Thursday, April 25বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

বেসরকারি ল্যান্ডফোনের মালিক মসিহ চৌধুরী কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

বার্তা প্রতিনিধি: দুর্নিতির আরেক নাম মসিহ চৌধুরী। তিনি বেসরকারি ল্যান্ডফোন কোম্পানি জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেড সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ল্যান্ডফোন সুবিধা দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছিল। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে শুরুতেই হোঁচট খায়।

গ্রাহককে ল্যান্ডফোন সুবিধা দেওয়ার আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অবৈধ ভিওআইপি বাণিজ্যের অপরাধে জালালাবাদ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা করে বিআরটিসি।

এ ছাড়া জালালাবাদ টেলিকম প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিটিআরসি অন্তত পাঁচ কোটি টাকা পাবে। এ ধরনের বেশকিছু আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে জালালাবাদ টেলিকম। এসবের মূলহোতা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মসিহ মালিক চৌধুরী। আর তার সহযোগী ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকারিয়া আহমেদ।

২০০৪ সালের ২২ জুন জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেড নামে পিএসটিএন (বেসরকারি ল্যান্ডফোন সেবাদাতা) প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নেন মসিহ মালিক চৌধুরী। রাজধানীর পান্থপথে ইউটিসি ভবনে স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির অফিস। এ ছাড়া সিলেটেও আঞ্চলিক অফিস খোলা হয়। কিন্তু জালালাবাদ টেলিকম ‘বিজয়ফোন’ নামে গ্রাহকদের ল্যান্ডফোন সেবা দেওয়ার আড়ালে বিটিআরসির দেওয়া লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত অবৈধ ভিওআইপি বাণিজ্যেই নজর ছিল প্রতিষ্ঠানটির।

এ ছাড়া নির্ধারিত পদ্ধতি (রোল আউট অবলিগেশন্স) মেনে গ্রাহকসেবাও দিতে পারেনি। উল্টো নানা অবৈধ কার্যক্রমে জড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের সোনালী মার্কেটেও অফিস ভাড়া নেন তারা। সেখানেও শুরু করেন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা। একপর্যায়ে র‌্যাব-৯ হানা দেয় ওই কার্যালয়ে। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম। এ ছাড়া সিলেট শহরের জহির মার্কেটে আরেক কার্যালয় খুলে সেখানেও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা খুলে বসে চক্রটি। বিষয়টি নজরে এলে ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে বিটিআরসি।

বিটিআরসির সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী জিয়ান শাহ কবির বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ওই মামলা করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন চেয়ারম্যান মসিহ মালিক চৌধুরী, এমডি জাকারিয়া আহমেদ ও তার ভাই ইফতেখার আহমেদ, মসিহ মালিকের বোনজামাই আবদুল হাফিজ চৌধুরী, অপর এক আত্মীয় মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ৩৫ (১)/৪৮(১)/৫০(১)/৭৪/৭৬(১) ধারায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান করে জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেড। এ ছাড়া লাইসেন্সের শর্ত ভেঙে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তবে গত একযুগেও মামলাটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি বিটিআরসি। বিটিআরসির মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান এ বিষয়ে বলেন, ‘লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় জালালাবাদ টেলিকমের লাইসেন্স ও ফ্রিকোয়েন্সি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বকেয়া আদায়ে পারফরমেন্স ব্যাংক গ্যারান্টির (পিবিজি) প্রায় ৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছে বিটিআরসি।’ অভিযোগ রয়েছে, জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেডের অবৈধ ভিওআইপি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন চেয়ারম্যান মসিহ মালিক চৌধুরী। এর মাধ্যমে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেন। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ পরিচালক ছিলেন অন্ধকারে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পাঁচ আসামি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। জামিন নেওয়ার পর থেকে তাদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। জামিন নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন মসিহ মালিকÑ এমন ইঙ্গিত দিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।

এদিকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে জালিয়াতির মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেড। সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ২১ কোটি টাকা ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করতে টালবাহানা করতে থাকেন মসিহ মালিক চৌধুরী। ঋণের কিস্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জালালাবাদ টেলিকমের কাছে লাইসেন্স ফি, ভ্যাট, লেট ফাইন, রেভিনিউ শেয়ারিং ও ফ্রিকোয়েন্সি বাবদ ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ টাকা পাওনা বিটিআরসির।

নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে জালালাবাদ টেলিকমের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এত কিছুর পরও তাদের ফ্রিকোয়েন্সি ঝুলে ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত বছর তাদের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দও বাতিল করা হয়। জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘মসিহ মালিক চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে মূলত প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকে। এ কার্যক্রমের বিরোধিতা করে কোনো কোনো পরিচালক। তাদের উপেক্ষা করেই অনিয়ম চালু রাখেন মসিহ মালিক চৌধুরী ও জাকারিয়া আহমেদ।

নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সবকিছু ধামাচাপা দিতে থাকেন তারা।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মসিহ মালিক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি সাড়া দেননি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে খুদে বার্তা পাঠানোর পর এ প্রতিবেদককে ফোন দেন। তবে জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেডের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসব পুরনো ইস্যু। এটা শেষ হয়ে গেছে। এসব নিয়ে কথা বলব না।’ সরকারি পাওনা অর্থ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ ব্যাপারে বিটিআরসিকে জিজ্ঞেস করেন। তারাই ভালো বলতে পারবে।’

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *