Thursday, April 25বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

ডাকঘরে রাখা সঞ্চয়পত্রে লাভ দিতে পারছেনা গ্রাহক ক্ষুদ্ধ

এবার ডাকঘরের সঞ্চয়পত্রের ধস নেমেছে। অন্যান্য ডাকঘরের মত রাজধানীর মোহাম্মদপুর ডাকঘরে গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে বেশ কয়েকজন গ্রাহক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা না পেয়ে ফিরে যান। তাঁদের একজন ব্যবসায়ী মো. আনোয়ারুল আজীম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মাত্র আট হাজার টাকার জন্য এসেছিলাম। ডাকঘর আমার লাভের টাকা দিচ্ছেনা।

ডাকঘরে রাখা সঞ্চয়পত্রের সেই টাকা দিতে পারেনি, বলছে টাকা নেই। কাউন্টার থেকে বলেছে, পরের দিন ১০টার মধ্যে আসেন। কাল সকাল ৭টার সময় এলে দেখবেন বাইরে দীর্ঘ সারি। অনেকেই আপনার মতো মুনাফা নিতে আসবে। গ্রাহক আনোয়ারুল আজীমদের মতো অনেকেই ডাকঘরগুলো থেকে নিজেদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলতে পারছে না। এ ছাড়া ডাকঘরগুলো থেকে ব্যাপকভাবে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

ডাকঘরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বেশ কিছু ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম নিউ মার্কেট, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-২, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বনানী ও গুলশান শাখা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর পোস্ট অফিসের মাস্টার মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র কেনার হার এখন কম। গত মাসের সঙ্গে তুলনা করলে এখন প্রায় ৩ শতাংশের ১ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৬৬ শতাংশ কমে গেছে। ফলে মুনাফার টাকা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে অর্থ আইনের ২০২২-এর ৪৮ ধারা পালন করতে হবে। এতে কোনো ব্যক্তি যদি পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা বা পোস্টাল সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলতে চায়, তাহলে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা কাগজ দেখাতে হবে। আগে শুধু কর দেওয়ার কাগজ (টিআইএন) দেখালেই সঞ্চয়পত্র কেনা যেত। যারা আয়কর দাখিলের সনদ দেখাতে পারছে না, তারা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না।

সাধারন গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে টিআইএন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানালেন জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ব্যুরো ও পরিসংখ্যান) নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এখন মূল সমস্যা আয়কর দাখিলের কাগজ নিয়ে। যাঁরা সরকারি চাকরিজীবী, উচ্চবিত্ত, ব্যবসায়ী যাঁরা আছেন তাঁরা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য। এসব বাধ্যবাধকতায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে।

বাংলাদেশের ডাকঘর গুলোর মুনাফার টাকা পেতে ভোগান্তির কথা জানতে চাইলে নাজমা আক্তার বলেন, মুনাফা হয়তো আসতে দেরি হয়। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে ধস নমেছে। এ ছাড়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে এটা দেওয়া হয়। তাঁদের পর্যাপ্ত আইসিটি বিভাগে লোক নেই, এটা হচ্ছে তাঁদের সমস্যা। বিক্রি কমে যাওয়ায় হয়তো তারা সময়মতো মুনাফার টাকা পরিশোধ করতে পারছে না।

জানা গেছে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের (২০২০-২১-এর প্রথম ১১ মাস) চেয়ে ১৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা কম, যা শতকরা হিসাবে ৫১ শতাংশ। সেই হিসাবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। অর্থবছরে ১১ মাসে নিট বিক্রি ছিল ৩৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

তবে সঞ্চয় পত্রের প্রতি মানুষের আস্থা থাকলেও সেটা এখন অনেক কমে গেছে। তাই সাধার মানুষের দাবি সাধারন মানুষের কষ্টের টাকা যেন সহজ সর্তে কোথাও রাখা যায় তার দিকে যেন সরকার খেয়াল রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *