Wednesday, April 24বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

লিভিয়ায় বাংলাদেশী দালাল সহ নিহত ২৬ জন ৮ জনই ভৈরবের

বিশ্ব বার্তা: অনেকের স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে যায়। বাংলাদেশ থেকে সুদর লিবিয়া তারপর স্বপ্ন ছিল ইতালি যাওয়ার। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পুরণ হলো না সিলেট ভৈরবের আট যুবকের। গত মঙ্গলবার লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে স্থানীয় এক মানব পাচারকারীর দল। এ ঘটনায় ভৈরব উপজেলারই বিভিন্ন এলাকার আটজন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার (২৯ মে) তাদের নাম-পরিচয় জানা গেছে।

জানা যায় ভৈরবের নিহতরা হলেন, সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মিয়াচান মিয়ার বাড়ির মেহের আলীর ছেলে মো. আকাশ, মোটুপী গ্রামের খালপাড় এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে সোহাগ মিয়া, কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে মাহাবুব, শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের বাচ্চু মিলিটারির ছেলে সাকিব। বাকিরা শুম্ভপুর গ্রামের জানু মিয়া, মামুন মিয়া, সাদ্দাম মিয়া ও মোহাম্মদ আলী।

এদিকে লিবিয়ায় পাচারকারী দালালদের গুলিতে নিহত আকাশের বড় ভাই মোবারক জানান, দেড় বছর আগে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য লিবিয়ায় যায় তার ভাই। সেখানে কাজ করার সময়ে ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের এক দালাল তানজীরের মাধ্যমে লিবিয়ার বেনগাজি হতে ত্রিপলী হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য কথাবার্তা হয়। তারা ইতালিতে পৌঁছানোর পর তিন-চার লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

মোবারক আরো জানান, ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কিছু দিন পর তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। হঠাৎ ২৭ মে সন্ধ্যায় সামাজিকমাধ্যমে ইমোতে একটি ভয়েস মেসেজ আসে। সেখানে জানতে পারেন তার ভাই বলছে ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে মেরে ফেলবে’।

জানা যায় পাচারকারীরা আকাশের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। যদি না দেয় তাহলে তাদের মেরে ফেলবে। এরপর থেকে আর তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।

এদিকে লিবিয়ায় নিহত আকাশের বড় ভাই মোবারকের বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি, শেষবারের মতো যেন তার ছোট ভাইয়ের মুখটা দেখতে পারে সেই ব্যবস্থা করার।

ভৈরবের আরেক নিহত সোহাগের বাবা আব্দুল আলী জানান, এক বছর আগে লিবিয়ায় যান তার ছেলে। সেখানে কয়েক মাস থাকার পর ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের পূর্বপাড়ার সোনা মিয়ার ছেলে তানজীরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকার মাধ্যমে চুক্তি করে। ইতালিতে পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ করতে হবে। তারপর থেকে তার ছেলের আর খোঁজ মেলেনি।

সোহাগের বাবা আব্দুল আলী আরো বলেন, দেশের কিছু দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালিতে যাওয়ার জন্য জীবন বাজি রেখে টাঙ্গি পাড়ি দেয়। কিন্তু তাদের জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করে। এইভাবে তাদেরকে আমরা হারালাম।

এক আলাপচারিতায় ভৈরব থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) তদন্ত বাহালুল আলম খান জানান, লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ভৈরবের আটজনের নাম জানা গেছে। আমরা তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানান।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, এভাবে অবৈধভাবে বিদেশ গিয়ে পাচারকারী চক্রের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায় অভিবাসীরা লিবিয়ার মিজদা শহরের এক মানবপাচারকারীর কাছে জিম্মি ছিলেন। অভিযুক্ত পাচারকারীও গত মঙ্গলবার রাতে অভিবাসীদের হাতে খুন হন। এরপর তার সহযোগী ও আত্মীয়-স্বজনেরা জিম্মি অভিবাসীদের ক্যাম্পে নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ২৬ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৩০ জন মারা যান। এই ঘটনায় আরো ১১ জন বাংলাদেশি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাদেরকে বর্তমানে দেশটির জিনতান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে।

তবে এই পর্যন্ত এই আট যুবকের লাশ সহ অন্যান্যদের বাংলাদেশে আনার ব্যপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *