Thursday, April 18বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

যুব মহিলা লীগের আরেক পাপিয়া- মনিকাও মাদক ও নারী ব্যবসার সাথে জড়িত

বার্তা ডেস্ক: আবারো আলোচোনায় আসছেন মহিলা যুবলীগের নেত্রী মনিকা বিরুদ্ধে। ওয়েস্টিন কাণ্ড নিয়ে নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়া যখন টক অব দ্য কান্ট্রি, তখন আশুলিয়ায় আরেক বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রীর নানা অপকর্ম নিয়ে আলোচোনায়। মনিকাকে বলা হচ্ছে ‘টপ অব আশুলিয়া’।

আলোচোনায় আসা নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়াকে সম্প্রতি পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে । পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পাঁচতারকা হোটেলে বিলাসবহুল স্যুটে অনৈতিক কাজ-কারবার পরিচালনার অভিযোগ। এ ছাড়া নরসিংদীতে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের খবরও প্রচারিত হয় হয় তাকে নিয়ে। এরপর তাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে সাভারের আশুলিয়া থানা যুব মহিলা লীগের নেত্রী মনিকা হাসানও বহিস্কৃত। তার নানা অপকর্ম নিয়ে আলোচনা এখানকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। পাপিয়ার মত মাদক ও নারী ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখল ছাড়াও মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে ব্ল্যাকমেইলের বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকেও বহিষ্কার করা হয় সংগঠন থেকে।

সুন্দরীভাব আর ভারী চলনভঙ্গি আর চোখ ধাঁধানো সাজ নিয়ে চলেন এই মনিকা। নিজেকে পরিচয় দেন কেন্দ্রীয় মহিলা যুবলীগের কার্য্যনির্বাহী সদস্য বলে। স্থানীয় নেতা ও যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের সঙ্গে তার নানা ঢঙের ছবি। এগুলো তাদের সঙ্গে তার সখ্যের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে মনিকা প্রভাব বিস্তার করেছেন এলাকায়। বেপরোয়া মনিকা হয়ে উঠেছেন আশুলিয়ার ‘পাপিয়া’, এমন গুঞ্জন এখন সর্বত্র। মাদক ও দেহব্যবসার অভিযোগে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত মনিকা এখনো তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।

আশুলিয়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আশুলিয়া থানা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী মনিকা হাসান ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্য মাদক এবং দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি মনিকা তার নিজ বাড়িতেই এসব অনৈতিক কাজ পরিচালনা করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘মনিকা হাসান ইয়াবার ডিলার। তার দুলাভাই আফজাল হোসেন এবং মামাতো ভাই জাহিদ ইয়াবা ও ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী। এ ছাড়া মনিকার বড় খালা আয়শা বেগম, খালু রনি ও খালাতো বোন নার্গিস ইয়াবা ব্যবসায়ী।

এ ছাড়া মনিকার মামা কাজল মিয়া, মামি নাজমুন নাহার, খালু শহীদ ভূইয়া, বোনজামাই জসিম উদ্দিন ও খালাতো ভাই রাজু মিয়ার নামেও আশুলিয়া থানায় রয়েছে আরও চারটি মাদক মামলা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, মনিকা হাসান মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী চিহ্নিত হওয়ার পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তার এলাকার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মঈনুল ইসলামের কাছে প্রত্যয়নপত্র চান। এতে রাজি না হওয়ায় ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকেন মনিকা। পরে ওই ইউপি সদস্য মনিকার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অপপ্রচার, হয়রানি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে মনিকার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন আশুলিয়া থানা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমুন নাহার কাজল ও সাধারণ সম্পাদক সাবিনা আক্তার লাভলী। তিন লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী মনিকার বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা চলমান।

আশুলিয়া থানা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমুন নাহার কাজল বলেন, ‘মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মনিকাকে বহিষ্কার করা হলে সে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠায়।

আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার আজাদ নামের এক ব্যক্তিকে ধর্ষণ মামলা করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছ্ মনিকার বিরুদ্ধে। আজাদ বলেন, ‘ওই যুবলীগ নেত্রী (মনিকা) এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার মাধ্যমে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইল এলাকার আব্দুল মজিদের মেয়ে মনিকা হাসানের এমন নানা অপকর্ম ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে ভীতসন্ত্রস্ত ও অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিকা হাসান। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি মহিলা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্য্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। তার ও পরিবারের বিরুদ্ধে আনা মাদকসহ অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা। একটি রাজনৈতিক মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

কিন্তু মহিলা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এমপি মনিকার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশুলিয়ার মনিকা হাসান নামে ওই নারী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নয়। যদি সে এই পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তার সঙ্গে মনিকার ছবি প্রসঙ্গে অপু উকিল বলেন, ‘যুব মহিলা লীগের অনেক নেত্রী কিংবা তাদের সাথে অনেক মেয়েই এসে আমার গলা ধরে ছবি তোলে। এতে আমি কি করব! তবে এখন থেকে সতর্ক হয়েছি। কাউকে না চিনলে এখন আর ছবি তুলব না।’

মনিকার সঙ্গে ছবি আছে ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক এমপি সাবরিনা আক্তার তুহিনেরও। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার সাথে আশুলিয়ার মনিকার কোনো সখ্য নেই। তবে মনিকার বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ থাকলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।’

মনিকার সঙ্গে ঢাকা জেলা মহিলা যুবলীগেরও কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান এই সংগঠনের আহ্বায়ক শিলারা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে মনিকা যখন আশুলিয়া থানা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তখন তাকে চিনতাম। পরে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এখন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যবস্থা নেবেন।’

মনিকার অপকর্ম নিয়ে এলাকায় অসন্তোষের কথা জানে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, ‘মনিকার বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো হবে। তারাই তদন্ত করে এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, আশুলিয়ার যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রীর মনিকার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবেনন তারা।
সূত্র: অনলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *