Friday, March 29বাংলারবার্তা২১-banglarbarta21
Shadow

একজন অফিস সহকারীর ৩০ বার বিদেশ ভ্রমনের অজান কাহিনী

অপরাধ বার্তা: এটি একটি দেশ যেদেশে অপরাধীদের দোরাত্তা শক্তিশালী। তবে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পাশাপাশি বেসরকারী আছেন আমাদের অজানা নয়। তেমনী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ভুক্ত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সাবেক অফিস সহকারী এবং মানব পাচারে অভিযুক্ত নূরজাহান আক্তার সাত বছরে ৩০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে এক বছরেই বিদেশ গেছেন নয়বার। কোনো কোনো দেশে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন তিনি। কেন, কী কারণে তিনি এসব দেশ ভ্রমণ করেছেন, সে বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। মানব পাচার মামলায় সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নূরজাহান আক্তার।

ক্ষমতাধর এই নূরজাহান আক্তার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করতেন। এর আগে তিনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ইমিগ্রেশন শাখার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ছিলেন। এ দপ্তরে চাকরির সুবাদে নূরজাহান তার স্বামী আব্দুস সাত্তারের নামে ‘এসএএম ইন্টারন্যাশনাল’ রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। তার পর এজেন্সির আড়ালে গড়ে তোলেন মানব পাচার চক্র।

কোটি টাকার মালিক নূরজাহান ও তার স্বামী আব্দুস সাত্তারের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ভাঙ্গুরা থানার খামার গ্রামে। রাজধানীর বেইলি রোডে ১৮০০ বর্গফুটের নিজেদের ফ্ল্যাটে তাদের বসবাস। অভিযোগ, সর্বসাকল্যে সরকারি দপ্তরের ২৮ হাজার টাকা বেতনের এই কর্মচারী ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও আশুলিয়ায় বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। চড়েন সোয়া কোটি টাকার প্রাডো গাড়িতে। এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও গত ২৮ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের পর তার মানব পাচারের বিষয়টি সামনে আসে।

ত কয়েকমাস আগে লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ডের পর নূরজাহান ও আব্দুস সাত্তার দম্পতির বিরুদ্ধে গত ৫ জুন মানব পাচার আইনে পল্টন থানায় মামলা করে সিআইডি। মামলায় আরও ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় স্বামীসহ নূরজাহান সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন তিনি। নূরজাহানের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

এদিকে জানা যায় নূরজাহান তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও বিএমইটি এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে প্রভাবশালী ছিলেন। কারণ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার আশীর্বাদ ছিল তার ওপর। পেশায় চাকরিজীবী হলেও পাসপোর্টে ‘গৃহবধূ’ উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নূরজাহান বিদেশ ভ্রমণ করেছেন ৩০ বার। এর মধ্যে ২০১৪ সালেই নয়বার বিদেশে গেছেন। ওই এক বছরে তিনি আটবার ভ্রমণ করেছেন মালয়েশিয়া এবং একবার গেছেন দুবাইয়ে। এ ছাড়া চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সৌদিতে যান তিনি। গত বছরে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন চারবার। এর মধ্যে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে যান ট্যুরিস্ট ভিসায়। দেশে ফেরেন ১২ ডিসেম্বর। একই বছরের ৪ জুলাই ট্যুরিস্ট ভিসায় যান মিসরে। এর আগের মাসে ৬ জুন ভ্রমণে যান মালয়েশিয়ায় এবং ৩ জানুয়ারি ‘ভিজিট ফর ফ্যামিলি’ ভিসায় যান সৌদি আরবে।

অফিস সহকারী নুরজাহান ২০১৮ সালেও চারবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবর ট্যুরিস্ট ভিসায় যান মালিতে, ৮ আগস্ট ও ২৭ এপ্রিল ট্যুরিস্ট ভিসায় কলকাতায় এবং ২৫ জানুয়ারি দুবাই ভ্রমণ করেন। ২০১৭ সালে তিনবার ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া ও একবার কাঠমান্ডু এবং হজ ও ওমরাহ উদ্দেশ্যে দু’বার সৌদি আরবে যান। ২০১৬ সালে বিদেশ যান দু’বার। এর মধ্যে ১৩ মে থাইল্যান্ডে গিয়ে পরে মালয়েশিয়া হয়ে দেশে ফেরেন। ওই বছর ওমরাহ করতে যান সৌদি আরবে। এর আগের বছরও চারবার বিদেশে গেছেন তিনি- তিনবার ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায়, ওমরাহ ভিসায় একবার সৌদি আরবে।

অনেক তথ্য ও খোঁজ খবরের ভিত্তিতে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিসানুল হক বলেন, নূরজাহান ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে করা মানব পাচার মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন সময় নূরজাহান একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। কেন, কী কারণে এতবার বিদেশে গেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন অফিস সহকারী এমন দোরাত্তা জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *