Tuesday, April 23বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

সেন্ট মার্টিন, ভ্রমণ গাইড

একজন অন্ধও যেন যেতে পারে Doc টি সেভাবেই করার চেষ্টা করেছি।

বার্তা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ‘সেন্ট মার্টিন’ এর অবস্থান বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়। টেকনাফের সর্ব শেষ অংশ অর্থাৎ শাহ্‌পরীর দ্বীপ হতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ও টেকনাফ হতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এর বুকে এই দ্বীপ এর অবস্থান। মাত্র ৩ বর্গ কিলোমিটারের (পরিধি হিসেবে ১৪ কিলোমিটার এবং ছেঁড়াদ্বীপ সহ ১৮ কিলোমিটার) কিছু বেশি আয়তনের এই দ্বীপটির জনসংখ্যা প্রায় ৮০০০ হাজার। ১৮৯০-১৯০০ সালের দিকে মাত্র ১৩ টি পরিবারের ৫০ জন সদস্য প্রথম এই দ্বীপে বসতি গড়েন। স্থানীয় প্রায় সবাই তাদেরই বংশধর। সেন্ট মার্টিন মূলত দু’টি নামে পরিচিত। নারিকেল জিঞ্জিরা আর সেন্ট মার্টিন । জিঞ্জিরা মূলত আরবি শব্দ জীন-জাজিরা থেকে এসেছে। জীন মানে জীন বা পরী আর জাজিরা মানে দ্বীপ। কথিত আছে সেই কালে জীন পরীরা চলাচলের সময় এই দ্বীপে বিশ্রাম নিত। সেখান থেকেই এই দ্বীপের নাম হয়েছে জিন-জাজিরা বা জিঞ্জিরা। পরবর্তীতে নারিকেল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছে নারিকেল জিঞ্জিরা। এদিকে সেন্ট মার্টিন ছিলেন একজন ব্রিটিশ ধর্ম যাজক। তিনি এই দ্বীপে কিছুকাল অবস্থান করেন। এদিকে ব্রিটিশ সরকারের এক আর্মি অফিসার মিস্টার কক্স (যার নামে কক্সবাজার) ছিলেন সেন্ট মার্টিনের ভক্ত। মিস্টার কক্স তার প্রিয় ধর্ম যাজকের নাম স্মরণীয় রাখতে এই দ্বীপের নাম রাখেন সেন্ট মার্টিন । কেন যাবেন সেন্ট মার্টিনঃ আপনার উত্তর যদি হয় সমুদ্র দেখতে তাহলে বলবো “সমুদ্র দেখার জন্য সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন নেই”। সমুদ্র আপনি কক্সবাজার, টেকনাফ, কুয়াকাটাতেও তো দেখতে পারেন। সেন্ট মারটিন মূলত যাওয়া উচিৎ রহস্যের সন্ধানে। নির্জনতার রহস্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রহস্য আর সাগর তলের বিস্ময়কর রহস্য। সৃষ্টিকর্তা এখানকার প্রকৃতিকে দু’হাত ভরে দান করেছেন। চতুর্দিকের নীল- সাদা আকাশের নিচে যেদিকেই তাকান শুধু পানি আর পানি। নীল পানিতে আকাশটা যেন হঠাৎই ঝুঁকে পড়েছে ওল্টানো বাটির মতো। অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে এখানে। কি দেখবেনঃ সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিবো কোথা? সেন্ট মার্টিনে কি দেখবেন তা আলাদা করে বলতে গেলে একটু বিপদেই পড়তে হবে। ৭ টি পাড়া নিয়ে গঠিত এই দ্বীপটির প্রতিটি অংশই রূপের ডালা সাজিয়ে রেখেছে। সতন্ত্র তাদের প্রত্যেকের রূপ কিন্তু এক সূতায় গাথা। ঠিক মুক্ত মালার মত। তবে প্রকৃতি একেক সময় একেক ভাবে সুন্দর। বিকেল বেলাটা এক কাপ চায়ের সাথে দ্বীপের পশ্চিম পাড়ের বীচ থেকে আপনি হয়তো দেখতে পাবেন আপনার জীবনের সেরা সূর্যাস্ত। সকালটা কাটিয়ে দিন পূর্ব বীচে। মায়ানমারের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে সূর্যের প্রথন কিরণ যখন আপনার চোখে ধরা দেবে তখন পূর্ব বীচ মায়াবী রূপ ধারন করে। দ্বীপের সর্ব দক্ষিনে বেশ কিছু অংশ নিয়ে কোরালের উপর ভর করে তৈরি হয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ। বর্ষা মৌসুমে মূল দ্বীপ থেকে ছিঁড়ে যায় বা আলাদা হয়ে যায় বলেই এর নাম ছেঁড়াদ্বীপ। হেঁটে বা বোটে করে যেতে পারেন এই দ্বীপে। মূল দ্বীপ থেকে সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলার, স্পীড বোট যায় এই দ্বীপে। চাইলে তাঁবুতে এক রাত থেকে যেতে পারেন এখানে। তবে নিরাপত্তারা বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

কেমন হওয়া উচিৎ ট্যুর প্লান ?

** যারা কক্সবাজার থেকে প্যাকেজ নিয়ে সেন্ট মার্টিনে আসেন তাদের জন্য সমবেদনা। আমি অন্তত ১০০ মানুষকে চিনি যারা ডে লং প্যাকেজ নিয়ে সেন্ট মার্টিনে গিয়ে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া নিয়ে আফসোস করেছে। তারপরও যারা সময়ের অভাবে ডে লং ট্রিপে সেন্ট মার্টিন যাবেন তারা শিপ থেকে নেমেই ভ্যান নিয়ে চলে যাবেন পশ্চিম বীচে। সেন্ট মার্টিনে পানিতে নামার জন্য পশ্চিম বীচের বিকল্প নেই। যদিও পশ্চিম বীচ পর্যন্ত হেঁটে যেতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে তবুও আমি ভ্যান নিতে বলবো। এইটুকু যেতে ভ্যান ভাড়া গুণতে হবে ১৫০-২০০ টাকা। পশ্চিম বীচে গিয়েই নেমে পড়ুন স্বচ্ছ পানিতে। মনে রাখবেন যখনই পানিতে নামুন না কেন ২ টার আগেই পানি থেকে উঠে পড়ুন। মনে রাখবেন আপনার ফেরার শিপ কিন্তু ৩ টায়। তাই ২ টার আগে না উঠে পড়লে আপনি খাওয়ার সময়টুকুও পাবেন না। এই টাইপ ট্রিপ আসলে good for nothing টাইপ ট্রিপ। মানে আসলাম, খেলাম, ফিরে গেলাম আর কি !

** ১ দিনের প্ল্যানঃ যারা এক দিনের জন্য সেন্ট মার্টিনে যাবেন তাদের জন্য প্রথম পরামসস হল শিপ থেকে নামতে তাড়াহুড়া করবেন না। আসতে ধীরে শিপ থেকে নেমে হোটেলে উঠে পড়ুন। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে চলে যান ছেঁড়াদ্বীপ। চেষ্টা করবেন ৪ টার দিকে রওনা দিতে। তাতে রোদ যেমন কিছুটা পরে যাবে তেমনি ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে পারবেন। মনে রাখবেন ছেঁড়া দ্বীপের সূর্যাস্ত অসাধারণ। তবে সূর্যাস্তের পরে বেশি দেরি করবেন না। মূল দ্বীপে ফিরে এসে আড্ডা দেয়ার ভালো জায়গা হল বাজারের জেটি অথবা পশ্চিম বীচের যে কোন জায়গা। বীচের যেখানেই থাকুন না কেন নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই। রাতে চাইলে বার-বি-কিউ করতে পারেন। বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে পরামসস হল স্থানীয় হোটেল গুলোতে না করে কোন রিসোর্টে করা। রিসোর্ট গুলোতে দাম ৫০-১০০ টাকা বেশি নিলেও মাছ ফ্রেশ পাবেন। যত রাত পর্যন্তই জেগে থাকুন না কেন ঘুম থেকে উঠে পড়ুন ৫-৫.৩০ এর মধ্যে। পূর্ব দিক থেকে হাঁটা শুরু করুন। উদ্দেশ্য পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখা। পুরো দ্বীপ চক্কর দিতে আপনার সময় লাগবে ৩.৩০-৪ ঘণ্টা। মনে রাখবেন সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ১০ টা নাগাদ ফিরে আসুন হোটেলে। মুখে কিছু দিয়ে নেমে পড়ুন সমুদ্রে। ১২ টা নাগাদ ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে খেয়ে নিন। ২.৩০ এর দিকে উঠে পড়ুন আপনার নির্ধারিত শিপ। মনে রাখবেন ২.৩০ এর পরে শিপ উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়।

** ২ দিনের প্ল্যানঃ এক দিনের জন্য সেন্ট মার্টিনে যাবেন তাদের মত ২ দিনের ভ্রমণকারীদের জন্যও পরামসস হল শিপ থেকে নামতে তাড়াহুড়া করবেন না। আসতে ধীরে শিপ থেকে নেমে হোটেলে উঠে পড়ুন। একটু পরে নেমে পড়ুন সমুদ্রে। ঘণ্টা খানেক দাপাদাপি করে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিন । ৫ টা নাগাদ চলে যান বীচের পারে। অবশ্যই পশ্চিম বীচে। আয়েশ করে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিন প্রথম দিনের সন্ধ্যা। সন্ধ্যার পর চলে যেতে পারেন বাজারের জেটিতে। ঝিরি ঝিরি বাতাসে জেটিতে বেশ আমুদে একটা ভাব এসে যায়। অনেক রিসোর্টে রাতে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় গান পরিবেশ করা হয়। রাতে চেষ্টা করুন একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে। সারা দিনের ধকল তো আর কম যায়নি ! পরদিন সকাল ৮ টার মধ্যে নাস্তা শেষ করে চলে যান ছেঁড়াদ্বীপ। ছেঁড়াদ্বীপে গোসলও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ছেঁড়া দ্বীপের শেষ মাথায় গিয়ে পানিতে নামাই ভালো। এখানে কোরাল তুলনামুলক কম আর ঢেউ গুলো চমৎকার। দুপুর নাগাদ ফিরে আসুন মূল দ্বীপে। দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিন। আগের দিনের মত বিকেলে পশ্চিম বীচে সূর্যাস্ত দেখে বীচ ধরে উত্তর দিকে হাঁটতে হাঁটতে জেটি পর্যন্ত চলে যান। অসাধারণ ভিউ আর ছবি পাবেন। এই রাতে বার-বি-কিউ করতে পারেন। বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে পরামসস হল স্থানীয় হোটেল গুলোতে না করে কোন রিসোর্টে করা। রিসোর্ট গুলোতে দাম ৫০-১০০ টাকা বেশি নিলেও মাছ ফ্রেশ পাবেন। যত রাত পর্যন্তই জেগে থাকুন না কেন ঘুম থেকে উঠে পড়ুন ৫-৫.৩০ এর মধ্যে। পূর্ব দিক থেকে হাঁটা শুরু করুন। উদ্দেশ্য পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখা। পুরো দ্বীপ চক্কর দিতে আপনার সময় লাগবে ৩.৩০-৪ ঘণ্টা। মনে রাখবেন সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ১০ টা নাগাদ ফিরে আসুন হোটেলে। মুখে কিছু দিয়ে নেমে পড়ুন সমুদ্রে। ১২ টা নাগাদ ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে খেয়ে নিন। ২.৩০ এর দিকে উঠে পড়ুন আপনার নির্ধারিত শিপ। মনে রাখবেন ২.৩০ এর পরে শিপ উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়।

কি খাবেনঃ

এই দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিস হল ডাব। এই দ্বীপের নাম নারিকেল জিঞ্জিরা এমনি এমনি হয়নি। এখানকার ডাবের পানি যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু। সেন্ট মারটিনে গেলে ডাবের পানি মিস করা ঠিক হবে না।

যারা মাছ খান না আমার মতে তাদের সেন্ট মার্টিন যাওয়ার অধিকারই নেই। কারন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদার স্বাদ এক কথায় অসাধারণ। আর একটা জিনিস অবশ্য খেয়ে দেখতে পারেন। সেটা হল কুরা (স্থানীয় ভাসায় দেশী মুরগিকে বলা হয় কুরা)। শুঁটকি মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি ট্রাই করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন বেশির ভাগ শুঁটকি কিন্তু আসে কক্সবাজার ও চট্ট্রগ্রাম থেকে। যারা ইলিশ খুব বেশি পছন্দ করেন তারা জেনে রাখুন সমুদ্রের ইলিশ নদীর ইলিশের মত টেস্টি নয়।

যারা জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারীতে সেন্ট মারটিন যাবেন তারা অবশ্যই তরমুজ মিস করবেন না। দেখতে খুব একটা লাল না হলেও খেতে কিন্তু বেশ।

যা কখনই করবেন নাঃ

** মনে রাখবেন পাথুরে সৈকত, প্রবাল ও নীল সমুদ্র আমাদের দেশে শুধুমাত্র এখানেই আছে। এই দ্বীপটি ২০০৫ সালে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত। তাই সৃতি হিসেবে এখান থেকে প্রবাল, শৈবাল, সামুক-ঝিনুক, কেয়া গাছের ফল নিয়ে আসবেন না। এটা শুধু অনুচিতই নয় বরং দণ্ডনীয় অপরাধও বটে।

** সব মিলিয়ে এখানে মোট ১১ টি বিপদজনক স্থান/ বা ডেঞ্জার জোন আছে। এই জোনে পানিতে না নামাই ভালো। কয়েকটি জায়গাতে লাল পতাকা দেয়া আছে তবে সবগুলো পয়েন্টে নেই। ** পানিতে নেমে প্রবালে পা কেটে ফেলেন অনেকে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী।

** এ অঞ্চলের মানুষ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে বেশ সেন্সিটিভ। তাই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

** সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এই দ্বীপের প্রবালগুলোকে আমরা নিজ হাতে অতি যত্ন সহকারে মেরে ফেলছি। আমাদের ফেলে আসা পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল সাগরের তলার পরিবেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। তাই অনুরোধ এইসব তো ফেলবেনই না বরং আসার সময় সম্ভব হলে একটি বা দু’টি বোতল বা পলিথিন কুড়িয়ে নিয়ে আসুন। আপনার বা আমার একটি দু’টি বোতল হয়তো পরিবেশের বিপর্যয় রোধ করতে পারবে না। কিন্তু জানেন তো বিন্দু বিন্দু বালু কনা …… ।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী, হানিফ, রিলেক্স, তুবা লাইন(নন এসি) এবং সেন্ট মার্টিন সার্ভিস, বাগদাদ এক্সপ্রেস, গ্রীন লাইন (এসি) সহ বেশ কিছু বাস টেকনাফ যায়। নন এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা আর বেশিরভাগ এসি বাসের ভাড়া ১৫৫০ টাকা। দমদমিয়া ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি শিপ ছাড়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে। যা দ্বীপে পৌছায় ১২ টার মধ্যে। এগুলো ফিরে আসে বিকেল ৩ টার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে। শিপ ও ক্লাস ভেদে এগুলোর ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অফ সিজনে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) শিপগুলো চলে না, এই সময়টাতে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার একমাত্র উপায় হল ট্রলার।

কক্সবাজার থেকে গেলে প্যাকেজ নিয়ে যাওয়াই ভালো। কক্সবাজারে যে হোটেলে থাকবেন, তাদের কাছে বললে তারা ব্যবস্থা করে দিবে। তবে তাদের কাছে শুধু ট্রান্সপোর্ট এর সুবিধা ও আলাদা করে নেয়া যায়। এর সুবিধা হল খুব ভোরে উঠে টেকনাফ যাওয়ার জন্য বা শিপের টিকেটের জন্য আলাদা করে দৌড় ঝাঁপ করতে হবে না। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, শিপের রিটার্ন টিকেট(সেন্ট মার্টিন যাওয়া এবং আসা) এবং আবার টেকনাফ থেকে কক্সবাজার নিয়ে আসা সব মিলিয়ে খরচ হয় ১০০০-২০০০ টাকা (শিপের ক্লাস ভেদে খরচ বাড়ে-কমে)।

কিভাবে নিবেন যাওয়ার প্রস্তুতিঃ

নতুন কোন জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি কথা সবসময় মাথায় রাখবেন, ইনফরমেশন হল আপনার প্রধান অস্ত্র। আপনার কাছে যত বেশি ইনফো থাকবে আপনার ভ্রমণ ততো স্বাচ্ছন্দময় হবে। সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কানেক্টিং ফ্যাক্টর কাজ করে। এর প্রথম পর্যায়ে আপনাকে বাসের টিকেট কনফার্ম করতে হবে। সম্ভব হলে যাওয়া আসা দুটোরই। এর পরের কাজ হল শিপের টিকেট কনফার্ম করা এবং সর্বোপরি সেন্ট মার্টিনে কোন হোটেল বা রিসোর্ট বুক করা। এই তিনটি ধাপ কনফার্ম হলেই আপনি সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

কিভাবে বুকিং করবেনঃ

বাসঃ নন এসি বা এসি যাই হোক না কেন সবগুলো বাস মোটামুটি ফকিরাপুল থেকে যাত্রা শুরু করে। তাই টিকেট কাটার জন্য ফকিরাপুল যাওয়াই ভালো। তবে সায়দাবাদ বা যাত্রাবাড়ী থেকেও উপরে উল্লেখিত বাস কাউন্টার থেকে আপনি আপনার টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। একটা কোথা মাথায় রাখুন, আগে বাস কোম্পানিগুলো ফোনে বুকিং নিলেও এখন আর নেয় না। তাই ফোন করে বুক দেয়ার চেষ্টা না করে একটু কষ্ট করে হলেও কাউন্টারে গিয়ে টিকেট করে ফেলুন।

শিপ বুকিং এর ক্ষেত্রে চলে যেতে পারেন শিপ কোম্পানিগুলোর টিকেট সেলিং সেন্টারে। কেয়ারী সিন্দাবাদ এবং কেয়ারী ক্রুজের অফিস ধানমন্ডিতে। ফোন নাম্বার ০১৮১৭১৪৮৭৩৫। এল সি টি কুতুব্দিয়ার অফিস পল্টনে। ফোন নাম্বার ০১৭১৪৬৩৪৭৬২। ** নাম্বারগুলো নিশ্চিত হয়ে নিয়েন। এ ছাড়াও এম ভি ফারহান, কাজল, বে-ক্রুজ, গ্রীন লাইনের (০২৯৩৩৯৬২৩, ০২৯৩৬২৫৮০) শিপও রয়েছে।

সেন্ট মার্টিনে হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং এর ক্ষেত্রে একটু সাবধানী সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। মেইন ল্যান্ডের মত সুযোগ সুবিধা দেয় এমন একটিও হোটেল/ রিসোর্ট এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর মূল কারন হল বিদ্যুৎ। ১৯৯১ এর আগে সেন্ট মার্টিনে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও ১৯৯১ এর প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সব লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। এর পরে সেন্ট মার্টিন আর সরকারী ব্যবস্থায় বিদ্যুতের মুখ দেখেনি। তাই হোটেল/ রিসোর্ট গুলো নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থেকে। এর ফলে বিদ্যুৎ রিলেটেড সুবিধাগুলো (ফ্রিজ, রুমে এসি, ২৪ ঘণ্টা ফ্যান)এখানে পর্যাপ্ত নয়। * হোটেল/ রিসোর্ট বুকিং এর ক্ষেত্রে কে কতটুকু সুযোগ সুবিধা দেবে তা নিশ্চিত হয়ে নিন। * সেন্ট মার্টিন উপভোগ করতে চাইলে পশ্চিম বীচের বিকল্প নেই। তাই পশ্চিম পাড়ের রিসোর্টগুলোকে টার্গেট করতে পারেন। তবে যারা হইহুল্লর পছন্দ করেন তারা বাজারের কাছাকাছি হোটেলগুলোতে থাকুন। হোটেল/ রিসোর্ট বুকিং এর ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে সেখানে গিয়েও খুঁজে নিতে পারেন। এতে সুবিধা অসুবিধা দুটোই আছে। হোটেল খুঁজতে খুঁজতে আপনার যেটুকু সময় নষ্ট হবে আর যে ধকল যাবে তাতে তাতে দরদাম করে হোটেল ভাড়া কিছুটা কমাতে পারলেও রুম পেতে পেতে আপনার প্রায় ২-৩ টা বেজে যাবে। আর একটি বিষয় হল বিশেষ ছুটির দিন (১৬ ডিসেম্বর,২৫ ডিসেম্বর,৩১ ডিসেম্বর,২১ ফেব্রুয়ারী,২৬ মার্চ সহ অন্য তিন দিনের টানা বন্ধ) গুলোতে কোন প্রকার হোটেল / রিসোর্ট পাওয়াই কষ্টকর হয়ে যায়। তাই এসময়গুলোতে আগে থেকেই হোটেল / রিসোর্ট বুক করে নিশ্চিত করে রাখবেন। যেহেতু শিপ সেন্ট মার্টিনে পৌছায় ১২ টার মধ্যে, তাই ট্যুরিষ্টদের রিসোর্ট বা হোটেলে পৌছতে ১২.৩০-১ টা বাজে। আবার অন্য দিকে শিপ সেইন্ট মারটিন থেকে ছেড়ে যায় ৩ টায়, তাই এই ৩-৩.৩০ ঘন্টার একটা ঝামেলায় পড়তে হয় রিসোর্ট/হোটেল মালিকদের, আগেরদিনের ট্যুরিষ্টদের, নতুন ট্যুরিষ্টদের প্রায় সবারই। এখানে সবার মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছাড়া এই সমস্যার সমাধান নেই। প্রথমত প্রায় প্রতিটি হোটেল/রিসোর্টে চেক আওট টাইম ১১-১১.৩০ হলেও কেও ঠিক সময়ে রুম ছাড়তে চান না, অথচ আগের দিন রুম এ ঢুকতে দেরি হওয়াতে তিনি নিজেই মন খারাপ করেছিলেন !আসলে দিনের একটি টাইমেই শিপ আসে আর এক টি টাইমেই সব শিপ ছেড়ে যায়, তাই মাঝের এই ৩-৩.৩০ ঘন্টা সময় নিয়ে ঝামেলা থেকেই যায়।আপনারা যা করতে পারেন, যদি ফিরে আসার দিন সকালে ছেড়াদ্বিপ যাবার প্ল্যান থাকে, তাহলে ভোরে চলে যাবেন, আর যাবার আগে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল এর লবি/ মালিকের কাছে দিয়ে যাবেন। এতে করে নতুনদের জন্য রুম পরিষ্কার করার সময় পাওয়া যায়। তখন আপনারা ফিরে এসে এক্সট্রা ওয়াশরুম এ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে সহজেই বের হয়ে যেতে পারবেন।

কিছু হোটেল ও রিসোর্টঃ

আবাসিক হোটেলগুলো মূলত বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মানসম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে ব্লু মেরিন (০১৮১৫৬৩২০৩৭, ০১৭১৩৩৩৯৯০০১), সেন্ড শোর (০১৮১৫৬৪৮৭৩১), হোটেল সি ইন বেশ ভালো। এগুলোর ভাড়া রুম ভেদে ১৫০০-৪০০০ এর মত। *** আরও কিছু হোটেলের নাম ধীরে ধীরে যুক্ত করা হবে *** রিসোর্টগুলো মূলত পূর্ব ও পশ্চিম বীচের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। সুযোগ সুবিধার দিক থেকে রিসোর্টগুলো হোটেলের চেয়ে অনেক ভালো। বেশিরভাগ রিসোর্টের রয়েছে নিজস্ব রেস্তোরাঁ। আছে বার-বি-কিউ করার ব্যবস্থা। আর বীচের পারে হওয়াতে এগুলো থেকে বেশ ভালো ভাবে সমুদ্র উপভোগ করা যায়। এগুলোর অসুবিধা একটাই। সেটা হল বাজার থেকে কিছুটা দূরে। মানসম্মত কিছু রিসোর্ট-

সায়রী ইকো রিসোর্টঃ পরিবেশের কথা মাথায় রেখে যথা সম্ভব স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে রিসোর্টটি। এটি জায়গার দিক দিয়ে সেন্ট মার্টিনের সবচেয়ে বড় রিসোর্ট। এদের সেন্ট্রাল সোলার সিস্টেম থাকায় ২৪ ঘণ্টা লাইট এর সুবিধা পাওয়া যায়। ফ্যানগুলো অবশ্য জেনারেটরের সাহায্যে রাত ১২ টা পর্যন্ত চলে। নিজস্ব রেস্তোরাঁ, কফি জোন, দোকান থাকায় এই রিসোর্টের গেস্টদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পরে না। প্রাইভেট বীচ, বীচ চেয়ার, হেমক, বোতলের তৈরি বোট গেস্টদের জন্য ফ্রী। এটি বীচ থেকে এতো কাছে যে পূর্ণিমার দিনগুলোতে সমুদ্রের পানি রিসোর্টের বীচ পাড়ের দরজা ছুই ছুই করে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সূর্যাস্ত দেখা হতে পারে আপনার বাড়তি পাওনা। এখান থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া বা স্কুবা করতে চাইলে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এই রিসোর্টের বড় একটি সমস্যা হল এটি বাজার থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ভাড়া রুম ভেদে ১৫০০-৩৫০০ টাকা।

যোগাযোগঃ ০১৭১১ ২৩২৯১৭ ও ০১৯১৯ ১১১২১১ (https://web.facebook.com/ShayariEcoResort/)

সীমানা পেরিয়েঃ সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট এই দ্বীপের পরিচিত রিসোর্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম। গাছপালা ঘেরা রিসোর্টটি আপনার ভালো লাগবে। রয়েছে নিজস্ব রেস্তোরাঁ।

নীল দিগন্তেঃ সমুদ্র পাড়ের রিসোর্টগুলোর মধ্যে নিলদিগন্ত অন্যতম। বেশ গুছানো ও পরিপাটি। এই রিসোর্টটির ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমুদ্র দর্শন বেশ উপভোগ্য। নিজস্ব রেস্তোরাঁ, বার-বি-কিউ, মিউজিক সব মিলিয়ে নীল দিগন্তে বেশ জমজমাট। তবে সায়রী ইকো রিসোর্টের মতই এটাও বাজার থেকে বেশ কিছুটা দূরে। এদের রুম ভেদে ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৭৩০০৫১০০৪

ব্লু লেগুন রিসোর্টঃ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম বীচে অবস্থিত। হোটেল অবকাশ থেকে হেঁটে যেতে হয় ৫ মিনিট। রিসোর্ট থেকে আপনি সূর্যাস্ত এবং রাতের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পাবেন। রিসোর্টে রয়েছে খাবার শু-ব্যবস্থা। রুম ভাড়াঃ কাপল(১৫০০-২০০০); ডাবল (১৪০০-২৫০০)। যোগাযোগঃ ০১৭২৩৫৮৬৮৭৭; ০১৬৭৩১১১২৩৭

(https://www.facebook.com/BlueLagoon…)

কোরাল ভিউ রিসোর্টঃ পূর্ব বীচে যতগুলো রিসোর্ট আছে কোরাল ভিউ তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিপাটি। হ্যমক, বসার জায়গা, রেস্তোরাঁ সব মিলিয়ে বেশ ভালো। বাজার থেকে খুব বেশি দুরেও নয়। কিন্তু এটিরও সমস্যা আছে। সেটি হল পূর্ব অংশে সমুদ্রে ঢেউ নেই। রিসোর্টে বসে আপনি সাগরের নয় বরং নদীর ঢেউ পাবেন। রুম ভেদে ভাড়া ৩০০০-৬৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০১৯৮০০০৪৭৭৮ (https://web.facebook.com/CoralViewR…)

এক নজরেঃ

দ্বীপের নামঃ সেন্ট মার্টিন

আয়তনঃ ৩ বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি।

জনসংখাঃ ৮০০০ (প্রায়)

যা করতে পারেনঃ পুরা দ্বীপ ঘুরতে পারেন, ছেঁড়া দ্বীপ যেতে পারেন, স্কুবা করতে পারেন, সমুদ্র স্নান।

যাতায়াত(ঢাকা থেকে) ঃ বাসঃ হানিফ, শ্যামলী, রিলাক্স, তুবা লাইন, গ্রীন লাইন, বাগদাদ, সেন্টমার্টিন সার্ভিস।

শিপঃ কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ, এল সি টি কুতুবদিয়া, এম ভি কাজল, ফারহান, বে-ক্রুজ, গ্রীন লাইন।

হোটেল / রিসোর্টঃ

১। সায়রী ইকো রিসোর্ট (০১৭১১২৩২৯১৭; ০১৯১৯১১১২১১) ২। সিমানা পেড়িয়ে(০১৮১৯০১৮০২৭)

৩। নীল দিগন্তে (০১৭৩০০৫১০০৪) ৪। সিমানা পেড়িয়ে(০১৮১৯০১৮০২৭)৫। কোরাল ভিউ (০১৯৮০০০৪৭৭৮)

৬। ব্লু লেগুন (০১৭২৩৫৮৬৮৭৭, ০১৮১৮৭৪৭৯৪৬)৭। সমুদ্র কুটির৮। প্রাসাদ প্যারাডাইস(০১৭৯৬৮৮০২০৭)

৯।, লাবিবা বিলাস(০১৭১৪৬৩৪৭৬২),১০। পান্না রিসোর্ট (০১৮১৬১৭২৬১৫),১১। ড্রিম নাইট (০১৭১০৩৯০২৫১)

১২। ব্লু মেরিন (০১৮১৫৬৩২০৩৭, ০১৭১৩৩৩৯৯০০১)১৩। সেন্ড শোর (০১৮১৫৬৪৮৭৩১)

১৪। হোটেল সি ইন১৫। সমুদ্র বিলাস (০১৮৩৭১৯৬৪৫৪)১৬। টিসিবি রিসোর্ট।১৭। সমুদ্র কানন।

১৮। মিউজিক ইকো রিসোর্ট১৯। বাগানবাড়ী বীচ রিসোর্ট (০১৬৭৩৯১৬৯২০)

সেন্টমার্টিনের কয়েকটি জনপ্রিয় রিসোর্ট ও হোটেলের পরিচিতিঃ (সংগ্রহে রাখতে পারেন, কাজে দিবে)

০১) ব্লু মেরিন
নিঃসন্দেহে সেন্টমার্টিনের সেরা হোটেল। জেটি থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত হোটেলটির অবকাঠামো খুবই চমৎকার। তিনতলা বিশিষ্ট এই হোটেলে ৩৪ টি বিলাসবহুল রুম সহকারে নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট রয়েছে।
তবে বাজারের কাছে বলে এর আশেপাশে মানুষজনের সমাগম খুব বেশী। এছাড়া এই রুমগুলো থেকে সরাসরি বীচ দেখা যায় না। ফেইসবুকে ব্লু মেরিন হোটেলের রেটিং খুব ভালো ৪.৫০/৫.০০ (৬৫ টি রিভিউ)। এর রুমভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ ০১৭১৩-৩৯৯০০০ (ঢাকা), ০১৭১৩-৩৯৯২৫০ (সেন্টমার্টিন),

০২) নীল দিগন্তে রিসোর্ট
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দর একটি রিসোর্ট। এর আয়তনও বেশ বড়ো। অস্তাচল, ছায়াবিথি, তরুছায়া ও নীপবন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এর মোট রুমের সংখ্যা ৩৮ টি। রেস্ট্যুরেন্টও রয়েছে এখানে। এই রিসোর্টের সমস্ত রুমই টিনশেড। রুমভাড়া ২,০০০-৪,৫০০ টাকা।
এর সমস্যা হলো, জেটি থেকে বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় ভ্যানভাড়া গুনতে হবে অন্তত দু’শ টাকা। এছাড়া রুম থেকে বীচ দেখারও কোন সুযোগ নেই। তবে ফেইসবুকে এর রিভিউ ভালো নয় কেন, বুঝলাম না। রেটিং হলো ৩.১০/৫.০০ (১৪ টি রিভিউ)।
যোগাযোগঃ ০১৭৩০-০৫১০০৫, ০১৭৩০-০৫১০০৬, ০১৭৩০-০৫১০০৭

০৩) সী ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস
এর অবস্থান নর্থ বীচে, জেটি থেকে সাত মিনিট হাটার দূরত্বে। নতুন ম্যানেজমেন্টের অধীনে এসে রিসোর্টেরর খোলনলচে একেবারে বদলে গেছে। সম্প্রতি যারা এখানে থেকেছেন, সবাই এই দ্বিতল রিসোর্টটির প্রশংসা করেছেন। নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্টসহ এখানে ১৯ টি রুম ও ০৪ টি তাবু রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো, এর অধিকাংশ রুম থেকে সমুদ্র দেখা যায়। এছাড়া এখানে জুসবার, ফ্রি ওয়াইফাই (শিগগীর নাকি আসছে), ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, স্পোর্টস ও কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টের সুবিধা রয়েছে।
সী ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টসের প্রতি রুমের ভাড়া ১,৫০০-৩,০০০ টাকা। ফেইসবুকে এই রিসোর্টের রেটিং দেখলাম অসাধারন ৫.০০/৫.০০ (৫৫ টি রিভিউ)।
যোগাযোগঃ ০১৮৪০-৪৭৭৭০৭ (ঢাকা), ০১৮৪০-৪৭৭৯৫৬ (সেন্টমার্টিন)

০৪) লাবিবা বিলাস
সুপ্রশস্ত এই দ্বিতল রিসোর্টে মোট ৪৩ টি রুম, একটি রেস্ট্যুরেন্ট ও একটি ছোট্ট সেমিনার রুম রয়েছে। রিসোর্টটির অবস্থান নর্থ বীচে। শিপঘাট থেকে যেতে একটু বেশী সময় লাগে, হাঁটাপথে ১৫-২০ মিনিট। এর রুমভাড়া ১,৫০০-৪,০০০ টাকা।
এখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলার ব্যবস্থা রয়েছে। ফেইসবুকে এর রেটিং ৩.৭৫/৫.০০ (২০ টি রিভিউ)।
যোগাযোগঃ ০১৭৪৪-১৩৬১৪৫ (ঢাকা), ০১৮৩৪-২৬৭৯২২ (সেন্টমার্টিন)

০৫) প্রাসাদ প্যারাডাইজ
এই দ্বিতল হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। এখানে মোট ১৬ টি কক্ষ রয়েছে। হোটেলের সাথে রেস্ট্যুরেন্টও আছে। বীচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়। প্রাসাদ প্যারাডাইজের প্রতিটি রুমের ভাড়া ২,০০০-৪,০০০ টাকা।
ফেইসবুকে এর রেটিং বেশ ভালো ৪.৫০/৫.০০ (৩৭ টি রিভিউ)।
যোগাযোগঃ ০১৫৫৬-৩৪৭৭১১

০৬) সী ইন
সেন্টমার্টিন বাজারের মূল রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই এই হোটেলটির অবস্থান। এখানে মোট ২৬ টি কক্ষ রয়েছে। অবকাঠামোর দিক থেকে এটি দূর্দান্ত সুন্দর। এর নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট নেই, তবে আশেপাশে বেশকিছু রেস্ট্যুরেন্ট রয়েছে। এর প্রতিটি রুমের ভাড়া ২,০০০-৩,৫০০ টাকা।
এই হোটেলের সমস্যা হলো, এটি বাজারের পাশে অবস্থিত। এখান থেকে সমুদ্র দেখার কোন উপায় নেই। এবং নির্জনতা উপভোগের সুযোগও সীমিত।
যোগাযোগঃ ০১৭২২-১০৯৬৭০, ০১৭৩৫-৫৮১২৫১, ০১৭৭৫-০১১২০৮

০৭) সীমানা পেরিয়ে
এই রিসোর্টের অবস্থান ওয়েস্ট বীচে, ভ্যানে করে যেতে হবে। এতে ১৪ টি রুম ও একটি নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট আছে। বীচের পাশাপাশি বলে কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্র দেখা যায়। এর ভাড়া ১,৫০০-২,৫০০ টাকা।
ফেইসবুকে এর রেটিং ৪.৫০/৫.০০ (১৬ টি রেটিং)।
যোগাযোগঃ ০১৯১১-১২১২৯২, ০১৮১৯-০১৮০২৭

০৮) কোরাল ভিউ
এই রিসোর্টটি নৌবাহিনী পরিচালনা করে। সেন্টমার্টিনের ইস্ট বীচে এর অবস্থান। জেটি থেকে অনেক দূরে বলে ভ্যান নিয়ে যেতে হবে। আয়তন অনেক বড়ো এবং রুমগুলো থেকে মোটামুটি সমুদ্র দেখা যায়। দ্বিতল এই রিসোর্টটির সামনে একটি সবুজ মাঠ রয়েছে। একে হেলিপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে শুনেছি। রিসোর্টের নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্টও রয়েছে। এর রুমপ্রতি ভাড়া ২,৫০০ টাকা থেকে শুরু। ৬০০০ টাকার রুমও আছে।
এর রেটিং খুব ভালো ৪.৪০/৫.০০ (১২১ টি রিভিউ)
যোগাযোগঃ ০১৯৮০-০০৪৭৭৭, ০১৯৮০-০০৪৭৭৮

০৯) প্রিন্স হ্যাভেন
প্রাসাদ প্যারাডাইজের আরো কিছুটা উত্তরে নর্থ বীচের পাশে এই রিসোর্টটির অবস্থান। এখান থেকে সমুদ্রের বেশ ভালো ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্টে ২৪ টি কক্ষ আছে, নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্টও আছে। কক্ষগুলোর ভাড়া ২,০০০-৪,০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ ০১৮৩৩-৩৬০৩৩৩

১০) সী প্রবাল
নর্থ বীচের এই রিসোর্টটি সী ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত। এখানে মোট ১৬ টি রুম আছে। একটি রেস্ট্যুরেন্টও রয়েছে। এটি বীচের পাশে, তবে চারটি রুম ছাড়া অন্য রুমগুলো থেকে সমুদ্র দেখার উপায় নেই। এর প্রতিটি রুমের ভাড়া ১,৫০০-২,৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ ০১৮১৬-৪৬৭৪০৬, ০১৭৬১-২০০৬৮৯

বিঃদ্রঃ সেন্টমার্টিনে হোটেল/রিসোর্ট বুকিং দেয়ার সময় বীচের কাছ থেকে অবস্থান, জেটি থেকে দূরত্ব, রেস্ট্যুরেন্ট, সিকিউরিটি ব্যবস্থা ইত্যাদি দেখে নেয়া দরকার। আর রুমভাড়াও ভালোভাবে দরদাম করা প্রয়োজন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত রুমভাড়া হবে খুবই বেশী, অন্যান্য সময় বেশ কম।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার শিপের টিকেটের জন্য নিচের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন-
+8801816 58 57 57

সেন্টমারটিনের গলাকাটা দামের খাবার খেয়ে আমি খুব বিরক্ত ছিলাম। বাংলা খাবারের কোন টেস্ট নাই। হতাশায় এই চাচার হোটেলে গেলাম। চমৎকার খাবার। একদম পিওর সেন্ট মারটিন এর রান্না। ভাত, ডাল, আলু ভর্তা এবং মুরগি মাত্র ১০০ টাকা প্যাকেজ।

সিরাজগঞ্জ ভাত ঘর । জেটির ঠিক ডান পাশে বিচের উপর। ওনাকে জিজ্ঞেস করলে বলে দিবে কোথায় ভালো মাছ পাবেন , একদম অমায়িক লোক।

Sea Star Tents

সবাই বলেছিল এখন সিজন “সেন্ট মার্টিন” এ যাওয়ার আগে হোটেল কিংবা কটেজ বুক না করলে সমস্যায় পড়তে হবে।
৫বন্ধু মিলে হাল্কা রিস্ক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম হোটেল বুক ছাড়াই।
সেন্ট মার্টিনের ঘাটে নেমেই ডান পাশে হাটতে থাকলাম আর চোখে পড়ল বিচ ঘেষা বাশের বেড়ায় ঢেরা তাবুর সারি যা আগে কারো কাছ থেকে শুনিও নি কেও বলেও নি।
ঢুকে এক ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এই জায়গার বয়স ১৭দিন এবং তিনি এই ইনোভেটিব কাজটির মালিক। দেরি না করে বুক দিয়ে দিলাম এক রাতের জন্য।
100% সেফটি প্রোভাইড করেছেন লোকটি যা সত্যি অকল্পনীয়। বারবি কিউ সহ ক্যাম্প ফায়ার সব কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাদের বলার সাথে সাথেই।
১ রাতের জন্য বুকিং দিলেও পরের রাতটাও থাকেই আসলাম।
তাবু করে থাকার ইচ্ছা অনেক জায়গাতে থাকলেও সেন্ট মার্টিনে এসে করা হবে ভাবি নি।
সারা দিন+রাত দু’জন লোক ছিল সেফটির জন্য। বাথরুম, গোসল রুম সব কিছুর ব্যবস্তা আছে।
সমুদ্রের আওয়াজে ঘুমাতে আর ঘুম থেকে উঠতে চাইলে অথবা সমুদ্রের সব থেকে কাছে ঘুমাতে চাইলে সবাই ট্রাই করতে পারেন। ধন্যবাদ। 🙂

যাওয়ার রাস্তা: ঘাটে নেমে সমুদ্র ধরে ডান পাশে ৫মিনিট হাটলে পাওয়া যাবে “Sea Star Tents”

টেন্ট থাকার ভাড়া : ৪ জনের জন্য ১৫০০ টাকা ,৬ জনের জন্য ২৫০০ টাকা।

নোটঃ তথ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বানান ভুল থাকে নিজ যোগ্যতায় ঠিক করে নিবেন অথবা আমাকে দয়া করে জানাবেন। কারো কাছে নতুন কোন তথ্য থাকলে কমেন্টে জানালে অ্যাড করে দিতে বাধিত থাকবো। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সংগৃহীত: http://travelersofbangladeshi.blogspot.com/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *