Friday, March 29বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

পিছু হটার সুযোগ নেই রুশ বাহীনির বাজিতে জিততে চান পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা

বিশ্ব বার্তা: তৃত্বীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনগটায় ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ প্রথম সপ্তাহটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হয়নি। হামলা শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় নিজেদের ৪৯৮ জন সদস্য নিহতের কথা স্বীকার করেছে রুশ বাহিনী। যদিও ইউক্রেনের দাবি, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে সামগ্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতেও রুশ নেতা ইউক্রেন দখলে তার হাতে থাকা সব অস্ত্র কাজে লাগাচ্ছেন। এতে পুতিনের ২২ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ভয়ঙ্কর জুয়ায় জয়ী হওয়ার অপরিহার্যতা বাড়ছে।

বিশ্ব বিশ্লেষক মস্কোর কার্নেগি সেন্টারের আন্দ্রেই কোলেসনিকভ বলেন, ‘পুতিন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে তার বিরুদ্ধে রয়েছে পুরো বিশ্ব।’

হামলার শুরুর দিকে কিছু স্থানে পিছু হটলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। যুদ্ধ যত এগোবে দেশটির সমরাস্ত্র তত নির্ধারক ভূমিকায় চলে আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমা বর্ষণ, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ঠেকানো এবং দেশে যারা শান্তির পক্ষে ওকালতি করছেন তাদের শায়েস্তা করতে কতদূর যাবেন পুতিন। ক্রেমলিন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনেক দূর।

রাশিয়ার এই আত্বঘাতী যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের ফরেন রিলেশন্স-এর পলিসি ফেলো কাদ্রি লিক বলেন, ‘আমার মনে হয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। পুতিন সবকিছু বাজি ধরেছেন। তিনি যুদ্ধ কৌশল পাল্টাবেন না। কারণ এটা তার কাছে পরাজয় মনে হবে। পশ্চিমাদের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় পৌঁছার সময় সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে। আমি মনে করি দেশে পূর্ণ মাত্রায় স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত হবেন তিনি। সময় আসলে এমনটিই দেখা যেতে পারে।’

এছাড়া প্রহশনের নামে গত শনিবার দুটি শহরে সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষশনিবার দুটি শহরে সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ

তবে ইউক্রেনের হামলার বিষয়ে পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, রুশ নেতার জন্য ইউক্রেন অভিযান চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কূটনৈতিক মহলে সাধারণভাবে মনে করা হতো, আগামী দশক ক্ষমতায় থাকবেন পুতিন। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা চালানোর ফলে প্রশ্ন উঠেছে তিনি কী জনগণের ক্ষোভ বা রুশ অর্থনীতি মন্দায় পড়ার পর অভিজাতদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উসকানিমূলক কিছু করবেন কিনা।

রাশিয়ার মিত্র দেশগুলো এখন পর্যন্ত সরকারি তথ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন। যে যুদ্ধে খারকিভ, কিয়েভ ও মারিউপোলে টানা বোমাবর্ষণ করছে রুশ বাহিনী।

যুদ্ধে রাশিয়ার বিভিন্ন জরিপ সংস্থায় কর্মরতরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধের প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থন ক্রেমলিনকে আরও উৎসাহিত করবে এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে।

গতকাল এক বার্তায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে বলে বারবার দাবি করা হচ্ছে। রুশ বাহিনীর বড় ধরনের প্রাণহানি বা বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবিকে ভুয়া বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিব্রতকর ছবি ও ভিডিও মোকাবিলায় তাদেরকে এমন অবস্থান নিতে হচ্ছে।

রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে রাশিয়ার আইনপ্রণেতারা একটি কঠোর নতুন আইন পাস করেছেন। এতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রকাশে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এর অর্থ হলো সরকারি সূত্র ছাড়া তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।

তবে এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধকে জনগণ কীভাবে গ্রহণ করবে, বিশেষ করে তা যদি খারাপভাবে শুরু হয়, তা নিয়ে রুশ সরকার সব সময় উদ্বিগ্ন ছিল।

বিশ্ব নেতাদের মধ্যে কোলেসনিকভ বলেন, ‘হয়তো কিছু মানুষ তাদের চোখ খুলবে এবং দেখতে পাবে, এই পরিস্থিতির জন্য পুতিন দায়ী। তার উচ্চাঙ্ক্ষার কারণে পুরো জাতি যুদ্ধে জড়িয়েছে। এই যুদ্ধ ছিল নিস্ফল ও অন্যায্য। কিন্তু আপাতত এটি অনুমান মাত্র। কারণ বেশিরভাগ মানুষ এই অভিযানকে সমর্থন করছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন। এটি অনেক রুশ নাগরিককে অবাক করছে। এর কারণ হলো, যাতে করে জনগণের আলোচনায় মনোযোগ কর্মকর্তাদের বক্তব্যেই থাকে এবং তারা যেন সেটিই অনুসরণ করে। জনগণের কাছে যুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরা ছাড়াও টেলিভিশনে প্রচারিত এসব অনুষ্ঠান পুতিনের ঘনিষ্ঠজনদের জটিল অবস্থায় ফেলছে। পরে তারা বলতে পারবে না, এই যুদ্ধে তাদের সমর্থন ছিল না।

গতকালও কিয়েভ অভিমুখী রুশ বহরের স্থবিরতা নিয়ে নানা প্রশ্নকিয়েভ অভিমুখী রুশ বহরের স্থবিরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন
কোলেসনিকভ বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে আলোচনার সুযোগ নেই। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা সব নেতারা পুতিনের সঙ্গে একই নৌকায়, একই সাবমেরিনে আছেন। তারা এখন সেখান থেকে বের হতে পারবে না।’

বিশ্বের অল্প কিছু বিশ্লেষক ক্রেমলিনে মতবিরোধের কথা কানাকানি আকারে বলছেন। কিন্তু খুব কম পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন। এক বিরল বিবৃতি সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম জিজ্ঞেস করেছেন, ‘রাশিয়ায় কী কোনও ব্রুটাস নেই? এই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হলো রাশিয়ায় কাউকে এই ব্যক্তিকে বের করতে হবে।’

টেররিজম ব্রুটাস ছিলেন একজন রোমান রাজনীতিক এবং জুলিয়াস সিজারকে হত্যার জন্য তিনি পরিচিত।

বিশ্বের অন্যতম নেতা ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই মন্তব্যকে বড় ধরনের রুশবিদ্বেষী উন্মাদনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গ্রাহামের এই মন্তব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাবিরোধী রুশ প্রোপাগান্ডার কাজে লাগবে। রাশিয়ার দাবি, এসব নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে সাজা দেওয়া এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর চেয়ে মস্কোয় ক্ষমতার পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। ন্যাটো মহাসচিব সতর্ক করে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’ আর রাশিয়াও ইউক্রেনীয় শহরের প্রতিরোধ ভাঙতে বিমান শক্তি ও কামান কাজে লাগাতে শুরু করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপের পর একজন ফরাসি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পুতিন সব কিছুর জন্য প্রস্তুত।’

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *