Saturday, May 4বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

পূবালী ব্যাংকের বুথে আবারো জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন

বার্তা প্রতিনিধি: এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির কারনে ঢাকা থেকে বিদেশী সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করার পর এবার আবারও এটিএম বুথে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এবার প্রতারক চক্রের থাবা পড়েছে রাজধানীর বাইরে। গত ১৬ এবং ১৭ নভেম্বর কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের তিনটি বুথ থেকে তুলে নিয়েছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। চলতি বছরের ১ জুন ইউক্রেনের ৭ নাগরিকের ভয়াবহ এটিএম জালিয়াতির ঘটনার কোন কূলকিনারা না করতে পারলেও মাত্র ৫ মাসের মাথায় আবারও এমন ঘটনার পূণরাবৃত্তির পর চোখ কপালে উঠেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। তিনটি বুথের ফুটেজে দুইজন ব্যক্তির চেহারা দেখা গেছে। ছবিগুলো এরই মধ্যে দেশের সবক’টি বিমান, স্থল এবং সমুদ্র বন্দরে দেয়া হয়েছে, যাতে করে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে।

বুথের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর কুমিল্লা সদরের মেইন ব্রাঞ্চের এটিএম বুথ থেকে ৬টা ৫ মিনিট থেকে শুরু হয় প্রতারক চক্রের অপারেশন। চলে ৬টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। কিছু সময় বিরতি দিয়ে পূণরায় ৬ টা ৩৫ মিনিট থেকে ৬ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দুই দফায় মোট তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয় প্রতারক চক্র। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র ১১ সেকেন্ডের মধ্যে অনেকটা চোখের পলকে এটিএম মেশিন খুলে ‘ডংগল ডিভাইস’ সংযোগ করে কালো-লাশ রংয়ের ফুল হাতা শার্ট এবং কালো ফ্রেমের চশমা পরিহিত ওই প্রতারক যুবক। মেইন সার্ভার থেকে মুহূর্তেই বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওই এটিএম বুথকে। ‘এন্টার’ বাটন টিপে শুরু করে টাকা উত্তোলন। প্রতিটি ট্রানজেকশনে ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে একবার ৩-৪ মিনিটের জন্য বাইরে আসে ওই প্রতারক। পরে আবারও শুরু হয় টাকা উত্তোলন। দুই দফায় মিলিয়ে মোট ২৫ মিনিট চলে তার অপারেশন।

প্রথম দপা টাকা উত্তলন শেষ করে আবার পরদিন ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম ডবলমুড়িং থানা এলাকার কলেজ রোডের পূবালী ব্যাংকের ব্রাঞ্চের এটিএম বুথে ৬টা ৩৯ থেকে ৬টা ৪৫ পর্যন্ত চলে দুই প্রতারকের টাকা উত্তোলন অভিযান। এবার আগের যুবকের সঙ্গে অংশ নেয় আকাশী রংয়ের শার্ট ও বাদামী রংয়ের প্যান্ট এবং চশমা পরিহিত মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি। ছয় মিনিটের অপারেশনে ওরা হাতিয়ে নেয় ৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এদিকে শেখ মুজিব রোডের ব্রাঞ্চে রাত ৮টা ৪৪ মিনিট থেকে ৯টা ৩ মিনিট পর্যন্ত ১৯ মিনিটের অভিযানে হাতিয়ে নেয়া হয় ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এখানেও অংশ নেয় দু’জন।

এদিকে বিশদ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এটিএম সেবা শুরু করে পূবালী ব্যাংক। কারিগরি সেবা নিশ্চিত করছে টেকনো মিডিয়া লি.। যুক্তরাষ্ট্রের এনসিআর ব্রান্ডের বাংলাদেশি এজেন্ট টেকনো মিডিয়া লি.। মেশিনগুলো ভারতে রি-এসেম্বলড করা। বর্তমানে দেশের প্রায় বিভিন্ন এলাকায় ১৭৩টি এটিএম বুথের মাধ্যমে এটিএম সেবা দিচ্ছে পূবালী ব্যাংক।

তবে পূবালী ব্যাংকের ‘হেড অব কার্ড ডিভিশন’ অসীম কুমার রায় বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। টাকাগুলো ব্যাংকের মূল একাউন্ট থেকেই খোয়া গেছে। এতে কোন গ্রাহক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে।

এদিকে এই বছরের ১লা জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচবাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ইউক্রেনের এক নাগরিককে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতেই পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের আরও পাঁচ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো ভ্যালেনটাইন (পাসপোর্ট নম্বর ইওয়াই ০৫১৫৬২), ওলেগ (পাসপোর্ট নম্বর ইএক্স ০৮৯৯৬৩), ডেনিস (পাসপোর্ট নম্বর এফএল ০১৯৮৩৪), নাজেরি (পাসপোর্ট নম্বর এফটি ৫০০৫০১), সারগি (পাসপোর্ট নম্বর এফএইচ ৪২৪৩৯৪) ও ভোলোবিহাইন (পাসপোর্ট এফটি ৩৭৯৯৮৩)। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ভিতালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৪৮) নামে এক ইউক্রেনিয়ান পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি জালিয়াতির মামলা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর পক্ষ থেকে একটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করা হয়।

তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ১ জুনের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের নাগরিক ভিতালিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরিফুর রহমান জানান, কেবল ভিতালিকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার করা এটিএম কার্ডের আদলে তৈরি কার্ডগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে জালিয়াতির কৌশলও জানার চেষ্টা চলছে।

ডিবির তদন্ত সূত্র জানায়, জুনের ঘটনায় প্রতারক চক্রটি ‘টুপকিন’ নামে একটি ম্যালওয়ার ব্যবহার করেছিল। টাকা উত্তোলনের সময় পুরো প্রক্রিয়াটি ইউক্রেন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে এই চক্রটিকে ধরতে ইউক্রেন থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। জালিয়াতির ঘটনার পর পুলিশ ওই সময়ে ইউক্রেন থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে। ওই সময় পুলিশ জানতে পারে ইউক্রেন থেকে আরেকটি প্রতারক দল ঢাকায় এসে জালিয়াতি করে টাকা তুলে নিয়ে যায়। সন্দেহভাজন ওই তিন নাগরিক হলো শেরি, রোমান ও দিমিত্রি। তাদের আসা-যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া, এই চক্রটির সঙ্গে বাংলাদেশি এক তরুণের সঙ্গে বিমানবন্দরে কথা বলার কিছু ফুটেজ পাওয়া গেছে। কিন্তু ওই ফুটেজ দেখেও তাকে শনাক্ত করা যায়নি। এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় ইউক্রেনের এই চক্রটির সঙ্গে বাংলাদেশি একটি চক্র জড়িত রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। সর্বশেষ কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের তিনটি বুথে টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ফুটেজে থাকা দুই ব্যক্তি এই চক্রেরই সদস্য বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা।

তবে সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এফবিআইয়ের একটি টিমের সঙ্গে বৈঠকও করেছে সিআইডি। তবে, জালিয়াত চক্রের সব সদস্যকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

সিআডির সংস্থার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, এরা আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। ফুটেজে থাকা ব্যক্তিদের দেখে বুঝা যাচ্ছে এরা সাউথ এশিয়ান। এদের ছবি সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, পূবালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো কোন অভিযোগ না পেলেও পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তবে এদের সাথে আরো কারা জড়িত আছে তাদের খুজে বের করতে কাজে করছে সিআইডি।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *