহর থেকে তাঁর মা-বাবা আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বিশ্বের অদ্বিতীয় শক্তিধর ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের রাজনৈতিক তৎপরতার পর ১৯৯৭ সালে হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা হন হানিয়া। পরে হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন। এজন্য তাঁকে একাধিকবার কারাবাস করতে হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের কার্যালয়ের প্রধান নিযুক্ত হন। ইয়াসিনের সঙ্গে হানিয়ার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

বিশ্বের অন্যতম গভেষক কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক হাসান বারারি বলেন, ২০০৩ সালের পর নিজের অবস্থান, দৃঢ়তা ও গণমাধ্যমে উপস্থিতির কারণে হানিয়া হামাসের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আমৃত্যু তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাংবাদিক বেলেন ফার্নান্দেজ আলজাজিরায় লিখেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মূল আলোচকদের হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও আরও বিস্তৃত করার বার্তাকে স্পষ্ট করেছে।

তবে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় হানিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসরায়েল একাধিকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। ২০০৩ সালে হানিয়াকে বোমা মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

দেশকে একনিষ্ট করতে ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে হামাস রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। এতে হামাস নেতা হানিয়া ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৭ সালে হামাসের সরকার ভেঙে দেন। পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে অর্থ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় আব্বাস এ সিদ্ধান্ত নেন।

তারপর ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ৬ মে হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান নির্বাচিত হন এবং হামাস নেতা খালেদ মাশআলের জায়গায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

এদিকে গাজা উপত্যকাকে অবরোধ করে রাখার ‍ইসরায়েলি পদক্ষেপের কঠোর সমালোচক ছিলেন হানিয়া। ২০০৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এ অবরোধ আমাদের মনোবলকে ভাঙতে পারবে না। এ ছাড়া এটাকে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ সংঘাতেও রূপ দেওয়া যাবে না। এ সংঘাত ফিলিস্তিনের মানুষ ও যে গোষ্ঠীগুলো এ অবরোধ দিয়েছে, তাদের মধ্যে।

ইসরাইল ও গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত হানিয়ার পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তাঁর তিন ছেলে ও ৮০ বছর বয়সী বোনও আছেন। গত নভেম্বরে তাঁর এক নাতনি ও নাতি ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন। অবশেষে হানিয়া নিজেও গুপ্তহত্যার শিকার হলেন।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৈশ্বিক স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আল-শাবাকার ফিলিস্তিন নীতিবিষয়ক ফেলো ফাথি নিমার বলেন, ‘নিজ অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা একজন’ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা হানিয়াকে স্মরণ করবেন। গাজার শরণার্থী শিবিরে বড় হলেও ফিলিস্তিনের অনুভূতি ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি ফিলিস্তিনের ইতিহাসে অনেকগুলো মাইলফলকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।

এদিকে ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে কাতার সহ সারা বিশ্বে প্রতিবাদের জড় উঠেছে এছাড়া হানিয়ার মৃত্যুতে ইসলামী দলগুলো গভীর শোক জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *