বার্তা প্রতিনিধি: বর্তমানে আরেকজন আলোচিত জুয়া বা ক্যাসিনো সম্রাট ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অবৈধ ক্যাসিনো-জুয়া, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
সে যেন পালাতে না পারেন সেজন্য সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রোববার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে।
তবে তার অবস্থান নিয়ে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। খালেদের পর সম্রাটের গ্রেফতারের গুঞ্জন ছিল। কিন্তু এখনও না হওয়ায় একেকজন একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, গ্রেফতার আতঙ্কে নেতাকর্মীবেষ্টিত হয়ে কাকরাইলে যুবলীগ কার্যালয়েই তিনি রাতযাপন করছেন।
আবার কেউ বলছেন নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। পাশাপাশি তার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তার কারণেই ঢাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়া, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জন্য অনুরোধ জানানো হয় প্রতিবেদনে।
এদিকে ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন- ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার মূলে আছেন সম্রাট। তার হাত ধরেই ক্যাসিনোর প্রসার ও বিস্তার।
তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই অবৈধ এ বাণিজ্যের আদি-অন্ত বের করা যাবে। বন্ধও করা সম্ভব অবৈধ এ ব্যবসা।
জানতে চাইলে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ক্যাসিনোসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব বদ্ধপরিকর। যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন।
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে বুধবার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর থেকেই সম্রাট গ্রেফতার হচ্ছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন সারা রাত সম্রাটকে তার অফিসে এক ধরনের পাহারা দিয়ে রাখেন তার কয়েকশ’ সমর্থক।
এর পরদিন থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও ওই অফিস ঘিরে সার্বক্ষণিক যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভিড় চোখে পড়ে।
সোমবার সম্রাটের সন্ধানে কাকরাইলে তার অফিসে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, তিনি অফিসে নেই। তবে সেখানে রান্নার ব্যবস্থা হচ্ছে। কার জন্য এ রান্না হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, তিনি অফিসেই আছেন। মারা গেলেও তিনি পালাবেন না বলে তার সমর্থকদের জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকতে পারেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চললেও গডফাদার হিসেবে পরিচিত সম্রাটকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না- এ প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্ট প্রায় সবার। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গডফাদার-গ্র্যান্ডফাদার বলতে কিছু নেই।
আমরা চিনি অপরাধীকে। অপরাধী যে বা যারাই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্রাটকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, অ্যাকশনটা শুরুর এক সপ্তাহও হল না। এক সপ্তাহের মধ্যে সব ব্যবস্থা হবে?
সবকিছু যাচাই-বাছাই করে হবে। যারা অ্যারেস্ট হয়েছেন তারা কি কম অপরাধী? কেউ পার পাবে না, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। সম্রাট গা ঢাকা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেটা জানি না।
পুলিশ অনেককে খুঁজছে। যারা গা ঢাকা দিয়েছে, তারা ধরা পড়বেই। অপরাধ করে তারা কোথায় যাবে? ইসমাইল হোসেন সম্রাট দেশে আছেন, না কি বিদেশে পালিয়ে গেছেন?
তাকে ধরতে কোনো উদ্যোগ রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ক্যাসিনো-জুয়া বন্ধে আমরা অন্যান্য অভিযান পরিচালনা করছি।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায়। তিনি প্রয়াত ফয়েজ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। সম্রাট যুবলীগে খুবই প্রভাবশালী এক নেতা। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
পরবর্তী কাউন্সিলে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। যুবলীগের দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জনসভাগুলোতে সব সময়ই বড় শোডাউন থাকত সম্রাটের লোকজনের।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বাধীন যুবলীগের এ ইউনিটকে ‘শ্রেষ্ঠ সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।
আলোচিত এ সম্রাট মাসে অন্তত ১০ দিন সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলেন। এটি তার নেশা। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন জুয়াড়িরা। সেখানেও সম্রাট ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত।
প্রথম সারির জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার বিশেষ ব্যবস্থাও আছে। সিঙ্গাপুরে গেলে সম্রাটের নিয়মিত সঙ্গী হন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ কমিশনার, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম। এদের মধ্যে সাঈদ কমিশনারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
সূত্র: যুগান্তর