বার্তা প্রতিনিধি: মাত্র ২ লাখ টাকার বলি হল শাহাদাত হোসেন হাসিব। অপরাপধ জগতের সিড়ি বেড়ে উপরে উঠার ডাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় সর্বোচ্চ অপরাধমূলক কাজ খুন। রাজধানীর ঢাকার মিরপুরের মাজার রোড এলাকার বাসিন্দা হৃদয় হোসেন। এখনও বয়স ১৮ পার হয়নি। কৈশোর পেরুতে না পেরুতেই সে বিভোর হয় ওই এলাকার অপরাধ জগতের ডন হওয়ার স্বপ্নে। ভয়ংকর এই স্বপ্ন পূরণে খুনোখুনির পথে এগোয় সে। দুই লাখ টাকার চুক্তিতে খুন করে শাহআলী এলাকার কিশোর শাহাদাত হোসেন হাসিবকে।
সাপ্রতিক খুন হওয়া নিহত হাসিব ওই এলাকায় মল্লিক টাওয়ারে ‘টপটেন’ নামে কাপড় সেলাই প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। গত সোমবার রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ হৃদয়সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলো- সাদ্দাম হোসেন, হুমায়ুন কবির ও মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল। একজনের বয়স ১৬ বছরের নিচে যিনি এখনো কিশোর।
আসামীদের আইনের আওতায় আনা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হাসিবের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ‘টপটেনে’ দর্জি কারিগর হিসেবে কাজ করলেও করোনাভাইরাসের ধাক্কায় দোকানপাট বন্ধ হলে সে বাড়ি চলে যায়। ছয় মাস পর চলতি মাসের শুরুর দিকে সে আবার কাজে যোগ দেয়। তবে এবার তাকে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ডেকে আনা হয়েছিল। গ্রামের বাড়িতে জমি নিয়ে ঝামেলার জেরে প্রবাসী চাচাতো ভাই মো. বিপুলের পরিকল্পনায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
শাহাদাতের খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের তথ্য জানাতে শুক্রবার পুলিশ কর্মকর্তারা মিরপুর এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এ জেড এম তৈমুর রহমান বলেন, তারা সন্দেহ করছেন জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হাসিবকে খুন করা হয়। এ হত্যায় মোট পাঁচজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল তিনজন। হৃদয় ও সাদ্দাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রামের বাড়িতে হাসিবের বাবার সঙ্গে তার চাচার জমি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এর জের ধরে হাসিবকে মেরে ফেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্বপরিচিত মোফাজ্জলকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মোফাজ্জল আবার হুমায়ুন কবিরকে খুনি ভাড়া করার দায়িত্ব দেয়। হুমায়ুন পূর্বপরিচিত হৃদয়ের গ্রুপকে খুঁজে বের করে দুই লাখ টাকায় খুনের চুক্তি করে। হৃদয়ও চাইছিল বড় কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ডন হয়ে আলোচিত হবে।
মরিপুর শাহআলী থানার ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রবাসী মো. বিপুল একসময় টপটেনে চাকরি করত। সে বিদেশ যাওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানে তার চাচাতো ভাই হাসিব কাজ শুরু করে। গ্রেপ্তার মোফাজ্জলই ওই দু’জনকে কাজ শিখিয়েছিল। পূর্বপরিচয়ের জের ধরে এই মোফাজ্জলের সঙ্গেই যোগাযোগ করে বিপুল। মোফাজ্জল যোগাযোগ স্থাপন করে হুমায়ুনের মাধ্যমে হৃদয় গ্রুপের সঙ্গে।
শাহআলী থানার ওসি বলেন, এলাকায় এই গ্রুপটি এর আগে আলোচনায় ছিল না। তাদের বিরুদ্ধে আগের কোনো অপরাধে মামলাও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে শাহআলী থানার পুলিশ জানায়, খুনের পর ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রথমে হৃদয়কে শনাক্ত করা হয়। পরে প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্নেষণ করে তার অবস্থান মেলে চাঁদপুরে। কারণ, ঘটনার পরই সে ওই এলাকায় চলে যায়। এরপর সেখান থেকে ভোলা এবং সর্বশেষ ঝালকাঠিতে অবস্থান বদল করে। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী অন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় মিরপুর এলাকা থেকে। বাংলাদেশে বহুদিন ধরে কিশোর গ্যাংগ বা তাদের দলেন সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের বিভিন্ন সময় আইনের আওতায় এনে শাস্থির ব্যবস্থা করলেও কিশোর গ্যাংগের লেশ মাত্র কমেনি। বিষেশজ্ঞরা মনে করেন এখনই এর লেষ টেনে না ধরতে পারলে আরো বড় ধরনে দূর্ঘনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। সরকারকে এখনই আরো জোরালে ভাবে এগিয়ে আসার আহবান সুশিল সমাজের।
সূত্র: সমকাল