Thursday, April 25বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

আবারো শুরু হলো কয়েন জালিয়তি, ৮০ টাকার কয়েন বিক্রি ৫ কোটিতে বিক্রি

বার্তা প্রতিনিধি: আবারো দেশে শুরু হলো কয়েন বিক্রির নামে প্রতারনা। অভিনব কায়দায় তামা গলিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়েন। তাতে খোদাই করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। ইচ্ছে মতো বসানো হচ্ছে সন তারিখ। নাম দেওয়া হয়েছে ম্যাগটেনিক কয়েন। শত বছরের পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে প্রতিটি কয়েন বিক্রি করা হচ্ছে কোটি টাকায়। অথচ একটি কয়েন তৈরিতে খরচ মাত্র সত্তর থেকে আশি টাকা। অভিনব এ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

কয়েন তৈরির পর স্কচটেপে মোড়ানো হয় প্যাকেট। খোলার পর কার্বন কাগজের আরেকটি প্রলেপ। সেখান থেকে বের করা হলো ৪টি গোলাকার ধাতব কয়েন। ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে পরীক্ষা। মান যাচাই করতে প্রয়োগ করা হলো ৪ ধরনের কেমিক্যাল। নিখুঁত পরীক্ষার পর রসায়নবিদ জানালেন দুটি কয়েন আসল। বাকি দুটি নকল। পরীক্ষার সময় উপস্থিত ক্রেতা, বিক্রেতা ও দালাল তিনপক্ষই।

সব কৌশল শেষে এবার দাম নির্ধারণের পালা। চারশো বছরের পুরানো দুটি কয়েনের দাম হাঁকা হলো ৫ কোটি টাকা। ক্রেতারা সন্তুষ্ট হয়ে ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়ার পর বাকি টাকা পরিশোধের তারিখ ঠিক করে বিদায় নিলেন।

তবে নির্দিষ্ট তারিখে কয়েন নিতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। খোঁজ নেই দালালদের। বাধ্য হয়ে ক্রেতারা দ্বারস্থ হন পুলিশের।

কয়েন ক্রয়ে প্রতারিত হওয়া এক ক্রেতা বলেন, কয়েন বিক্রির কথা বলে আমাকে নিয়ে গেছে। তখন আমার কাছে বিক্রির কথা বলে স্ট্যাম্প করে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে।

এদিকে প্রতারণার শিকার অপর এক ক্রেতা বলেন, এ সব ভণ্ড-প্রতারকরা এমন পরিবেশ তৈরি করে যে মানুষের তখন আর বিবেক বুদ্ধি কাজ করে না।

ঢাকার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিন দালাল ও এক রসায়নবিদকে, যারা তামার তৈরি আশি টাকার কয়েন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিক্রি করে আসছিল কোটি টাকায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪২টি ধাতব মুদ্রা।

কয়েন বিক্রির মূল হোতা চক্রের আরেক সদস্যকে সাভারে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যে অভিযান চালানো হয় মানিকগঞ্জে। সেখানকার একটি বাঁশ ঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয় ১১ লাখ টাকা।

যাদের শত বছরের পুরানো কয়েন দরকার এমন লোকদের টার্গেট করে চক্রটি। পরে নিজেরাই দালাল ও বিদেশি ক্রেতা সেজে কোনো তারকা হোটেলে বসে দর দাম ঠিক করে।

কয়েন বিক্রির চক্রের এক সদস্য বলেন, আসলে এগুলো পুরনো না। এগুলো ভুয়া। কিছু টাকার বিনিময়ে আমরা এগুলো করি। চক্রের অপর এক সদস্য বলেন, আমরা এগুলো গুলিস্তান থেকে কিনে আনি। এরমধ্যে কিছুই নেই। শুধু তামা দিয়ে বানানো।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ বলছে, সীমানা পিলার, কিংবা পুরানো কয়েনের কোনো অস্তিত্বই নেই।

কয়েন বা পিলারের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, সাধারণ তামা দিয়ে এসব কয়েন তৈরি হয় যাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম লিখে দেওয়া হয়। এই কয়েনগুলোকে একদল প্রতারকরা গুলিস্তান থেকে কিনে নেয়। তারপর চক্রটি বাংলাদেশি সরলমনা কিন্তু লোভী টাইপের লোকেদের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে দেখায় এবং একেকটির দাম হাঁকে ৪-৫ কোটি টাকা।

উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান আরো বলেন, আসলে এই কয়েনটার মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু সেটার জন্য প্রতারকরা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে ঢাকা মহানগরর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) ডিসি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, এ রকম প্রতারক চক্র বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। এমন অস্বাভাবিক কোনো কিছু যদি কেউ অফার করে যেমন দ্রুত বড়লোক হওয়া যাবে এ রকম অফার থেকে আমরা যেন সাবধান হই।

তবে এই ধরনের ফাঁদ থেকে বাঁচতে লোভ সংবরণ করার করার পরামর্শ পুলিশের। কারন লোভ মানুষকে এ রকম নিঃশ করতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *