বার্তা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: এবার আইনজীবি তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম বারের আইনজীবি আনিসুল ইসলামের স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। স্বামী আনিসুল ইসিলাম চট্টগ্রাম জেলা বারের অন্তর্ভুক্ত আইনজীবী। যৌতুক না পেয়ে সেই আইনজীবী স্বামীই হত্যা করেন স্ত্রীকে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও উঠে আসে ঘটনার সত্যতা। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত আইনজীবীকে গ্রেফতার করে। এরপর সেই আইনজীবী, তার মা এবং বোনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়।
থানায় মামলা দায়ের পর পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভা এলাকার আনিসুল ইসলামের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর জলদী এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা খানম আঁখির (২১) বিয়ে হয়। তারা নগরের চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিয়ের পর আনিস যৌতুক দাবিসহ নানা বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর গায়ে হাতও তুলতেন আনিস। নির্যাতনে আনিসকে সহযোগিতা করতেন তার মা ফরিদা আক্তার (৫০) এবং বোন হামিদা বেগম (৩৪)।
বিয়ের পর বিভিন্ন সময় আখি আক্তারকে যৌতুকের জন্য মারধর করলেও সবশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আঁখিকে তার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদ মিলে অধিক মারধর করেন। এরপর তাকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, মারধরে আঁখির নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে গেছে। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অপারেশনের প্রয়োজন হলে আঁখিকে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্ত হাসপাতালে নিলেও অবস্থা অনেক খারাপ থাকায় এদিন সন্ধ্যার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর ভগ্নিপতি আবুল কালাম বলেন, ‘যৌতুকের দাবিতে আঁখিকে মারধর করতেন তার স্বামী। গত ১৩ ডিসেম্বর তাকে ব্যাপক মারধর করেন আনিসুল। মারধরের কারণে আঁখির নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে যায়। রোববার সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যু হয়। আমরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবি করছি।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১১ (ক) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় নিহতের স্বামী আনিসুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে আজ (সোমবার) আদালতে পাঠানো হবে। এছাড়া বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বারের অনেক আইনজীবীদের সাথে আলোচোনা করলে তারা জানান, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১১ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে- যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য সেই নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, তাহলে অভিযুক্তরা মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডে এবং মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া উভয় ক্ষেত্রে দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
তবে যৌতুকের জন্য এমন মেধাবী ছাত্রীকে অকালে জীবন দিতে হল তা নিহত আখি আক্তারের মা কোনভাবেই মানতে পারছেন না। তিনি যারা আখি আক্তারের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের মৃত্যুদন্ড চান।