অনুসন্ধানী বার্তা: বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে ফেসবুককেন্দ্রিক-কমার্স বা এফ-কমার্সের গ্রাহক সেবা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘দ্য জেড বয়’ নামে চ্যাট বট উদ্ভাবন করে পশ্চিমা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন জারস সলিউশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশি নাজমুস সাকেব নাঈম। ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য কেনায় ক্রেতাকে সহজ নির্দেশনা দিয়ে থাকে এই চ্যাট বট। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফোর্বস’ এবং ‘অন্ট্রাপ্রেনার’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে ‘দ্য জেড বয়’ (www.thezboy.com) নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সাময়িকীতে সাকেবের বিস্তারিত সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয় এই উদ্ভাবন নিয়ে।
বাংলাদেশের সন্তান খ্যাতিমান এ আইটি বিশেষজ্ঞ সাকেব সম্প্রতি জড়িয়ে পড়েছেন ডেবিট কার্ড জালিয়াতির এক ভয়ংকর ঘটনায়। অভিযোগ উঠেছে, পাপুয়া নিউগিনিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহেদের ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড হ্যাক করে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে বসে।
সাকেব ২০১৪ সালের ২১ জুলাই থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ দিনে মোট এক হাজার ৪৭২টি লেনদেন ও অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে এই জালিয়াতি করেন। বিশ্বের ৯টি দেশ থেকে অনলাইনে এই কেনাকাটা করেন তিনি। ঘটনার ছয় বছর পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। পাপুয়া নিউগিনি থেকে ফিরে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহেদ ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। তদন্তের প্রায় এক বছর পর হ্যাকিং ও জালিয়াতি-সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গত ২৫ আগস্ট সাকেব ও তার সহযোগী মইনুল ইসলাম মামুনকে ডিওএইচএস থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ। পরে আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে সাকেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাতারুজ্জামানের আদালতে হ্যাকিং ও জালিয়াতির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সাকেব।
জানা যায় সাকেবের জন্ম ১৯৮৫ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন, এন্ট্রি ফ্রড সুইট, কাউড অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং, ডিপ লার্নিং নেচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিংয়ে পড়াশোনা করেছেন সাকেব। সাকেবের তৈরি ‘পেখম’ অনলাইনে হোটেল বুকিংয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশের ৩৫০টির বেশি হোটেলের রুম ইনভেন্টরি বুকিং ডটকম ও এক্সপেডিয়ায় অটো আপডেট করার ব্যবস্থা করেন সাকেব। ইজিপেওয়ে (পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্ল্যাকবাস্টার ও সিলভার স্ট্ক্রিন সিনেপ্লেক্সের ডিজিটাল টিকিট ব্যবস্থার প্রবর্তকও তিনি। থাইল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট লেকচারার হিসেবে কাজ করেন সাকেব। এ ছাড়া তিনি কাজ করছেন সিভিল ব্যাংক অব নেপালের ডিপ লার্নিং ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিংয়ের কনসালট্যান্ট হিসেবে। সাকেব নন্দন গ্রুপের হেড অব আইটি, কডেরো লিমিটেডের সিইও, এসএসএলের ওয়্যারলেসের হেড অব ই-কমার্স, জারস সলিউশনের সিইও হিসেবে কাজ করছেন। তবে এই খ্যাতিমান সাকিবের জন্য অনেক গর্ভ হয় আমাদের দেশের একজন কৃতিমান মানুষ হিসেবে।
সংগ্রহে: কালের কন্ঠ