Monday, September 16বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

জামায়াতে ইসলামী আবারো নিবন্ধন পিরে পাচ্ছে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সন্ত্রাসের রাজনীতির জন্য সরকারী নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে হাইকোটের রায় দিয়ে এটিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য হাইকোটে আপিল করা হয়। অতঃপর গত ৬ই আগষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরাজয় ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর আবারো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলটি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলাটি ফের শুনানির জন্য আবেদন করা হবে। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) এ আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটি থেকে নিযুক্ত আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। শনিবার (৩১ আগস্ট) এ তথ্য জানান তিনি।
এছাড়া আরো জানা যায়, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়।

আরো জানতে পড়ুন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শফথ নিলেন ডঃ ইউনুস

পরের বছর বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন। রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।

জামায়াত নিবন্ধনের রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন।
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

আরো জানতে পড়ুন :অন্তবর্তী সরকারের শফথের পর এবার দপ্তর বন্টন

আর নাম পরিবর্তনে ২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

উপরোক্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।

এছাড়া ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
এদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।

আরো জানতে পড়ুন : নুতন করে দপ্তর বন্টন উপদেষ্টা পরিষদ দাড়ালো ২১ জনে সরানো হলো স্বরাষ্ট উপদেষ্টাকে

অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা ছিল। আর সেসময় আইনজীবি অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনও অনুপস্থিত ছিলেন। এই ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। যেহেতু আমাদের আইনজীবীরা উপস্থিত নাই সেহেতু আদালত এটা ডিসমিস ফর ডিফল্ট করেছেন। অর্থাৎ আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে খারিজ করেছেন।

এছাড়া পরবর্তীতে আইনি সুযোগ কী আছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রেস্টোর (পুনরায় শুনানির জন্য) আবেদনের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে এটা আদালতের এখতিয়ার।

জামায়াতে ইসলামীর পেক্ষাপটে প্রথমে নাম পরিবর্তান ও পরে দল বাতিল আদালতের রায় পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার মাঝে আবারো ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসে। গত জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আওয়ামী সরকার ছাত্রদের দমনে শুরু করে গণহত্যা। এ অভিযোগে সরকার পতনের ডাক দেয় ছাত্র-জনতা। এর মধ্যে গত ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

আওয়ামী সরকারের দুর্ণিতি একগেয়েমী ও গণহত্যার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট তথা ৩৬শে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।

জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ ছিল নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করা। সেটা বাতিল হয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হলো আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি ফের শুনানির জন্য দরখাস্ত করা। এ নিবন্ধন মামলাটি পুনরুজ্জীবনের জন্য চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হবে।

তবে দীর্ঘদিন পর আবারো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *