Thursday, April 18বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারালেন ইমরান খান

বিশ্ব বার্তা : পাকিস্থানে আবারো প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের আবাস পাওয়া গেছে। গতকাল নানা নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নানা ঘটনা ঘটছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী ভবনেও ঘটেছে অনেক নাটকীয় ঘটনা।

নাটকীয়তার পর যখন সবার নজর পার্লামেন্টের দিকে তখন প্রধানমন্ত্রী ভবনে অনেকগুলো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। তার কিছু ক্যামেরার সামনে ঘটেছে, কিছু ঘটেছে রুদ্ধদ্বার কক্ষে। যখন ইফতারের কারণে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতুবী করা হয়, তখন হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী ভবন সরগরম হয়ে ওঠে। খবর বিবিসির।

এদিকে পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে তার আইন এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টাও অংশ নেন। সেই সঙ্গে পার্লামেন্টের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং কয়েকজন আমলাকেও ডেকে পাঠানো হয়।

ইমরান খানের ডাকা ঔই মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ইমরান খানের অভিযোগ অনুযায়ী, পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের যড়যন্ত্রের বিষয়টি কিছু কর্মকর্তার কাছে প্রকাশ করা হবে।

সেই বৈঠকের সময় পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার প্রধানমন্ত্রী ভবনে এসে পৌঁছান, তবে তাদের লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে বলা হয়।

ঠিক তখন হেলিকপ্টারে করে দুইজন অনাহুত অতিথি এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ভবনে। ভবন ঘিরে অস্বাভাবিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি আর সশস্ত্র ব্যক্তি সজ্জিত হয়ে আসা ওই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে পৌনে এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন।

অনাহুত এই দুই জন অতিথির উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। তিনি অবশ্য হেলিকপ্টারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু যারা আসবেন বলে তিনি প্রত্যাশা বা ধারণা করেছিলেন, ঘটেছিল একেবারেই তার উল্টো।

তবে বিবিসি উর্দু সার্ভিসকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইমরান খান আশা করছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে পার্লামেন্ট বসার পর সেখানে যে হইচই শুরু হয়েছে, এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে সদ্য যেসব রদবদল করেছেন, সেই সামরিক কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে করে তার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।

হেলিকপ্টারে যারা আসছিলেন তাতে কোন সমস্যা ছিলনা, কিন্তু সমস্যা হলো, সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে যে বৈপ্লবিক রদবদল তিনি করতে চেয়েছিলেন, সেটা কার্যকর করতে হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। কর্মকর্তাদের বরখাস্ত বা নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের সেই আইনি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। ফলে ইমরান খানের বরখাস্ত আদেশ বা নতুন নিয়োগের আদেশ কার্যকরও হয়নি।

এদিকে রবিবার সকালে যদিও সামরিক মুখপাত্র দাবি করেছেন যে, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। আইএসপিআর একটি বিবৃতিতে বলেছেন, বিবিসি যে প্রতিবেদন করেছে, তার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার মিল নেই।

গতকাল শনিবার মধ্যরাতে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট খোলা হয় এবং সেখানকার প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে পাঠানো হয়।

প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকানোর সময় জানানো হয়েছিল যে, হাইকোর্ট একটি জরুরি পিটিশনের শুনানি করবে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইমরান খান রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং সেনাপ্রধানকে পদচ্যুত করার সুপারিশ করেছেন। ফলে জনস্বার্থে আদালতের ওই আদেশ বাতিল করে দেয়া উচিত। তবে শেষপর্যন্ত যেহেতু ইমরান খানের ওই আদেশ কার্যকর হয়নি, ফলে ওই পিটিশনেরও আর শুনানি হয়নি।

জানা যায় এর কিছু পরে, মধ্যরাতে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। এরপর পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অনাস্থা ভোটে গদি হারান ইমরান খান। ভোটাভুটি শুরুর কিছুক্ষণ আগেই অবশ্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ভবন ছেড়ে চলে যান। তবে এবার পাকিস্থানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *